খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭: ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযানে চিহ্নিত বেশিরভাগ মাদক ব্যাবসায়ী আটক হবার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও ফের মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে নিত্য নতুন মুখ। বয়সে তরুন নতুন এসব মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম নতুন করেই শংকায় ফেলে দিয়েছে স্থানীয়দের। পুরোনো মাদক ব্যাবসার ধরন পালটে রীতিমত গ্রুপিং করে মোটরসাইকেল হাকিয়ে চলছে এই মাদক ব্যবসায়ীদের তান্ডব। জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় চলতি মাসেই বয়সে তরুন একজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর উপর্যপুরি ছুড়ির আঘাতে মারাত্মক আহত হন পুলিশের একজন এস আই । সে ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই এলাকার কয়েকজন নব্য ইয়াবা ব্যবসায়ীর তান্ডবের শিকার হলেন দু’জন অসহায় কিশোর ও তাদের পরিবার ।
ইয়াবা ব্যবসায়ী রনি
ঘটনার সুত্রপাত, গত রোববার বিকেলে বালিয়াডাংগী উপজেলার নব্য ইয়াবা ব্যবসায়ী রনি’র লুকিয়ে রাখা একটি ইয়াবার চালান হারানোর ঘটনা নিয়ে। এদিন রনি তার ইয়াবার চালান হারানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রতিবেশি দুই কিশোরকে বালিয়াডাঙ্গি চৌরাস্তা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় তিনটি মোটরসাইকেলে আরও ৪/৫ জন যুবক রনির সাথে যোগ দেয় ইয়াবার চালান উদ্ধারের মিশনে।
এরপর মধ্যরাত অবধি বালিয়াডাঙ্গি পল্লিবিদ্যুত এলাকার একটি নির্জন স্থানে একটি আমগাছের ডালে ঝুলিয়ে দুই কিশোরের উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। ইয়াবা ব্যবসায়ী রনির বাড়ি উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের ঢেকনা পাড়াতে। তার পিতা মৃত তোফায়েল।
বালিয়াডাঙ্গি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসহায় দুই কিশোরের একজন সিএনজি চালক নাম সুজন পিতা সাইফুল ইসলাম , অন্যজন মতিউর রহমান পিতা খয়রুল ইসলাম । সোমবার বিকেলে হাসপাতালে ঐ দুই কিশোরসহ তাদের অসহায় দরীদ্র বাবা-মায়ের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। হাসপাতালে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সবাই।জানালেন, অমানুষিক নির্যাতনের পরে বিচার চাওয়াতো দূর উল্টো তারাই হুমকির মুখে!
বামে উপরে নির্যাতনের শিকার দুই কিশোর, নিচে তাদের বাবা-মা। ডানে- নব্য ইয়াবা ব্যবসায়ী রনি।
সবার সাথে আলাদা আলাদা করে কথা বলে জানা গেল, ইয়াবা ব্যাবসায়ী রনির ইয়াবা চালান হারানোর পর সে সন্দেহের বশে দুজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর দুজনের পা উলটো করে মাথা নিচে দিয়ে গাছের ডালে ঝুলিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় কয়েক ঘন্টা। এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার কিশোর পানি খেতে চাইলে রনি তাকে পাশের ডোবা থেকে ময়লা পানি এনে খেতে দেয়। বাধ্য হয়ে সে ডোবার ময়লা পানি খেয়ে তেস্টা মেটায়। তারপরেও চলে অকথ্য নির্যাতন ।
রাত ১২ টার পরে এক কিশোর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে বালিয়াডাঙ্গি হাসপাতালে কৌশলে ভর্তি করে পালিয়ে যায় রনি ও তার দলবল। এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম সিএনজিচালক সন্তানের খোঁজে পাগলের মত ছুটোছুটি করতে শুরু করেন অসহায় বাবা-মা। পরে স্থানীয় ৫ নং দুও-সুও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের কাছে ছুটে যান অসহায় ঐ বাবা-মা।
এরপর ঘটনা বেগতিক দেখে আটকে রাখা অন্য একজনকে ছেড়ে দিয়ে সটকে পড়ে রনি গং। এরপরেও রনি গ্রুপের চাপেই আছেন অসহায় ঐ দুই পরিবার। স্পষ্টই শাসিয়ে দিয়েছে মামলাতো দূর হারানো ইয়াবার চালান নাহয় সমপরিমান মুল্য দিতে হবে দুই পরিবারকেই।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা বাদী হয়ে বালিয়াডাঙ্গি থানায় রনি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, মাদক নির্মুলে ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপারের জিরো টলারেন্স ভুমিকায় ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের চলমান ধারাবাহিক অভিযানে ( পুলিশ সুপারের জিরো টলারেন্স; ঠাকুরগাঁও জুড়ে মাদকসেবীদের ‘হাহাকার’!) বালিয়াডাঙ্গিতে বেশ কিছুদিন ধরে মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম ছিলোনা তেমন একটা। এ দফায় নব্য মাদকব্যাবসায়ীদের এমন তান্ডবে ফের অশনিসংকেত দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ঠাকুরগাঁও প্রশাসন এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ নিলে দ্রুতই বন্ধ হবে নব্য ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। একইসাথে অসহায় এই দুই কিশোর পাবে সঠিক বিচার ।