Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার , ৯ জুন, ২০১৭:  10কাজের প্রাক্কলন ব্যয় নিয়ে দরকষাকষিতে আটকে আছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ। জিটুজি ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য গত বছরের অক্টোবরে চুক্তি করে সরকার। কথা ছিল, চলতি বছরের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কিন্তু নতুন বছরের ছয় মাস চলে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করা যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খুব শিগগির এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। কারণ, সরকার চায় আগামী নির্বাচনের আগেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের দৃশ্যমান কাজ।
প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এটি আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থাতেই আছে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চীনের অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিএইচইসি) যে ব্যয় প্রস্তাব করেছে তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। এ কারণে চায়না হারবারের প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এখনো গ্রহণ করেনি।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলনে সওজের প্রধান প্রকৌশলীকে সভাপতি করে কারিগরি কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। ওই কমিটি সওজের বিদ্যমান শিডিউল রেট ও চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে তুলনাপূর্বক প্রকল্পটির ব্যয় চূড়ান্ত করে। কমিটি জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি বাকি রেখে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় প্রাক্কলন করে ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর চায়না হারবার এ ব্যয় প্রাক্কলন করে ১৬ হজার ৩৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে দরকষাকষি শেষে তারা চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা; যা সওজের হিসাব থেকে ৪ হাজার ৩৭৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বেশি। এ অবস্থায় প্রাক্কলন ব্যয় নিয়ে দরকষাকষিতেই আটকে আছে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পের কাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চায়না হারবার কোম্পানি যে প্রাক্কলন ব্যয় উল্লেখ করে প্রস্তাব করেছে সে অনুযায়ীই তাদের কাজ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি চায়না হারবারের পাঠানো চূড়ান্ত প্রস্তাবের ওপর সুপারিশ লিখে ওই চিঠিটি সড় পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে পাঠিয়েছেন। চায়না হারবারের পাঠানো ওই প্রস্তাবের ওপর অর্থমন্ত্রী লেখেনÑ ‘প্লিজ রিলিজ দিস ইস্যু অ্যাট ইউর আর্লিয়েস্ট কনভেন্সিয়েন্স’। অর্থমন্ত্রীর পাশাপাশি তার ছোট ভাই ড. একে আবদুল মোমেনও চায়না হারবারকে কাজ দিতে অনুরোধ করেছেন। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে স¤প্রতি পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় আবদুল মোমেন ঢাকা-চট্টগ্রাম, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল, ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পের ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তাতে দেখা যায় কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হিসাবে ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পটি হবে দেশের দ্বিতীয় ব্যয়বহুল মহাসড়ক। সচিবকে লেখা ই-মেইল বার্তায় তিনি বলেন, ব্যয় বেশির জন্য যদি বাংলাদেশ সরকার চায়না হারবারের প্রস্তাব ফেরত দেয় তাহলে প্রকল্পটি দুই-তিন বছরের জন্য ঝুলে যাবে। তাছাড়া চায়না হারবার ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছে। তাই ব্যয় বেশি হলেও কাজটি তাদের দেওয়া উচিত। এদিকে সওজের প্রধান প্রকৌশলীকে পাঠানে প্রকল্প প্রস্তাবে চায়না হারবার জানায়, সওজের প্রাক্কলনে ৭০ শতাংশ ইউনিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২০১৫ সালের শিডিউল রেট অনুসারে। বাকি ৩০ শতাংশ ইউনিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২০১৪ সালের বাজারদরের প্রেক্ষিতে। যদিও সওজের প্রস্তাবিত ব্যয় বাজারদরের চেয়ে বেশি। তবে ঢাকা-সিলেট চার লেন জি টু জি-ভিত্তিক প্রকল্প। আর এ প্রকল্পে অন্যান্য জিটুজি প্রকল্পের চেয়ে তুলনামূলক কম ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে কর্ণফুলী টানেল ও পদ্মা রেল সংযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী টানেলে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৫৮ শতাংশ ও পদ্মা রেল সংযোগ ৩৪ শতাংশ বেশি ব্যয়ে চুক্তি করা হয়।
চায়না হারবার, এর চিঠিতে আরও বলা হয়, সওজের প্রস্তাবিত দর স্থানীয় ঠিকাদারদের ও ছোট প্রকল্পের জন্য প্রযোজ্য। তবে আন্তর্জাতিক ঠিকাদার ও বড় প্রকল্পে এ দর গ্রহণযোগ্য নয়। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রকল্পটির ইউনিট মূল্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে চায় না হারবার। পাশাপাশি প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন খাতে বরাদ্দ রাখা দরকার।
এই চিঠির অনুলিপি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়কে বিভাগের সচিব, কারিগরি টিমের অন্যান্য সদস্য ছাড়াও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ও অতিরিক্ত সচিব এবং অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হয়। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন