খােলা বাজার২৪।।শনিবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৭: মোঃ রাসেল মিয়া : নরসিংদীর রায়পুরার মির্জারচরে দুই দল লাঠিয়াল বাহিনীর টেটাযুদ্ধ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না রক্তের হোলি খেলা। অব্যাহত টেটাযুদ্ধ এখন গ্রাম্য দাঙ্গায় পরিনত হয়েছে। মির্জারচরের গ্রামগুলো পরিণত হয়েছে বিরান ভূমিতে। অব্যাহত সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় ১৪ অক্টেবার শনিবার আবারো টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
মির্জারচর গ্রামের চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক ও ফারুকুল ইসলাম এর লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত এই টেটাযুদ্ধে উভয় পক্ষের কমবেশী ২২ ব্যক্তি আহত হয়েছে।
টেটাযুদ্ধের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ককটেল বিস্ফোরণ। আহতদের মধ্যে নরসিংদী জেলা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন হেলাল, বাচ্চু, জয়নাল, কাশেম, বাসেরউদ্দিন, সুলেহা বেগম, আল-আমিন, জয়নাল-২, বাসেদ মিয়া, আলামিন মিয়াসহ আরো অজ্ঞাত অনেকেই রয়েছে। অন্যান্য আহতরা পুলিশী ঝামেলা এড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এছাড়াও আহতদেরকে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য উভয় লাঠিয়াল বাহিনী এলাকায় ডাক্তার নিয়োগ করেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিগত এক মাস ধরে টেটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে আসছে। আহত হয়েছে অন্ততঃ এক শত ব্যক্তি। ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটেছে অসংখ্য। লুটপাট ও চাঁদাবাজী হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল।
রায়পুরা থানায় মামলা- পাল্টা মামলা হয়েছে অন্ততঃ ৩/৪টি। কয়েক হাজার মানুষকে এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করেও টেটা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারছে না। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় টেটা যুদ্ধ। এই টেটা যুদ্ধ ক্রমান্বয়ে গ্রাম্য দাঙ্গার রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পার্শবর্তী এলাকায়। গত এক মাস ধরে বিক্ষিপ্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে দুই পক্ষের টেঁটাবিদ্ধ হয়ে অনেক লোকজন আহত হয়।
এ পর্যন্ত অগ্নিসংযোগসহ ভাংচুর হয়েছে প্রায় ২০০টি বসত ঘরে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় কোটি টাকারও উপরে সম্পদ। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অনেক পরিবার। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ও বিভিন্ন তুচ্ছ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে সংঘর্ষের সূচনা হয়।
শনিবার সকাল থেকেই দুই পক্ষের লোকজন টেঁটা, বল্লাম, দা, ককলেটসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় টেঁটা ও ককটেল বিস্ফোরণে উভয় পক্ষের প্রায় ৫০ ব্যক্তি আহত হয়। নির্বাচনের ভোটকে কেন্দ্র করে জাফর ইকবাল চেয়ারম্যান এর লোকজন বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ফারুকুল ইসলাম এর উপর অর্তকিত হামলা চালায়।
খবর পেয়ে ফারুকুল ইসলামের লোকজন বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসলে দুই দলের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধ শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের টেঁটা ও ককটেল বিস্ফোরণে ৫০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। খবর পেয়ে নরসিংদী ও রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘ দুই ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে পারেনি।
স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, মির্জারচরের এ ঝগড়াটা ঐতিহ্যগত ভাবেই সংঘটিত হচ্ছে। এখানে অন্ততঃ পাঁচ থেকে সাতটি ইউনিয়নের লোকদেরকে দাওয়াত দিয়ে জড়ো করে দুই পক্ষ ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তিন থেকে চার হাজার লোককে দমন করতে সীমিত সংখ্যক পুলিশ নিয়ে সংর্ঘষ চলাকালে কিছুই করার থাকে না আমাদের। স্থানীয় পুলিশ চেষ্টা করেও তা দমন করতে পারছে না। এখনো সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।