খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭: তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বিদ্যুৎ সংকটে কলকারখানার চাকাও ঘুরছে না অধিকাংশ জেলায়। এতে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার এ ভয়াবহ খেলায় শিল্পকারখানার হাজার হাজার কোটি টাকার মেশিনপত্র নষ্ট হচ্ছে। ঘন ঘন লাইন ট্রিপ করছে।
জ্বলে যাচ্ছে ট্রান্সফরমার, বিতরণ লাইন। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় সোমবারও সারা দেশে লোডশেডিং অব্যাহত ছিল। ঢাকায় কিছুটা কমলেও ঢাকার বাইরে সব জেলায় তীব্র লোডশেডিং করেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। বেসরকারি সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিবিয়ানা ২-সহ বন্ধ থাকা সরকারি ৮টি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র সোমবারও চালু করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৩৪১ মেগাওয়াটের বিবিয়ানা-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২-১ দিনের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বাকি কেন্দ্রগুলো কবে নাগাদ চালু হবে তা বলতে পারছে না কেউ। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি হিসাবে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এ চাহিদা ১০ হাজার ৫০০ থেকে ১১ হাজার মেগাওয়াট। সোমবার বিকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। ফলে সরকারি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৭০০ মেগাওয়াট। তবে বেসরকারি হিসাবে এ ঘাটতি ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি।
তবে রোববারের চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিত্র কিছুটা ভালো। ফলে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রোববার বিকালে এ উৎপাদন ছিল ৭ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। তবে সোমবার আশার কথা শুনিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আগামী ৪ দিনের মধ্যে উন্নতি হবে। টাওয়ার ভেঙে যাওয়া, ১০টি পাওয়ার প্ল্যান্ট রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় ও গ্যাস স্বল্পতার জন্য চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। ৪ দিনের ভেতর রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে শিল্পকারখানাগুলোয় দিন-রাত উৎপাদন চলছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এ অবস্থা চলতে থাকলে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন সম্ভব নয়। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিদেশি অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে। ঈদে দেশীয় বাজারে পোশাক উৎপাদনেও ধস নামবে। এ অবস্থায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন গুনছেন শিল্প মালিকরা। অপরদিকে কয়েকদিন পর শুরু হওয়া রোজার মধ্যে লোডশেডিং থাকলে রোজাদারদের ভোগান্তি ও করুণ অবস্থা নিয়েও আতঙ্ক বিরাজ করছে সবার মধ্যে। ঢাকা ওয়াসা বলেছে, এভাবে লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে নগরীতে পানি সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা আছে। এমনিতে নগরীতে পানির সংকট আছে তার ওপর বিদ্যুতের কারণে যদি পানি উত্তোলনে সমস্যা হয় তাহলে ঘাটতি বেড়ে যাবে অনেক বেশি।
বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থায় সোমবার সকালে বিদ্যুৎ বিভাগ, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। কথা বলেন বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির মালিকদের সঙ্গে। এরপর জরুরি ভিত্তিতে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিনসহ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা উচিত। লোড ম্যানেজমেন্টে লোডশেডিং সমানুপাতিক হারে করতে হবে। গ্রাহক ভোগান্তি হ্রাসকল্পে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানের আওতায় অ্যাকশন প্ল্যান করার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রতিটি বিতরণ সংস্থার ডিমান্ড অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা প্রয়োজন। লোডশেডিং করতে হলে আগেই গ্রাহকদের জানাতে হবে। তিনি, রোজার সময় সার্বিক পরিস্থিতি উন্নত করতে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন। এসব নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেন। উন্নত ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণে বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণরত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুগ্ম-সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন এবং এলএনডিসি বিতরণ সংস্থাগুলোকে কিভাবে/কি পরিমাণ বিদ্যুৎ দিচ্ছে তা দেখার জন্য যুগ্ম-সচিব একেএম হুমায়ুন কবীরকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।