Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪। মঙ্গলবার ২৪ অক্টোবর ২০১৭: মেহেদী হাসান : ৩৬তম বিসিএসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চার শিক্ষার্থী চারটি ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।
প্রশাসনে প্রথম ইসমাইল হোসেন, তথ্য ক্যাডারে প্রথম সারাহ ফারজানা হক ও পরিসংখ্যানে প্রথম মোহাম্মদ কামাল হোসেন এবং শিক্ষা ক্যাডারে অ্যাকাউন্টিং বিভাগে প্রথম হয়েছেন মুহম্মদ-মনির-উজ জামান মিঠু।
এ ছাড়া বিভিন্ন ক্যাডারে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জবির শিক্ষার্থী ৩৬তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ৩৪ এবং ৩৫তম বিসিএসেও ক্যাডার প্রাপ্তির সংখ্যার দিক থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষে ছিল।
প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ৫ম ব্যাচ থেকে পাস করা চাঁদপুরের সন্তান ইসমাইল হোসেন। তার জীবনের প্রথম কোনো চাকরির পরীক্ষা হলো ৩৬তম বিসিএস। যখন তিনি বিসিএসের জন্য আবেদন করেন তখন তার অনার্সের ফলও প্রকাশিত হয়নি। অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে পরীক্ষা দেন তিনি।
ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের ছোট একটি বিশ্ববিদ্যালয়। হল নেই, ভালো গ্রন্থাগার নেই। প্রস্তুতি নেওয়ার বাড়তি কোনো সুযোগও নেই। এর মধ্যে বিসিএসে একটি ক্যাডারে প্রথম হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। ভালো লাগছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সবার সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভবিষ্যতে যারা বিসিএস দেবেন, তাদের জন্য এটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। জুনিয়রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, লক্ষ্য ঠিক রেখে সে অনুযায়ী কাজ করলে সফলতা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তথ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সারাহ ফারজানা হক। তিনি আইন বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি অনার্সে জিপিএ ৩ দশমিক ২৭ ও মাস্টার্সে ৩ দশমিক ৩৬ পেয়ে পাস করেছেন। ৩৬তম বিসিএস ছিল সারাহ ফারজানার দ্বিতীয় বিসিএস। এর আগে ৩৫তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি পেয়েছিলেন।
সারাহ ফারজানা হক বলেন, ইচ্ছা ছিল প্রথম শ্রেণির চাকরি করার। সেই আশা নিয়েই পরেরবার বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিই। ফলাফলের দিনে অনেক উৎকণ্ঠায় ছিলাম। আশা ছিল, ক্যাডার পাব, কিন্তু কোনো ক্যাডারে প্রথম হতে পারবÑ এটা প্রত্যাশাই ছিল না। এখন মনে হচ্ছে, প্রথম হয়ে শুধু আমার নিজের মুখ উজ্জ্বল হয়নি, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখও উজ্জ্বল হয়েছে।
সারাহ ফারজানা আরো বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হল নেই। সবাই বিভিন্ন জায়গায় থেকে নিজের উদ্যোগে পড়াশোনা করে। হল থাকলে শেয়ার করে পড়তে সুবিধা হতো। আর তাহলে আমরা আরো ভালো করতে পারতাম। হল না থাকার এই শূন্যতার মধ্যেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারে প্রথম হওয়া বিশাল ব্যাপার আমাদের জন্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুনরা এ থেকে দারুণ অনুপ্রেরণা পাবেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যার বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের মোহাম্মদ কামাল হোসেন। পরিসংখ্যান ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তিনি। এটা তার জীবনের প্রথম বিসিএস।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, লেগে ছিলাম ভালো ফল হবে এ আশায়। পড়াশোনার পথটা সহজ ছিল না।
অনার্সে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য ৩ ও মাস্টার্সে ৩ দশমিক ৪৭ পেয়েছেন মোহাম্মদ কামাল হোসেন। তিনি বলেন, মূলত অনার্সের পর থেকে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করেছি। এরপর নিয়মিত পড়েছি। মনে হয়েছে, ভালো করে পড়লে একটা ভালো ফল আসবেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত সুযোগ-সুবিধা। তারপরও ভালো ফল করেছি বলে বেশ ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীদের কিছুটা হলেও সম্মানিত করতে পেরেছি।
মাদারীপুরের সন্তান মুহম্মদ-মনির-উজ জামান মিঠু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। অ্যাকাউন্টিং ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন তিনি। তিনি ৩৫ বিসিএসে নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ৩৬তম বিসিএসে তিনি কোচিং না করেই গ্রুপ স্টাডি আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নানা পরামর্শ নিয়ে পড়াশুনা করে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। অনার্সে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৫ ও মাস্টার্সে ৩ দশমিক ২৫ পেয়েছেন।
মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে নান সীমাবদ্ধতা ও সংকট রয়েছে। তবে ঢাকার মধ্যে অবস্থিত হওয়া সবচেয়ে বড় সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এত বড় অর্জন ঢাকার মধ্যে থাকার কারণেই সম্ভব হয়েছে।
বিসিএসে এমন সফলতায় উচ্ছ্বসিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এটি বিরাট এক অর্জন। এখন সবচেয়ে মেধাবীরা এখানে ভর্তি হচ্ছে। শিক্ষক হিসেবেও মেধাবীদেরকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
উপাচার্য আরো বলেন, দ্রুত গতিতে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। অবকাঠামোগত সংকট সমাধানের জন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। একটি আধুনিক মানের ক্যাম্পাস পেতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।