Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭: 19 পাকা ধান ঘরে তুলতে যখন প্রস্ততি নিচ্ছে কৃষক তখন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতিবিলে শতাধিক বিঘা জমির বোরো ধান ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। ব্লাস্ট রোগ দ্বারা গত বছর হালতিবিলে গম আক্রান্ত হবার পর এবার ধানের শীষ চিটা হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়ায় ধার-দেনা করে বোরো আবাদকারী কৃষকরা কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। চলতি বছর নাটোর জেলায় ৫৬হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হালতিবিলে ৮হাজার সাতশত হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের চাষ হয়েছে। ফলে চলতি বছর বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় এখানকার কয়েকশ’ কৃষক। সেই সাথে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে হালতিবিল ঘুরে দেখা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলার তেঘড়িয়া, ভূষণগাছা করেরগাঁও, কুঁচকরি, পাটুল, বাঁশিলা, সোনাপাতিল, মাধনাগর, খাজুরাসহ আশেপাশের অধিকাংশ গ্রামের মাঠে বোরো ধানের শীষে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই রোগের কারনে ধানের পুরো শীষ মরে চিটা হয়ে গেছে। দুর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে, ধান পেকে গেছে, কিন্তু হাত নিয়ে নাড়লে পুরো চিটা। কৃষকরা গতবছর ভালো ফলনের কারনে এবার খাটো-১০জাতের ধান রোপণ করেন। কিন্তু এই খাটো-১০জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের হানা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বাঁশিলা গ্রামের সালাম প্রামানিকের ৫ বিঘা, রফিক ইসলামের ৪ বিঘা, আলাল হোসেনের ৩ বিঘা, খলিলুর রহমানের ৫ বিঘা, জালাল হোসেনের ৩বিঘা, আব্দুল মান্নানের ৬বিঘা, জয়নাল আবেদীনের ২ বিঘা, আবুল কাশেম এর ২ বিঘা, এনতাজ আলীর ৩ বিঘা জমির খাটো-১০ জাতের ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ব্লাস্ট রোগের হাত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না তারা। ফলে দিন দিন বোরো ধানে বাড়ছে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ।
প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করা হলতিবিলের বাঁশিলা গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান জানান তার কষ্টের কথা। ৭ বিঘার মধ্যে খাটো-১০ জাতের ধান রোপণ করেন পাঁচ বিঘা জমিতে। এতে তার খরচ হয়েছে বিঘা পতি ১০-১২হাজার টাকা। কিন্তু শেষ সময়ে এসে দেখছেন ধানের গোড়া পচাঁর পাশাপাশি শীষ মরে সাদা হয়ে যাচ্ছে।
একই গ্রামের আরেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবুল কালাম জানান, রোপনকৃত ১৮ বিঘা জমির বোরো ধানের মধ্যে ৮ বিঘা জমির খাটো-১০ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগর সংক্রমণ হয়েছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না।
সোনাপাতিল গ্রামের আরেক কৃষক ফজের আলী বলেন,‘হালতিবিলে বছরে একটি মাত্র ফসল হিসেবে বোরো ধানের আবাদ হয়। কিন্তু সেই ধানও যদি রোগের আক্রমণে নষ্ট হয়, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।’
্এদিকে ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ব্লক সুপারভাইজার সোহেল পারভেজ বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগের সংক্রমনের জন্য কৃষকদের ধানের জাত নির্বাচন অনেকাংশে দায়ী। জমিতে চারা রোপনের সময় এটি বোঝা যায়না। তাছাড়া এই বছর আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত কারনেও এই রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত যেসব জমির ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। নতুন করে যাতে কোন জমির ধান আক্রান্ত না হয় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বোরো ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে নষ্ট হয়েছে মাত্র এক হেক্টর জমির ধান। বীজ নির্বাচনে কৃষকদের অজ্ঞতা ও আবহাওয়াজনিত কারনে বোরো ধানে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগ প্রতিরোধে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় ধানের মোট উৎপাদনে হালতিবিলে উৎপাদিত ধানের বিরাট অংশ থাকে। এ কারণে হালতি বিলে ধানের উৎপাদন কম হলে তা নিঃসন্দেহে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে হ্রাস করবে। তবে কৃষি বিভাগ সর্বদাই ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখবে।