খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭: শ্রমিক অধিকারের টেকসই পরিবর্তন আনার জন্য বিশ্ববাজারে রফতানি হওয়া বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের মূল্যস্তরে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা।
তারা বলেছেন, শুধু মালিকের একার উদ্যোগে শ্রম অধিকার কখনোই টেকসই হবে না। এই শ্রমের সুফল ভোগকারী বিদেশি বায়ার এবং রিটেইলারদেরও পোশাকের দামের সঙ্গে আপস করতে হবে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৪ বছর পূর্তিতে রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সামাজিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) এর উদ্যোগে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে অনুকরণীয়’ শীর্ষক এ সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম। সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
সংলাপে রেহমান সোবহান বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা জাতি হিসাবে আমাদের লজ্জার কারণ। তাই খতিয়ে দেখা দরকার- এই দুর্ঘটনার পর পোশাকখাতে কী পরিবর্তন এনেছে, শ্রমিকদের ভাগ্যের কতটা উন্নতি ঘটেছে। সেটি না হলে আমরা এর কলংক মোচন করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘কোনো মালিকের একার পক্ষে টেকসই শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা অসম্ভব। কারণ যখন ২৫ ডলারে বিক্রি করা একটি পোশাক ৫ ডলারে কিনে নেয়া হচ্ছে। এই ২০ ডলার কোথায় যাচ্ছে? যেখানে মাঝখানের এই ২০ ডলারে শ্রমিক-মালিক কারও সংশ্লেষ থাকছে না, সেখানে এতে কম পয়সায় শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন।’
রেহমান সোবহান বলেন, ‘শংকার কারণ হচ্ছে এই পোশাক খাতের ভবিষ্যত নির্ধারণে আমাদের রাজনীতিবিদ ও সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনা কম। যারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা এ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না।’
সংলাপে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, ‘পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি ইইউর পলিসিগত সিদ্ধান্তের আওতায় পড়ে না। এটি মালিক এবং ক্রেতার দরকষাকষির বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, শ্রম অধিকার রক্ষা ছাড়া ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সামনেই ইইউ কমিশনের রিভিউ মিটিং রয়েছে। সেখানে সন্তোষজনক অবস্থান তুলে ধরতে ব্যর্থ হলে সাময়িক সময়ের জন্য ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে।
একই সুরে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইত পিয়েরে লারামি বলেন, পোশাকের দাম বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বায়ারদের সঙ্গে দরকষাকষি করা যেতেই পারে। কিন্তু সেটি চাওয়ার আগে কারখানাটি কতটা কমপ্লায়েন্ট এবং সেখানে কতটা শ্রম অধিকার রক্ষা হচ্ছে, ট্রেড ইউনিয়ন আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।
তবে আইএলও প্রতিনিধি মাহেন্দ্র নাইডু বলেন, বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে, এটি এখনও চলছে। বায়ারদের উচিত শ্রমিকের স্বার্থে তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পোশাকের দাম পুনর্বিবেচনা করা।
মূল প্রবন্ধে পাঁচটি সুপারিশ রেখে বলা হয়, কারখানার মধ্যবর্তী ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। এছাড়া শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, মালিক এবং শ্রমিকের সম্পর্কোন্নয়ন, ইপিজেড অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন দেয়া এবং বায়ার ও রিটেইলারদের পোশাকের দাম বাড়ানো।