খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ৬ মে, ২০১৭: কক্সবাজারে পৃথিবীর বৃহত্তম মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণে সেনাবাহিনী দুঃসাধ্য সাধন করেছে বলে মনে করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তারা অনতিক্রম্য চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে।’
সড়কটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার সকালে কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যখন এখানে প্রথম এলাম, সবাই বললো মেরিন ড্রাইভ কি হবে? মন্ত্রী প্রতিশ্রুতির রঙিন বেলুন উড়াচ্ছেন, এটা কি চুপসে যাবে? এটা চুপসে যায়নি। আজ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের কমিটমেন্টের বহিঃপ্রকাশ দেখে আমরা সবাই আনন্দিত।’
পযটক আকর্ষণের জন্য নির্মিত এই সড়কের একপাশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। ১৯৮৯ সালে সড়কটির নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এর কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে কাজ থেমে যায়। এরপর ২০০৮ সালে আবার কাজ শুরু হয়।
এই সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। নির্মিত সড়ক সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়া, লোনা পানিতে নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষতি হওয়া, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের আঘাত ও ভূমিধসসহ নানা সমস্যা মোকাবেলা করে কাজ করেছে সেনাবাহিনী। এমনকি সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে ছয় সেনা সদস্যের মৃত্যুও হয়েছে।
এসব বিষয়ের উল্লেখ করে সড়কমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি যখন আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন এরপর আমি এখানে বারবার এসেছি, এখানে দাঁড়িয়ে অনেকবার বক্তব্য দিয়েছি। পাশে রাত্রি যাপন করেছি। সেনা সদস্যদের সঙ্গে খাবার খেয়েছি। আমি তাদের কষ্ট দেখেছি, তাদের পরিশ্রম দেখেছি। এত পরিশ্রম, এত কষ্ট তারা সয়েছে, এমনকি তাদের প্রাণহানি পর্যন্ত হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৯৮৯ সাল থেকে এটা ঝুলে ছিল। তখন কিছুই করা হয়নি, কেবল ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলেন ৯৬ সালে। তারপর কাজ শুরু হলো। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে কোনো কাজ হয়নি। এরপর ২০০৮ এ বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন ক্ষমতায় আসে, তখন সত্যিকার অর্থে কাজ শুরু হয়। এখানে মাটির কাজটা ছিল সবচেয়ে দুরূহ, সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি নিজের চোখে দেখেছি সেনাবাহিনীর সদস্যরা একদিকে বিক্ষুব্ধ সাগরের উত্তেজনা প্রশমিত করছিল অন্যদিকে মাটির কাজ করছেন। এই অসাধ্য সাধন চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।’
এই সড়কটিকে আরও চওড়া করার ঘোষণাও দেন সড়কমন্ত্রী। বলেন, ‘এই মেরিনড্রাইভের এখানেই শেষ হয়। এটা এখন ১৮ ফুট, আমরা আগামী বছর থেকে ৩০ ফুট মেরিন ড্রাইভের নির্মাণের কাজ শুরু করবো। পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টাকা দিতে কার্পণ্য করেন না।’
পুরো কাজ শেষে সড়কটি আরও নান্দনিক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হবে বলে জানান সড়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের একটা আকর্ষণীয় জায়গা, পয়েন্ট ইনানী। অথচ এখানে আসা আগে অনেক কষ্টকর ছিল। এখন অবাধে চলে আসবেন তারা।’