খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭: ২০০৯ ও ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশ আবার আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফিরে এসেছে দেখে ভালো লাগছে। কারণ বিশ্বকাপের পরে এটিই ৫০ ওভারের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রতিযোগিতাটির গুরুত্ব অনেক।
১৯৯৮ সালে প্রতিযোগিতার প্রথম আসরটি বাংলাদেশে বসেছিল, এটি গর্ব করার মতো। তখন অবশ্য এটিকে আইসিসি নক আউট ট্রফি বলা হতো। প্রতিযোগিতার মূলপর্বে না খেললেও এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হয়।
একটিও টেস্ট ম্যাচ না খেলে ২০০০ সালে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় আসরে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হারলেও সেবারই প্রথম বিশ্বসেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে হোটেল শেয়ার করা, ক্রিকেটীয় বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। সত্যি বলতে কি, সেই কয়েকদিনের অভিজ্ঞতাই আমাদের চোখ খুলে দেয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নেও তা বিশাল অবদান রাখে।
২০০২ ও ২০০৪ সালের আসরগুলো থেকে খালি হাতে ফিরলেও ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভালো করার টোটকাটা সেই আসরেই শিখেছিলাম আমরা। এর ফলে ২০০৬ সালে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে সক্ষম হই আমরা। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারলেও সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছিলাম আমরা। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারলেও তবে সেই দুটি ম্যাচেই আমাদের শিখিয়ে দেয় বড় দলগুলোকে হারাতে কোন জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে হবে আমাদের। ২০০৬ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই শিক্ষাই ২০০৭ সালে বিশ্বকাপে আমাদের পারফরম্যান্সের কারণ। সেবার ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে বাংলাদেশ।
তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরের দুটি আসরের মূলপর্বে খেলতে না পারাটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে গর্বের বিষয় এ বছর সপ্তম স্থানে থেকে প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গত দুই বছরে দারুণ খেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোকে সিরিজ হারায় বাংলাদেশ। কেবল তাই নয়, এই সময় টানা পাঁচটি সিরিজ জিতেছে দলটি। এর ফলেই বিদেশের মাটিতেও ভালো করার আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে দলটির মধ্যে।
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল ও মাশরাফির মতো অভিজ্ঞ ও মানসম্পন্ন ক্রিকেটার রয়েছে বাংলাদেশ দলে। এই দলটিই এক যুগের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর সব জায়গায় খেলেছে। তারা জানে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে কীভাবে ভালো করতে হয়। আবার সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমানদের মতো তরুণরা রয়েছে। যাদের ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায়।
জুনের শুরুতে ইংল্যান্ডে ভালো খেলাটা অনেকখানি পিচের ওপর নির্ভর করবে। আবহাওয়া যদি কিছুটা শুষ্ক থাকে তাহলে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের স্পিনাররা ভালো করবে। আমাদের পেস অ্যাটাকটাও অনেক ভালো। মাশরাফি, তাসকিন, রুবেল ও মুস্তাফিজরা দুর্দান্ত ও পরীক্ষিত। যে কোনো দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানোর মতো যোগ্যতা রয়েছে তাদের।
তবে সুইংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেমন খেলে সেটা দেখার বিষয়। ওপরের সারির ব্যাটসম্যানরা যদি নতুন বলটা ভালোভাবে খেলতে পারে, তাহলে সেটা দলের জন্য ভালো হবে। আর না হলে এই কন্ডিশনে মিডল ব্যাটসম্যানদের পক্ষে পেসারদের সামলানোটা কঠিনই হবে।
বাংলাদেশ এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলছে। এই সিরিজটা ইংলিশ কন্ডিশনটা বুঝে উঠতে দারুণ সাহায্য করবে। দলটিতে দারুণ সব ব্যাটসম্যান ও বোলার আছে। তাই বা্ংলাদেশের ভালো খেলার বিষয়ে দারুণ আশাবাদী আমি।