Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭: নাঙ্গলকোট প্রতিনিধি জামাল উদ্দিন স্বপন: কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন পুর্নবিন্যাস নিয়ে মানুষের মনের জল্পনা-কল্পনার আদৌ শেষ নেই। কবে এ জল্পনার অবসান ঘটবে সে দিকে নজর এখন সকলের। জনসাধারণের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও দৃষ্টি এখন সেদিকে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সারাদেশে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে। ২০১৩ সালে বিশাল সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত এ আসনটি পুনর্বিন্যাস হবে, নাকি আগের অবস্থানে থাকবে এনিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণের মনে ব্যাপক প্রশ্নের অবতারণা রয়েছে। নাঙ্গলকোটবাসী চায় পূর্বের নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে তাদের স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনের সীমানায় ফিরে যেতে। তারা তাদের হারানো স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনটি ফিরে পেতে উদগ্রীব হয়ে আছে।
নাঙ্গলকোট নিয়ে পূর্বে গঠিত স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ফিরে পেতে নাঙ্গলকোটের বি এন পি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভুঁইয়ার ২০১৩ সালে হাইকোর্টে দায়েরকৃত একটি রীট মামলার রায় গত ২০মার্চ ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ের কপি ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে ভোটার হিসাব অনুযায়ী কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট, সদর দক্ষিণ) আসনটিতে মোট ভোটার ছিল ৫লক্ষ ১২হাজার ৬১৭। এই বিশাল ভোটার নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনটি নোয়াখালীর সেনবাগ, ফেনীর দাগনভুঞার সীমানা হয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লার লালমাই, কোটবাড়ি এবং কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওযার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বিশাল সংসদীয় আসনটি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত হওয়ায় এক এলাকার জনগণের সাথে অন্য এলাকার জনগণের বিশাল দুরত্ব রয়েছে।
বর্তমানে সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা উত্তর, দক্ষিণ, ভুলইন উত্তর, দক্ষিণ, পেরুল উত্তর, দক্ষিণ, বেলঘর উত্তর, দক্ষিণ এবং লাকসাম উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়ন নিয়ে নবগঠিত লালমাই নামক উপজেলা ঘোষিত হয়েছে। বর্তমানে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস দিয়ে জনমনে বিভিন্ন ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, নাঙ্গলকোটের একাংশ, সদরদক্ষিণ এবং নবগঠিত লালমাই উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন হবে। আবার কেউ বলছেন, নাঙ্গলকোটের একাংশ এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন গঠিত হবে। আবার কেউ ধারণা করছেন, সদর দক্ষিণ এবং লালমাই উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন গঠিত হবে। সবার মুখে-মুখে বিষয়টি আলোচিত রয়েছে। তবে নাঙ্গলকোটবাসী চায় নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে একটি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন গঠিত হোক।
বর্তমানে সর্বশেষ ২০১৭ সালের হাল নাগাদ ভোটার তালিকায় নাঙ্গলকোটে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২ লক্ষ ৫৭হাজার ৩৭০জন। সদর দক্ষিণ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১লক্ষ ৬৯হাজার ১৪৮জন। এই দুটি উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ৪লক্ষ ২৬হাজার ৫১৮জন। অন্যদিকে, নবগঠিত লালমাই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১লক্ষ ৩১হাজার ৬১০জন। এই তিনটি উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে-৫লক্ষ ৫৮হাজার ১২৮জন। ২০১৪সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে নাঙ্গলকোট ও সদরদক্ষিণ (কুমিল্লা-১০) আসনে মোট ভোটার ছিল ৫লক্ষ ১২হাজার ৬১৭জন। এদিকে, ২০১৭সালের হাল নাগাদ ভোটার তালিকায় লাকসাম উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ১লক্ষ ৯৪হাজার ৩১৯জন। মনোহরগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার হচ্ছে ১লক্ষ ৬৯হাজার ৭৫৯জন। এই দুই উপজেলায় মোট ভোটার হচ্ছে ৩লক্ষ ৬৪হাজার ৭৮জন।
১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নাঙ্গলকোট উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা-১১ স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনা বাহিনী সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার ১টি পৌরসভা এবং ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন পুনর্গঠন করে। এতে সংসদীয় আসনের পরিধি বেড়ে যায় অনেক বেশি। আসনটির এলাকা নোয়াখালীর সেনবাগ এবং ফেনীর দাগনভুঞার শেষ সীমানা থেকে শুরু করে কুমিল্লা শহরের কাছাকাছি, লালমাই এবং কোটবাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।
২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ২০১৩সালের প্রথম দিকে আবার আসন পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ওই সময়ে নাঙ্গলকোটের বি এন পি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভুঁইয়া নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে ইতিপূর্বে গঠিত স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। নির্বাচন কমিশনের শুণানিতেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় নাঙ্গলকোটের সচেতন এলাকাবাসী তাদের স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ফিরে পাবার জন্য নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান, ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে মানব বন্ধনসহ নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরে সভা-সমাবেশের মত বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন খসড়া আসন পুনর্বিন্যাসে নাঙ্গলকোটকে নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসনের তালিকা প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশন খসড়া সীমানা পুনর্বিন্যাসের তালিকায় নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ঘোষণা করার পর তৎকালীন সদর দক্ষিণ উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নবম সংসদ নির্বাচনের সীমানায় ফিরে পাওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের করেন।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই নির্বাচন কমিশন চুড়ান্ত আসন পুনর্বিন্যাসে গিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার নাঙ্গলকোট পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে কুমিল্লা-১০ বিশাল সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করে। এতে সদর দক্ষিণ উপজেলার ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ৭৫হাজার ৩২৯জন এবং নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোটার সংখ্যা ২লক্ষ ৩৭হাজার ২৮৮জন। এই দুই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫লক্ষ ১২হাজার ৬১৭ জন । এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে নাঙ্গলকোটের বি এন পি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভুঁইয়া নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ঘোষণা চেয়ে ২০১৩ সালের ১৪ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এ নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ২২ জুলাই নির্বাচন কমিশনকে দুই সপ্তাহের কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন।
তাছাড়া তৎকালীন নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মজুমদার নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ঘোষণার দাবিতে ২০১৩সালের ২২জুলাই হাইকোর্টে আরেকটি রিট পিটিশন মামলা (৭৫৯৭/২০১৩) দায়ের করেন। ওই সময় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের চুড়ান্ত তালিকায় নাঙ্গলকোট উপজেলা এবং সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে (কুমিল্লা-১০) সংসদীয় আসন ঘোষণাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে নির্বাচন কমিশনকে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করেন হাইকোর্ট। এদিকে ওই সময়ে বর্তমান সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ২০০৮সালের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতেও হাইকোর্টে রীট করেন।
সর্বশেষ, ২০১৩ সালে নাঙ্গলকোটকে ( কুমিল্লা-১১) নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ব্যবস্থায় ফিরে পেতে বি এন পি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভুঁইয়া হাইকোর্টে যে রীট মামলা দায়ের করেছিলেন, দীর্ঘদিন পর গত ২০মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে মামলার বাদি আবদুল গফুর ভুঁইয়া জানান, রায়ের কপি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট জমা দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সাথে বিস্তারিত কথা হয়েছে।
সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে হাইকোর্টের সংক্ষিপ্ত রায় পর্যালোচনা করে জানা যায়, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পূর্বে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে কুমিল্লা-৯ এবং কুমিল্লা-১১ নিয়ে দুটি পৃথক নির্বাচনক্ষেত্র ছিল। যা বিগত পাঁচ বছর ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং কুমিল্লা-১১ এর নির্বাচনী এলাকা ছিল নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-১০ নির্বাচনীক্ষেত্র সৃষ্টি করা হয়েছিল কুমিল্লা-৯ থেকে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে যথা-বাগমারা উত্তর, বাগমারা দক্ষিণ, পেরুল উত্তর, পেরুল দক্ষিণ, ভুলইন উত্তর, ভুলইন দক্ষিণ, বেলঘর উত্তর, বেলঘর দক্ষিণ এবং কুমিল্লা-১১ অর্থ্যাৎ নাঙ্গলকোট উপজেলাসহ কুমিল্লা-১০এর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল উপরোক্ত সীমানা নির্ধারণ অনুযায়ী। ২০১১সালের আদমশুমারী অনুসারে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশের সকল নির্বাচনী এলাকাগুলোকে পুনর্গঠিত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে কুমিল্লা-১০ নির্বাচনীক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সন্তুষ্ট ছিল না। কারণ নাঙ্গলকোটের পাশ্ববর্তী উপজেলাসমুহ হচ্ছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, মনোহরগঞ্জ এবং লাকসাম উপজেলা। কিন্তু কুমিল্লা-১০ সৃষ্টি করা হয়েছিল কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা থেকে যেগুলো নাঙ্গলকোট উপজেলা থেকে দুরে রয়েছে। আবেদনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর নিকট একটি আবেদন দায়ের করেছিলেন এবং তাকে অনুরোধ করেছিলেন কুমিল্লা-১০ এর সীমানা নির্ধারণ করতে, যেমনটি ২০০৮ এর পূর্বে ছিল অর্থ্যাৎ শুধু নাঙ্গলকোট উপজেলা আবেদনকারী আবেদন বিবেচনা করে এবং নির্বাচনী ক্ষেত্রের প্রশাসনিক সুবিধা-অসুবিধা এবং স্থানিক গুরুত্ব ও জনসংখ্যা হিসেব করে বিধি মোতাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব ২০১৩সালের ৭ ফ্রেরুয়ারী সালে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলেন। খসড়াতে দেখানো হয়েছে যে, ৩০০ সংসদীয় আসনের নির্বাচনীক্ষেত্র যেখানে নির্বাচনক্ষেত্র নং ২৫৮(কুমিল্লা-১০) দেখানো হয়েছে নাঙ্গলকোট উপজেলা হিসেবে। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিত প্রতিবাদ জানায়। তারা এই প্রস্তাব উপস্থাপন করে যে, কুমিল্লা-১০ এর সীমানা নির্ধারণ না করার জন্য এবং এটিকে পূর্বের মত করে রাখতে, যেমনটি ছিল নবম সংসদ নির্বাচনের সময়।
২০১৩ সালের ৭ ফেব্রæয়ারী প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নির্বাচনী ক্ষেত্রের খসড়া সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কে আবেদনকারী কোন আপত্তি তুলেননি কারণ এটি ছিল তাদের ২০১২সালের ২২অক্টোবরের উল্লেখিত আবেদন অনুযায়ী। চেয়ারম্যানদের আপত্তি শোনার পর এবং আবেদনকারীকে কোন সুযোগ না দিয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব ২০১৩সালের ৩জুলাই নির্বাচনী ক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণ এর ভিত্তিতে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। যা ১৯৭৬সালের নির্বাচনক্ষেত্র অধ্যাদেশের সীমানা নির্ধারণ অনুসারে এবং কুমিল্লা-১০ নির্বাচনীক্ষেত্রকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে, যা ছিল ২০০৮সালের পূর্বে দুটি আলাদা নির্বাচনীক্ষেত্র।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই প্রকাশিত সরকারি প্রজ্ঞাপন এর উপর ক্ষুদ্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়ে আবেদনকারী সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে তার আবেদনটি পরিবর্তন করান এবং বর্তমান আইনটি অর্জন করেন। আইনটির বিরোধীতা করতে প্রতিবাদির পক্ষে কেউ হাজির হয়নি। আবেদনকারীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবির শুনানি, আবেদনপত্র, সংযোজনী, বিরোধীতায় শপথপত্র এবং রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য উপাদানের পর্যবেক্ষন করে এটি প্রতিয়মান হয় যে, লিখিত আবেদনপত্রের সাথে সংযোজনী এফ হিসেবে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই তারিখের কুমিল্লা-১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৫৮নং নির্বাচনক্ষেত্রের সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রকাশিত সরকারি প্রজ্ঞাপনকে আবেদনকারী চ্যালেঞ্জ করেছে। আমরা কথিত প্রজ্ঞাপন সংযোজনী এফ পর্যবেক্ষন করেছি, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২৫৮নং নির্বাচনক্ষেত্র কুমিল্লা-১০ দুটি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত হচ্ছে যথা-কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা। এই নির্বাচনী এলাকার প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি সংখ্যাগরিষ্ট একটি অখন্ড এলাকা এবং অতীতের জনসংখ্যা প্রতিবেদন অনুযায়ী দেওয়া জনসংখ্যার বিতরণ হিসেবে যথাযথ হিসেবে গণ্য করা হবে।
কমিশন এই রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করে যে ক্ষেত্রে উহা প্রয়োজনীয় মনে করতে পারবে, এইরুপ জেলা পরিষদের প্রারম্ভিক তালিকা প্রকাশ করে এইরুপ প্রতিটি সংখ্যাগরিষ্ট এলাকার অন্তর্ভুক্ত এলাকার প্রারম্ভিক তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং এইরুপ সময়ের মধ্যে আপত্তি ও পরামর্শ আহরণের নোটিশসহ নোটিশে উল্লেখ করা যেতে পারে। কমিশন উপ-ধারা (৩) এর অধীন প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকাতে এই সংশোধনী পরিবর্তন বা সংশোধন করে আপত্তি ও প্রস্তাবনা, শুনানী ও বিবেচনা করে এবং যথাযথভাবে বিবেচনা করলে, কোন দুর্ঘটনাজনিত ¯িøপ বা বাদ দেওয়ার ফলে, সৃষ্ট ক্রটিসমূহ সংশোধনের পরে সরকারি গেজেটে প্রাদেশিক নির্বাচনী এলাকার চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে, যা প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত এলাকা দেখায়। সীমাবদ্ধতার উদ্দেশ্যে, উত্তরদাতার অংশে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে এবং এর ফলে প্রজ্ঞাপিত বিজ্ঞপ্তির প্রকাশ অনুউপযুক্ত এবং ১৯৭৬সালের সংবিধানের বিধির বিধানের ৬ (২) বিধানের শর্তাবলী উল্লিখিত।
আমরা দরখাস্তকারীর মামলার ঘটনাবলী এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করেছি এবং পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী প্রযোজ্য প্রজেক্টের সাথে জড়িত থেকে যা আমরা দেখি যে, প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের অন্তর্গত গনজাগরণসহ সংখ্যাগরিষ্ট ভোট কেন্দ্রসমূহের সংহতি প্রকাশের পূর্বে উত্তরদাতারা যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল ১৯৭৬ সালের সংবিধানের বিধি বিধানের ধারা ৬ (২) এর বিধান লঙ্গন করে সেই সাথে উল্লেখিত কারণগুলির জন্য অযৌক্তিক পদ্ধতিতে প্রয়োগকৃত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে।
উভয় এলাকার জনগণের সুবিধা ও অসুবিধার সাথে-সাথে আইন সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক বিধান বিবেচনা করে উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনটি পাসের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে অযৌক্তিকতাসহ উল্লিখিত অন্যান্য কারণের একে অপরকে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা আবেদনকারীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবি দ্বারা উন্নত হিসেবে এখানে এই বিধানে আমরা যথার্থতা ও মর্ম খুঁজে পাই।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই সত্যতা অস্বীকার করে গেজেটের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত এটা সংবিধানের ২৫৮নং সংশোধন (সংযোজন এফ) এর দ্বারা বৈধ কর্তৃপক্ষের বাইরে করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং এতে কোন আইনী প্রভাব নেই। নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী এই পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।