খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭: অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে খাবার হলো ছদ্মবেশী যথার্থ ওষুধ। যদিও মারাত্মক অসুস্থতায় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে; কিন্তু ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যায় খাবার হলো প্রাকৃতিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। এতে খরচও খুব কম হয়, আবার এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুব কম হয়। একই সাথে আপনি পাবেন পর্যাপ্ত পুষ্টি। লিখেছেন ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল
মাংসপেশির গঠন
মাংসপেশির গঠনের জন্য আপনি সঠিক অনুপাতের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাবেন- ৬ ভাগ কার্বোহাইড্রেটের সাথে ১ ভাগ প্রোটিন। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু প্রোটিন গ্রহণকারীদের চেয়ে যারা কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন উপরের অনুপাতে গ্রহণ করেন তাদের মাংসপেশির বৃদ্ধি ৫০ শতাংশ বেশি ঘটে। কার্বোহাইড্রেট খাবার ফলে অতিরিক্ত ইনস্যুলিন নিঃসরণ হয় যা অত্যাবশ্যক অ্যামাইনো এসিডের ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে এবং এটা মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সাধারণ সর্দিকাশি
গবেষণায় দেখা গেছে, মুরগির স্যুপ প্রদাহ কমানোর মাধ্যমে সাধারণ সর্দিকাশিকে প্রতিহত করতে পারে। এ ছাড়া পিপারমিন্ট চা, যার মধ্যে রয়েছে মেনথল, সেটা নাক বন্ধ হওয়াকে পরিষ্কার করতে পারে। ভিটামিন-সি নিয়ে যদিও কিছুটা মতভেদ রয়েছে, তবু অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে সাধারণ সর্দিকাশিতে ভিটামিন-সি বেশ ভালো কাজ করে। কমলার রস, মোসাম্বি, গরম লেবুচা প্রভৃতি থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ভিটামিন-সি পেতে পারেন।
অবসন্নতা
প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে সেরিয়াল, স্পিনিক, শিম, মুরগির গোশত এবং রেডমিট। শরীরে আয়রনের অভাবে আপনি ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়তে পারেন, আপনি ফলমূল ও সবজি গ্রহণের মাত্রা বাড়াবেন ; ফলমূল ও সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন-সি উদ্ভিদজাত খাবারের আয়রন ব্যবহারে আপনার শরীরকে সাহায্য করবে। অবসন্নতার মাধ্যমে আরো বোঝা যায় যে, আপনার শরীর কিছুটা পানি শূন্য। তাই আপনি দুপুরে কয়েক গ্লাস পানি পান করবেন, এতে উপকার হবে।
প্রাক মাসিক সিনড্রোম
আপনি কি খুব কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেন? এ কারণে আপনার প্রাক মাসিক সিনড্রোমের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মহিলা দৈনিক তাদের খাবারের সাথে ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেছেন তাদের সিটি মাসিক চক্র ব্যথামুক্ত হয়েছে, এদের তলপেট কামড়ায়নি, পায়ে পানি জমেনি। তাই নিয়মিত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে প্রাক মাসিক সিনড্রোম থেকে দূরে থাকুন।
প্রস্রাবের সংক্রমণ
যদি আপনার প্রস্রাবে খুব খারাপ সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে আপনি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করবেন। কিন্তু আবার যাতে সংক্রমণ না হয় সেজন্য আপনি কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রস্রাবের সংক্রমণ প্রতিরোধের ভালো উপায় হলো কালো ও নীলজাম খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব জাম প্রস্রাবের রাস্তার টিস্যুতে লেগে থাকা ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিহত করে।
ব্যথা
টক স্বাদের লাল চেরি আপনাকে ব্যথামুক্ত রাখতে পারে। প্রায় ২০টা চেরিফলের রয়েছে ওই পরিমাণ এসপিরিন কিংবা আইবুপ্রোফেনের মতো প্রদাহ বিরোধী ক্ষমতা। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যদি আপনি টাটকা লালচেরি না পান তাহলে টিনজাত লালচেরি গ্রহণ করতে পারেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য
আপনার তন্ত্রকে উজ্জীবিত রাখার জন্য অদ্রবণীয় আঁশ যেমন ভুসিযুক্ত সেরিয়াল, সম্পূর্ণ খাদ্যশস্যের রুটি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে তিসির বিচি খুব কার্যকর। বিভিন্ন ধরনের শিম ও কলাতেও প্রচুর আঁশ রয়েছে, সেগুলো খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করবেনÑ দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস এবং খাবারের পরে কয়েক টুকরো আনারস খাবেন, এতে রয়েছে ব্রমেলেইন নামক এনজাইম যা দৈনন্দিন কোষ্ঠ পরিষ্কারে সহায়তা করে।
প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি
পেয়ারা খাওয়ার অভ্যেস করুন। কিংবা তরমুজ খান। এসব ফলে রয়েছে ফ্রুকটোজ যা প্রোস্টেট গ্রন্থির নিরীহ বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে। কিভাবে প্রতিহত করে? ফ্রুকটোজ আপনার শরীরের ফসফেটের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে, আর প্রচুর পরিমাণ ফসফেট আপনার ১. ২৫ (ওএইচ) ২ডি নামক রাসায়নিক উপাদানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। এই রাসায়নিক উপাদানের সাথে প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং আপনি যদি নিয়মিত পেয়ারা কিংবা তরমুজ খান তাহলে এসব ফলে বিদ্যমান ফ্রুকটোজ আপনার ফসফেট মাত্রাকে কমাবে, একই সাথে কমবে আপনার প্রোস্টেটের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এবং সেই সাথে কমে যাবে আপনার প্রোস্টেটের বৃদ্ধি।
যেকোনো আঁশই ভালো আঁশ, কিন্তু দ্রবণীয় আঁশ (যা পাওয়া যায় যব ও শিমে) আপনার প্রোস্টেটের জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পুরুষ প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ খান তাদের প্রোস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পিএসএ-এর মাত্রা কম যাবে। দ্রবণীয় আঁশ ক্ষতিকর স্টেরয়েড পরিষ্কার করার মাধ্যমে পিএসএ-কে কমাতে সাহায্য করে। এই পিএসএ প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি এবং প্রোস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং আজ থেকেই দ্রবণীয় আঁশ খাওয়া শুরু করুন।
মাংসপেশির ক্ষতি
চিনা বাদাম আপনার মাংসপেশির জন্য ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, চিনাবাদামে বিদ্যমান অতিরিক্ত ভিটামিন-ই আপনার পেশির ক্ষতি সারাতে সাহায্য করে।
হার্ট অ্যাটাক
দৈনিক একটি করে জাম খান। কালো বা নীলজামে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি। দৈনিক একটি করে পেয়ারা কিংবা কয়েকটা আমলকী খেতে পারেন। এগুলোতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, রক্তে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-সি আপনার রক্তনালীগুলোর কাজের উন্নয়ন ঘটিয়ে হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ছত্রাক সংক্রমণ
দৈনিক এক বাটি ইয়োগার্ট বা দই খেলে সেটা আপনার ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। দইয়ে রয়েছে ল্যাকটো ব্যাসিলাস অ্যাসিডোফাইলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া যা ছত্রাকের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ভাঙাহাড়
আপনার সালাদের স্বাদ বাড়ানোর জন্য কিছু তেল এবং ভিনেগার মেশান। আপনি সয়াবিন অথবা সর্ষের তেল ব্যবহার করুন। এ দুটোতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হাড়ের কোষের জন্য সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে, যার ফলে নতুন হাড় তৈরি হয়। অন্যান্য যেসব খাবারে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে সেসব খাবার হলো চর্বিযুক্ত মাছ যেমনÑ টুনা, সাডিন ও ম্যাকরাল ও আখরোট।
দাঁতের সমস্যা
ভিটামিন-কে গ্রহণ করুন। এটা আপনার রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যার কারণে রুটক্যানেলের পর আপনার মাঢ়ির গর্ত ভরে আসবে। সবুজ শাকসবজিতে ভিটামিন-কে রয়েছে, কিন্তু যেহেতু আপনি চিবিয়ে খেতে পারবেন না সে কারণে এ সময়ে আপনি শাকসবজির রস পান করবেন।
সয়াবিন আপনার অপারেশন পরবর্তী ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গবেষকেরা দেখেছেন যে, অপারেশনের পরে সয়াপ্রোটিন খেলে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যথা কমে যায়।
অনিদ্রা
খোলসওয়ালা চিনা বাদাম অথবা পেস্তা খান। এর চর্বি আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে। ইংল্যান্ডের গবেষকেরা দেখেছেন যে, যেসব লোকের খাবারে সামান্য চর্বি দেয়া হয়েছে তারা ওইসব লোকের চেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছেন যেসব লোকের খাবারে লবণ বা চিনি দেয়া হয়েছিল।
ফুসফুসের ক্যান্সার
শরবতি লেবু বা মোসম্বি লেবু খান। জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখ গেছে, যেসব লোক ঘনঘন টকজাতীয় ফল খেয়েছেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেক কমে গেছে। শরবতি বা মোসম্বি লেবু, বিশেষ করে সাদা ধরনের লেবুতে নারিংগিন নামক জৈব রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা ক্যান্সার উৎপন্নকারী এনজাইমের মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে।