Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29kখােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার , ১১ মে, ২০১৭: দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে মন্দার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচক পড়েছে মন্দার কবলে। কিছু সূচক ভালো অবস্থানে থাকলেও এর খুব বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না অর্থনীতির গতির মধ্যে। রপ্তানি আয়ে ঘাটতি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস, দেশের মোট ঋণ প্রবাহ ও বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধির হার কম, রাজস্ব আয়ে ঘাটতি, বিনিয়োগের মন্দায় অর্থনীতির লক্ষ্যগুলো অর্জন করা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
আমদানি ব্যয় বাড়লেও শিল্পায়নের গতি বাড়ছে না। অনেকে সন্দেহ করছেন আমদানির নামে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়লেও বিনিয়োগ না হওয়ায় তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সরকারি বেসরকারি সব সেবার মূল্য। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু ছাড়া সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের গতি মন্থর। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির সূচকগুলো সার্বিকভাবে ভালো অবস্থানে নেই। একদিকে রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে গেছে, অন্যদিকে আমদানি ব্যয় ও ঋণ পরিশোধ বেড়েছে। এর মানে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি বাড়িয়ে দিয়েছে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থনীতির সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘর অতিক্রম করা কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এনবিআর। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা।
পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের এপিলের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশে। গত মার্চে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর গত বছরের এপ্রিলে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা মার্চে ছিল ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিকে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, দশ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ১ হাজার ২৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলার।
গত অর্থবছরও রেমিট্যান্স কমেছিল ৩৯ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এভাবে রেমিট্যান্স কমলেও জনশক্তি রপ্তানি বাড়ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় শ্রমিক বেশি গেছেন ২ লাখ ২৩ হাজার জন বা প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসায় বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের লিডার ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনীতির সূচকগুলোয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি, রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময়ে চাপ বাড়ছে। এডিপির বাস্তবায়নে আগের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না সরকার। নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি কতটা অর্জন হবে তা দেখার বিষয়।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে দুই হাজার ৮৭২ কোটি ১৭ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে হয়েছে ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মোট ৫১০টি প্রতিষ্ঠান ৩৭ হাজার ২১৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করিয়েছে, যা গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় ৩১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কম। ওই সময় দেশে ৪৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নিবন্ধনের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।
আলোচ্য তিন মাসে স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৬৯টি। এসব প্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব করে। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের চেয়ে যা ২৯ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে ৪৪৪টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৩ হাজার ৪৪ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব করে। বিনিয়োগ প্রস্তাব ও নিবন্ধন বাড়লেও বাস্তবে বিনিয়োগ হচ্ছে না। গ্যাস সংকটের কারণে চলমান শিল্পগুলোর চালু করতে পারছেন উদ্যোক্তারা।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৫২ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আগের অর্থবছরে একই সময়ে বাস্তবায়নের এ হার ছিল ৫০ দশমিক ১৭ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে ৬২ হাজার ৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ব্যয় হয় ৪৭ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। পুরো অর্থবছরে এডিপিতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে মোট ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ, ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ২২৫ কোটি ডলার বা ৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের পুরো সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর অবস্থা ছিল ৩৩৫ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত।
বিনিয়োগে মন্দার কারণে বেসরকারি ঋণপ্রবাহে মন্দা চলছে। গত অর্থবছরের জুলাই মার্চে বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়েছিল ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আমাদের সময়