খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭: নিউইয়র্ক থেকে : শিক্ষাঋণ, গৃহায়ন ঋণ, চিকিৎসা-সেবা, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্প-কারখানা স্থাপন ইত্যাদি ১৭টি খাতে প্রবাসীরা ঋণ-সুবিধা পাচ্ছেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক থেকে। সারাবিশ্বে এক কোটি প্রবাসীর কল্যাণে এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে এই ব্যাংক। নিজ এলাকা কিংবা রাজধানী ঢাকায় প্লট/এপার্টমেন্ট নির্মাণ অথবা ক্রয় করতে সহজ শর্তে এবং তুলনামূলক কম সুদে অনেক প্রবাসী ইতিমধ্যেই ঋণ গ্রহণ করেছেন। শুনতে স্বপ্নের মত মনে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা প্রবাসীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস দিচ্ছি। প্রত্যেক শাখায় ‘প্রবাসী ডেস্ক’ রয়েছে, হেড অফিসে রয়েছে প্রবাসীদের প্রকল্পের বরাদ্দ ত্বরান্বিত করতে পদস্থ কর্মকর্তা। এসব তথ্য এনআরবি নিউজকে জানান এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী।নিউইয়র্কের স্থায়ী বাসিন্দা নিজাম চৌধুরী বাংলাদেশে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছেন ৪ বছর আগে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর। মালিকানা-পরিচালনায় রয়েছেন আরো কয়েকজন প্রবাসী।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ যাবত এই ব্যাংকের ৪৫টি শাখার গ্রাহক তাদের একাউন্টে ডিপজিট করেছেন ৬ হাজার ২শ কোটি টাকা। অপরদিকে, তারা বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিয়েছেন ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বছরে এই ব্যাংকের মুনাফার (প্রফিট) টার্গেট হচ্ছে ১৬০ কোটি টাকা। এরমধ্যে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত মুনাফা হয়েছে সাড়ে ৮২ কোটি টাকা। নিজাম চৌধুরী জানান, ৯ শতাধিক কর্মচারির টিম ওয়ার্কে আমরা সব সময় মুনাফার পথেই রয়েছি।
ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির পথ ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বেশ ক’বছর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়েল্্স ফারগো’ (ডবষষং ঋধৎমড়)ব্যাংকের সাথে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে নিজাম চৌধুরীর। সে আলোকে তিনি ব্যাংকের জন্যে আবেদন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশের টিভি টক শো-সমূহে ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক’ হিসেবে পরিচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী নিউইয়র্কে ফিরেছেন দু’সপ্তাহ আগে। ২২ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ডেনী চৌধুরীকে নিয়ে সউদি আরবে যাবেন পবিত্র হজ্জব্রত পালন করতে। সে প্রস্তুতির সময়েই ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার তিনি ‘এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক’র কর্মপরিধি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান বিশেষ এ সাক্ষাতকারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘শুধু কথায় নয়, প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণে সত্যিকার অর্থেই তিনি অনেক কিছু করছেন। এনআরবি নামে ৩টি ব্যাংক তারই সাক্ষ্য বহন করছে। এসব ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধারার অর্থনীতিতে প্রবাসীরা সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি, প্রিয় মাতৃভ’মিতে বিনিয়োগের স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়েছে প্রতিটি প্রবাসীরা।’ নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসের অভিজ্ঞতায় আমার ব্যাংকের সবকটি শাখায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কোন বালাই নেই। অযথা কাউকে হয়রানি কিংবা কোন ঋণ নিয়ে অযথা আমলাতান্ত্রিক জটিলতারও অবকাশ নেই।’
‘সবকাজ হচ্ছে অনলাইনে। ফলে দুর্নীতির সুযোগ নিতান্তই কম’-উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার প্রকাশ ঘটিয়ে বলেছেন যে, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে আরো দু’টার্ম (১০ বছর) ক্ষমতায় রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে। এটি প্রয়োজন জাতির বৃহত্তম স্বার্থে। যেমনটি ঘটেছে মালয়েশিয়াসহ বেশ কটি দেশে। ড. মাহাথির মোহাম্মদকে মালয়েশিয়ানরা ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী রেখেছিলেন এবং তার সুফল তারা ভোগ করছেন এখন। টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ানের মধ্যে মধ্যমশ্রেণীর উন্নত রাষ্ট্রের পথ বেয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূর প্রসারি যে পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধু কন্যা হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, তাকে সাফল্যমন্ডিত করতে গোটা দেশবাসীকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে এক্ষুনি।’
বছরখানেক আগে তার স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্যা ডেনি চৌধুরীকে সাথে নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাবার অভিজ্ঞতাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ব্যাঙ্কার-রাজনীতিক নিজাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমাদের প্রতিপক্ষ মাহাথির মোহাম্মদকে জানিয়েছিলেন যে, আমি হচ্ছি বাংলাদেশের এমপি, নাম জয়নাল হাজারি এবং আমার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মাহাথির যেন আমাকে সাক্ষাত না দেন। এটি জেনে সাক্ষাতের পূর্বাহ্নেই আমি শুধু তাকে অনুরোধ জানাই গুগল সার্চ করে ‘নিজাম চৌধুরী’ দেখার জন্যে। একইসাথে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট মেম্বারদের তালিকায় আমার নাম কখনো ছিল কিনা-সেটিও দেখার অনুরোধ জানাই। অর্থাৎ আমাকে ঠেকানোর জন্যে বিশেষ একটি মহল ‘জয়নাল হাজারি’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। যা ধোপে টেকেনি।’নিজাম চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘তাঁর (ড. মাহাথির) সাথে আমার এপয়েন্টমেন্ট ছিল সকাল ১০টায়। এক ঘন্টা আগে জানলাম ঐ ধরনের অভিযোগ পেশের কথা। মালয়েশিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েঁিল যে, আমি ফেনীর এমপি জয়নাল হাজারি, আমি খুনী।’
নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে ঘন্টাখানেকের মত কথা হয় মালয়েশিয়ার কারিগর মাহাথিরের সাথে। টানা ২৭ মিনিট আমি তাকে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক ভিশন এবং উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিকতা, সততার সাথে সবকিছু হ্যান্ডেল করার বিচক্ষণতা ইত্যাদি উল্লেখ করি। এরপর ড. মাহাথির আমাকে জানান যে, তিনি যখন বর্তমান মালয়েশিয়া তথা আধুনিক মালয়েশিয়া গড়েছেন, সে সময় অধিকাংশ মানুষই তার পক্ষে ছিলো। তিনি উল্লেখ করলেন, ‘তোমার নেতৃর জন্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করা কঠিন হবে।’আমি জানতে চাইলাম, ‘কেন এমনটি মনে হচ্ছে?’ তিনি বললেন, ‘কারণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করেছে, তারা এখনও তার বিরুদ্ধে।’
আরেকটি বিষয় তিনি উল্লেখ করেছেন যে, ‘বাংলাদেশের পাথর নেই। আমরা নাকি ইট ভেঙ্গে পাথর বানাই। সেটি দিয়ে আমরা বিল্ডিং বানাই। এটি টেকসই হবে কী করে। টেকসই উন্নয়নের জন্যে দরকার পাথর দিয়ে ভবন, ব্রীজসহ সকল স্থাপনা নির্মাণ করা। প্রয়োজনে মালয়েশিয়া থেকেও পাথর কেনা যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ, মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমাণের পাথর রয়েছে। আমার দেখা অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার মত পাথর আর কোথাও নেই। দাম একেবারেই কম, মানগতভাবে খুবই উন্নত।’
২২ বছরের শাসনামলে ড. মাহাথির যে সবকিছু হালাল কাজ করেছেন, তা ঠিক নয়। উন্নয়নের বিরোধিতাকারিদেরকেও তিনি শক্ত হাতে দমন করেছেন। এসব কথা কেউ বলেন না। কারণ, তার হাতেই গড়ে উঠেছে আধুনিক মালয়েশিয়া। এমন কঠোর না হতে পারলে হয়তো তিনি অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারতেন না। এজন্যে তার নেতৃত্বকেই সকলে গ্রহণ করেছেন, তার প্রশংসা উচ্চারিত হচ্ছে সর্বসাধারণে। ‘প্রচন্ড আগ্রহ দেখেছি শেখ হাসিনার ব্যাপারে’। তিনিও এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেন যে, ‘বাংলাদেশকে গড়ার ক্ষেত্রে যদি শেখ হাসিনাকে সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে নিশ্চয়ই তা সফল হবে। এজন্যে প্রয়োজন সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নে ধাবিত করা এবং অধিকাংশ মানুষের সমর্থন পাওয়া’-উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই ৪৫টি শাখা হয়েছে এই ব্যাংকের। কাজ করছেন এক হাজারের মত উদ্যমী বাঙালি। প্রতিটি শাখাতেই রয়েছে ‘এনআরবি ডেস্ক।’ অর্থাৎ মাতৃভূমিতে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রবাসীদের জন্যে সবসময় কাজ করছে এই ব্যাংক। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি আকারের শিল্প কারখানাতেও অর্থ দিচ্ছে এই ব্যাংক। রয়েছে ১৭টি নতুন প্রডাক্ট,সবগুলোই প্রবাসীদের কল্যাণে। ‘এনআরবি নামে আরো দুটি ব্যাংক থাকলেও, সেগুলোতে নেই এনআরবি ডেস্ক’-উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী।
নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘গত ৭ বছরে বিভিন্ন দেশের ৪৭ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশে ছোট, মাঝারি, বৃহৎ আকারের শিল্প-কারখানা, পোল্ট্রি ফার্ম, মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপনে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। আর এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন এসব প্রবাসী। রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি সরাসরি অর্থনীতিতে প্রবাসীদের এই অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা সবসময় আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা স্বীকার করেন অকৃপণভাবে। প্রবাসীদের এমন আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ৩টি ব্যাংক দিয়েছেন, যা ছিল অকল্পনীয়। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীও দিয়েছেন প্রবাসীদের।’
নিজাম চৌধুরী বলেন, আমি যখন ব্যাংকের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করেছি, তিনি বলেছিলেন যে, ‘তোমরা বিদেশে থেকে ব্যাংক চালাবে কীভাবে?’ এ সময় আমি দেশরতœ শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে স্মরণ করিয়ে দেই যে, ভারতীয় প্রবাসীদের (এনআরআই) উদ্যোগে ১৯৯৪ সালে আইসিআইসি ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। সেটি এখন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি ব্যাংকে পরিণত হয়েছে এবং সারাবিশ্বেই এর শাখা বিস্তৃত হয়েছে।’
আরো দু’টার্ম তথা ১০ বছর শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে এই রাজনীতিক নিজাম চৌধুরী বলেন, গত ৮ বছরে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন যে, উনার নেতৃত্বেই যে কোন বড় ও কঠিন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বিদেশের ঋণ সহায়তা ছাড়াই। পদ্মা সেতু নির্মাণ এর অন্যতম প্রধান উদাহরন। দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন এই সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, সে সময় বিশেষ একটি মহল ডুগডুগি বাজানোর চেষ্টা করেছেন যে, গেল গেল সব গেল। সে সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও বর্তমানের মত এত মজবুত ছিল না। এতদসত্বেও তিনি সাহস করে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, নিজ সম্পদেই পদ্মাসেতু করবো। সেটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। এবার ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে। যদিও ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ট্যাক্স প্রদানকারির সংখ্যা ২০ লাখেরও কম। এই সংখ্যা যদি বাড়ানো সম্ভব হয় অর্থাৎ যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তারা সকলেই যদি ট্যাক্স প্রদান করেন, তাহলে বাংলাদেশে ঘাটতি বাজেটের কোন চ্যাপ্টারই থাকবে না। বড় সত্য হচ্ছে, এমন আশার সঞ্চার ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। বাংলার মানুষ এখন স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন উন্নত জীবন-যাপনের।’
নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি রিসোর্সফুল কান্ট্রি, যেটি অন্যের নির্ভরশীল না হয়েই এগিয়ে চলতে পারে এবং এই ধারণাটি সর্বসাধারণকে ভালোভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা অত্যন্ত দম্ভভরে উচ্চারণ করেছেন সর্বমহলে যে, আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষ আমাদের আপদ নয়, তারা হচ্ছেন বাংলাদেশের সম্পদ। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে পারি, প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষিত ১০ লাখ যুবক-যুবতী আমাদের কর্মশক্তিতে যোগ হচ্ছে। শিক্ষার আলো রয়েছে, এমন একজনকেও বেকার পাওয়া যাচ্ছে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচিতে ‘লার্নিং এ্যান্ড আর্ণিং’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বহুসংখ্যক মানুষ আয়-রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছে। আর এভাবেই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারি মানুষের সংখ্যা কমে এখন ২৫% এ এসেছে। মানুষের মাথাপিছু আয় এখন বেড়ে ১৬৭০ ডলার হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমানের ধারা অব্যাহত থাকলে তা শীঘ্রই আরো বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশের ইকনোমী অত্যন্ত স্ট্রং, তা আন্তর্জাতিক সংস্থাই বলছে। ভারতেও চেয়ে শক্তিশালী বাংলাদেশের অর্থনীতি।’
নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আইটি সেক্টরকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম একটি অবলম্বনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরকে ধ্বংসের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশীদের খুন করা হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসীরা হামলা করে বিদেশীদের হত্যা করেছে। বিদেশীরা যারা বাংলাদেশে না যায়-এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্থানে বিদেশীরা আক্রান্ত হয়েছেন।
ছিটমহল, সমুদ্রসীমা নির্দ্ধারণের দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধান ঘটেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এটি এখন সকলেই জানেন এবং স্বীকার করছেন যে, গভীর সমুদ্রে যে সম্পদ রয়েছে, তা বর্তমানের বাংলাদেশের চেয়েও বেশী। সরকার তা আহরনের বহুমুখী পরিকল্পনায় এগুচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা তেলও পেয়েছি। গ্যাসের কূপ খননের জন্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে পেট্রবাংলাকে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে আমাদের ন্যাশনাল গ্রীডে প্রয়োজনের চেয়ে বেশী গ্যাস যোগ হবে বলে বাংলাদেশ আশা করছে। এসব কিছু মিলিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়ে নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ানরম্যান পদে দলীয় পার্থী মনোনয়নের যে বোর্ড রয়েছে, সেখানেও সভানেত্রী শেখ হাসিনা রয়েছেন। অর্থাৎ তৃণমূলে গণতন্ত্রায়নের প্রাথমিক কাজকর্মেও রয়েছে তার গভীর পর্যবেক্ষণ। কারণ, উন্নয়নের সুদূর প্রসারি যেসব পরিকল্পনা তিনি ঘোষণা করেছেন, তার বাস্তবায়ন ঘটতে হবে তৃণমূল থেকে। তাই, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে যদি সত্যিকারের কর্মীরা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে, তাহলে তার সে ভিশন বাস্তবায়িত করা সহজ হবে।’ ‘রাজনীতি যাতে দস্যু আর লুটেরাদের হাতে না যায়, রাজনীতি যাতে সত্যিকারের দেশপ্রেমিকদের হাতেই থাকে, সেজন্যে শেখ হাসিনা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জড়িয়ে রয়েছেন’।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহকে হত্যার মাধ্যমে এই ভূখন্ডে বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আর সেই ২৩ জুনেই ( ১৯৪৯ সালে) বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাঙালিরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা বিজয় অর্জনের পর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই বিজয়কে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ষড়যন্তকারিরা মনে করেছিল যে, এবার হয়তো বাঙালিরা চিরতরেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সেটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে জাতিরজনকের দুই কন্যা জীবিত থাকার কারণে।’
নিজাম চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের পরই শের-এ বাংলা নগরে আমরা তাকে সংবর্ধনা দেই। সেখানে ছাত্রলীগের সূর্যসেন হল শাখার কর্মী হিসেবে উপস্থিত হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সে সময় অঝোর ধরায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে নেত্রী শেখ হাসিনা সংকল্প ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমার মা-বাবা, ভাই-কেউ নেই, আপনারা আমরা মা, ভাই-বোন, আপনারাই আমার পরম আত্মীয়।’ সেই থেকে তিনি আজ অবধি একটি ঘন্টাও ব্যক্তিগত লোভ-লালসার বশবর্তী হয়ে কোন কিছু করেননি। দুই সন্তানকে বিদেশে রেখে নিজের জীবন বাজি রেখেই রাজনীতি করেছেন, দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। বাবার মত তিনিও বাংলাদেশটাকেও এগিয়ে নিতে নিরন্তরভাবে সচেষ্ট রয়েছেন।’ নিজাম চৌধুরী উল্লেখ করেন, ‘শেখ হাসিনাকে এ যাবত ২১ বার হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তবুও তিনি দমেননি। তার সংকল্পে তিনি বদ্ধ-পরিকর।’
গত ৬/৭ বছরে ৪০০ এর অধিক টক শো’তে অংশ নেয়া নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘অনেকেই ৬৯এর গণ- আন্দোলনের দিনগুলো স্মরণ করতে চান না। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যেকার বিভিন্ন ফাড়াকের তথ্য-চিত্র সংবলিত (সোনার বাংলা শশ্মান কেন?) পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তানীরা কীভাবে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে এবং কঠোর শ্রম প্রদানকারি পূর্ব পাকিস্তানীরা কীভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন-তুলনামূলক এসব আলোচনা বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করে রুখে দাঁড়াতে। এখন আবার সময় এসেছে ঐ ধরনের তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের। বাহাত্তর থেকে এ যাবত যারা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন বা আছে, তাদের সময়কালে কে কী করেছেন, তার সার সংক্ষেপ প্রকাশ করা উচিত। কোন আমলে মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটেছে, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন কতটা ঘটেছে, কত মাইল সড়ক-মহাসড়ক নির্মিত অথবা সংস্কার করা হয়েছে, বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে মাথাপিছু গড়পরতা আয়ের পরিমাণ কত, গড় আয়ু আগে কত ছিল, এখন কত হয়েছে, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসরকারি মানুষের সংখ্যা কখন কতজন ছিল ইত্যাদি তুলনামূলক তথ্য প্রকাশ করলেই বাংলার মানুষ তাদের ভবিষ্যত নেতৃত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত একটি ধারণায় পৌঁছতে সক্ষম হবেন।’
নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘সামগ্রিক কল্যাণ ও অগ্রগতির স্বার্থে ক্ষুদ্র অনেক কিছুই অবজ্ঞা করতে হয়। মালয়েশিয়ার কথা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। এই যুক্তরাষ্ট্র গড়তে কত কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকের রক্ত ঝরেছে, সে তথ্য বিশ্লেষণ করলে হৃদয় ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হয়। কিন্তু কেউ তাকে আমলে নিতে চান না, ভালোর জন্যে তাদেরকে আত্মদান করতে হয়েছে বলে।’ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ চিন্তাধারার আলোকে নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস রপ্তানীর দ্বিগুন বেশী মূল্যের টেকনোলজি রপ্তানীর পরিকল্পনা রয়েছে। সফটওয়্যার রপ্তানীর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক সম্পদ উপার্জনে সক্ষম হবে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সোয়া ৭কোটিরও বেশী গ্রাহক রয়েছে ইন্টারনেটের। সীম ব্যবহারকারির সংখ্যাও ১২ কোটি। অর্থাৎ প্রযুক্তির প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়েই সামনের দিনগুলোতে উচ্চ শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের মাধ্যমে নতুন সফটওয়্যার তৈরী করতে হবে। উদ্ভাবনীতে আরো এগুতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে এক সময় যারা হাসিঠাট্টার অপচেষ্টা চালিয়েছেন, আজ তাদের কন্ঠেই ধ্বনিত হচ্ছে এর বাস্তবতা। বাংলাদেশ এগিয়ে চলতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধ্যান-ধারনা অপরিসীম ভূমিকা রাখছে, তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক এওয়ার্ডপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই ঘটেছে বলে উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী।ফেনীর সন্তান নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বে সম্ভবত এই প্রথম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উইং হিসেবে বিশেষ একটি টিম কাজ করছে। এর নাম ‘সেন্টার ফর রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন’ (সিআরআই)। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার সাথে রাজনীতিকদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজনীতিকে সর্বস্তরে নিয়ে যাবার জন্যে কাজ করছে এই সংস্থাটি। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয় এবং রেদোয়ান সিদ্দিক ববি। এই সিআরআই’র সহযোগী সংস্থা হিসেবে কর্মরত ‘ইয়ং বাংলা’র সাথে আমিও কাজ করছি। বাংলার মেধাবি ও উদ্যমী তরুন সমাজকে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চলমান জোয়ারে একিভূত করার পাশাপাশি তাদের মেধাকে উদ্ভাবনী কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে এই ইয়ং বাংলার। অর্থাৎ তরুণ সমাজ যাতে বিপথগামী না হয়, সে লক্ষ্যে এই সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
বিদেশীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে এত আগ্রহী কেন-প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বিনিয়োজিত অর্থের পুরো গ্যারান্টি রয়েছে। এছাড়া, বর্তমান সরকারের বিনিয়োগ-বান্ধব নীতির ব্যাপারেও আন্তর্জাতিক মহল অবহিত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়ার পাশাপাশি আমলাদের ধীরে চলার সনাতনী প্রক্রিয়ার অবসান ঘটেছে বাংলাদেশে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নতির পথে ধাবিত হতে যা প্রয়োজন, তার সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে আজকের বাংলাদেশে। ‘শেখ হাসিনার যে কারিশমা তা আর কোন রাজনীতিক পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম হননি। নিকট ভবিষ্যতে সে আলামতও দেখা যাচ্ছে না’-এমন সরল স্বীকারোক্তি বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও। বিএনপির সেই সব বন্ধুদের কাছে আমি জোর গরায় বলে আসছি যে, শেখ হাসিনাই একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি ক্ষমতার বদলে ভোগে বিশ্বাসী নন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন জনগণের সেবা করার জন্যে।’