Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

কক্সবাজারে পরিবহন যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখাতে হবেখােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যাত্রীদের পরিচয়পত্র যাচাই করার জন্য কক্সবাজারের সকল বাস ও পরিবহন মালিকদের নির্দেশ দিয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের অস্থায়ী আশ্রয় শিবির থেকে বেরিয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কার প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার বাসসকে বলেন, ‘আমরা কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় শিবির থেকে বেরিয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাইছি।’

তিনি আরো বলেন, ওই এলাকায় যে কোন ধরনের পরিবহনের যাত্রীকে অবশ্যই ছবিসহ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চেকপয়েন্ট বসিয়েছে।

এর আগে, পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক জানান, ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে জনস্রোত শুরু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুই শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

১৪ সেপ্টেম্বর, পুলিশ মানিকগঞ্জ থেকে ২০ রোহিঙ্গাকে আটক করে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে ফেরত পাঠিয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের সুপারিন্টেন্ডেন্স (এসপি)দের কাছে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। এরা হচ্ছেন বিশেষ শাখার (এসবি) এআইজি, র‌্যাবের ডিজি ও সিএমপি কমিশনার।

রোহিঙ্গারা যেন কক্সবাজার থেকে বেরিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য তিন জেলার পুলিশের প্রধান কর্মকর্তাদের সড়ক, নৌ ও আকাশপথে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে এই রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় এই মুহূর্তে তহবিল জরুরি : জাতিসঙ্ঘ

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়ে জরুরিভিত্তিতে তহবিল চেয়েছে। সোমবার জাতিসঙ্ঘের রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সহিংসতা ও নিপীড়ন এড়াতে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

জাতিসংঘের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে মানবিক সহায়তা অভিযান অব্যহত রাখার জন্য এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে তহবিল প্রয়োজন।’

বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘ রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, ‘মাত্র এক মাসে ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা স্থল ও জলপথ পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থানে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির গড়ে তোলা হচ্ছে, যাতে করে তাদের কিছুটা নিরাপত্তা দেয়া যায়। জাতিসংঘ ও এর এনজিও সহযোগীরা শরণার্থীদের জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী সরবরাহে সরকারকে সহায়তা করছে। শরণার্থীদের চাহিদার পরিমাণটা অনেক বেশি এবং তাদের প্রাণ রক্ষায় আমরা যে সহযোগিতা করে যাচ্ছি তা বেগবান করতে জরুরি ভিত্তিতে তহবিল প্রয়োজন।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শরণার্থীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। প্রতি পাঁচটি রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে আনুমানিক একটি পরিবারের প্রধান নারী। বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ও নিঃসঙ্গ শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। যৌন সহিংসতাজনিত ভিকটিমদের প্রতিরোধে সহায়তা সেবা প্রদানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবিক সহায়তাকারীরাও শিশুদের জন্য অস্থায়ী শিক্ষা কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান করে দিচ্ছেন। এ ছাড়াও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এবং সহিংসতায় আক্রান্তদের বিশেষ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

ওয়াটকিনস বলেন, ‘এই সংকট শুরু হওয়ার এক মাস পূর্তির দিনে আজ আমি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে তাদের উদারতা ও মহত্বের জন্য এবং অক্লান্তভাবে অসহায় রোহিঙ্গাদের সহায়তাদান ও তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সহায়তা কর্মী, শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবীদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

এদিকে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, গত আগস্ট মাসে ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার জন্য একটি প্রাথমিক রেসপন্স প্ল্যান শুরু করা হয়। বর্তমানে শরণার্থীর সংখ্যা মারাত্মক বৃদ্ধি পেতে থাকায় প্ল্যানটি এখন সংশোধন করা হচ্ছে। অক্টোবর মাসের গোড়ার দিকে ছয় মাসের জন্য শরণার্থীদের সহায়তার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং শরণার্থী সহযোগিতা তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে।