Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

news jpg=- 06খােলা বাজার২৪।।শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭: মোঃ রাসেল মিয়া,নরসিংদী প্রতিনিধি : নরসিংদীতে প্রভাবশালীদের দখলের কবলে পড়েছে দীর্ঘদিনের পুরনো প্রবাহিত মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, হাড়িধোয়া ও ব্রহ্মপুত্র নদী। নদী তীরবর্তী ছোট-বড় অসংখ্য শিল্প-কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য, ঝুলন্ত পায়খানায় নির্গত মানব বর্জ্য, শত শত ড্রেন ও নালা-নর্দমা থেকে বেয়ে আসা ময়লা-আবর্জনা বিষাক্ত করে তুলেছে নদীগুলোর পানি। এছাড়া অবৈধভাবে পাড়সহ নদী দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতার কারণে প্রতিনিয়ত সংকুচিত হচ্ছে এক সময়ের প্রমত্তা এই নদীর স্রোতধারা। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা দূষণ ও দখল প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাওয়া নদীগুলোর মতো এই নদীগুলোরও করুণ পরিণতি হবে।

নরসিংদী জেলার একদিকে রয়েছে মেঘনা, অপরদিকে শীতলক্ষ্যা, কিছু অংশে ব্রহ্মপুত্র নদী ও জেলার ভেতরের দিকে বয়ে চলেছে হাড়িধোয়া নদী। হারিধোয়া নদীর দুই তীরে রয়েছে প্রায় ১০-১২ টি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের। এসব প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক বর্জ্য প্রতিনিয়ত নদীর পানিতে মিশছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া কারখানার বর্জ্য শোধন করে হাড়িধোয়া নদীতে ফেলার নিয়ম থাকলেও খরচ বাঁচাতে অনেক প্রতিষ্ঠানই সে নিয়ম মানছে না। জেলার বড়ইতলা এলাকায় অবস্থিত আদুরী টেক্সটাইল, বৈশাখী টেক্সটাইলসহ অন্যান্য টেক্সটাইলের কাপড়ের বিষাক্ত রং পানি ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি চলে যাচ্ছে হাড়িধোয়া নদীতে। পরিবেশবিদদের মতে ভেসে থাকা তেলের কারণে সূর্যের আলো নদীর পানির নিচের স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে মাছ ও জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক বেঁচে থাকার পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য পোনার নার্সারি গ্রাউন্ড ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়া মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরে রয়েছে বিভিন্ন কাপড় তৈরীর কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যও মিশে যাচ্ছে নদীর পানিতে। বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। কর্পোরেশনের কয়েকশ’ ড্রেনের পানি কোন ধরনের শোধন ছাড়াই ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি গড়িয়ে পড়ছে নদীতে। শত শত ড্রেন ও নালা-নর্দমা থেকে বেয়ে আসা ময়লা-আবর্জনা বিষাক্ত করে তুলছে নদীর পানিকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নরসিংদীর নদীগুলো দূষণের মূল কারণ হচ্ছে বিভিন্ন কারখানা থেকে বিষাক্ত রংয়ের প্রভাবসহ শত শত ড্রেন ও নালা-নর্দমার ময়লা-আবর্জনা ও দূষিত পানি নদীতে গিয়ে পড়া। যেভাবে ময়লা-আবর্জনা এবং দূষিত পানি, বর্জ্য ও রাসায়নিক দ্রব্য প্রতিনিয়ত নদীগুলোতে পড়ছে তাতে নদীর পানি খুব বেশিদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকবে না বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, প্রতিমাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের কেমিস্ট শাখা থেকে নদীর পানি পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে জেলা পরিষদের পাশে আবহমান হাড়িধোয়া ও মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি সংগ্রহের মাধ্যমে পরীক্ষা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, হাড়িধোয়া নদী দূষণ মাত্রাতিরিক্ত, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হারিয়ে যাবে হাড়িধোয়া নদী। কিছু প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যেই নোটিশ দেয়া হয়েছে ও তালিকা তৈরী করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে শীঘ্রই সতর্কীকরণ নোটিস দেয়া হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই নরসিংদীতে নদী-খাল দখলের মহোৎসব চলছে। ইতিমধ্যে হাড়িধোয়া ও মেঘনা নদী তীরবর্তী আনুমানিক ৪০ কিলোমিটার ভূমির অধিকাংশ স্থান অবৈধ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। কাপড় তৈরীর কয়েকটি কারখানা, প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য দোকানপাট, বস্তি ও বাড়িঘর গড়ে উঠেছে নদীর দুই পাড় দখল করে। একটি প্রভাবশালী মহল হাড়িধোয়া নদীর বড় অংশ দখল করে অবৈধভাবে কাপড় তৈরীর কারখানা গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিআইডবিøউটিএ ইতিপূর্বে একাধিক নদী দখলদারের তালিকা প্রস্তুত করে উচ্ছেদ অভিযানে নামার উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর হয়নি। ওই তালিকা অনুযায়ী হাড়িধোয়া ও মেঘনা নদীর পাড়ে কমপক্ষে এক শতাধিক অবৈধ দখলদার রয়েছে। এসব সরকারী তালিকাভুক্ত জমিতে স্থাপনা গড়তে হলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু তারপরও কিছু ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্নভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা স্থাপনা। বিশেষ করে হাড়িধোয়া নদী দখল করে কারখানা ও পাকা ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।
মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও হাড়িধোয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখল এবং নদীতে নানা বর্জ্য ফেলে নদীকে সংকুচিতসহ পানি দূষিত করা হচ্ছে। এছাড়া পলি ও বর্জ্য দ্বারা অব্যাহতভাবে নদী ভরাট হচ্ছে। ফলে নদীর গভীরতাও দিন দিন হরাস পাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী দখল করে মাছের ঘের, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নির্মাণ এবং শুকনা মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। জানা যায়, বিভিন্ন সময় অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।