খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৭: ইরাক ও ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এতে অন্তত তিনশ মানুষ আহত হয়েছেন।ভূমিকম্পের আঘাত ইরাকের রাজধানী বাগদাদ, প্রতিবেশী কুয়েত, তুরস্ক ও ইসরায়েলেও অনুভূত হয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানানো হয়েছে, ৭ দশমিক ৩ মাত্রার এই ভূমিকম্প দেশের উত্তরাঞ্চলের কারমানশাহ প্রদেশের ইরাক সীমান্ত এলাকায় আঘাত হেনেছে। এতে সেখানে অন্তত ১২৯ জন নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইরাকে চারজন নিহত হয়েছেন বলে কুর্দি স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। ভূমিকম্পে ইরাকের আধা-স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চলের ডারবানডিকান শহরে আঘাত আনে। সেখানে একটি শহরেই অন্তত ৩০ জনের মতো আহত হয়েছেন। শহরটি কুর্দি অঞ্চলের অন্যতম বড় সুলাইমানিয়া শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ইরানের কারমানশাহ প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর মুজতবা নিক্কারদার বিবিসিকে বলেন, ‘এখনো অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সীমান্তের ১৫ কিলোমিটার দূরের শহর শারপুল-ই-জাহাব শহরে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানান ডেপুটি গভর্নর। তিনি আরো জানান, এই এলাকাটিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাতের বেলা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ায় দুর্গত এলাকায় হেলিকপ্টার উড়ে যেতে পারেনি। অনেক স্থানে সড়কপথ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও যেতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষত, যেসব গ্রাম কিছুটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে, সেখানে দুর্গত লোকজনকে উদ্ধার ও সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ইরানের ইন্টারিয়র মন্ত্রী আবদলরেজা রাহমানি ফজলি।
ভূমিকম্পের পর পরই লোকজন আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। ইরানের কমপক্ষে আটটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর ভূমিধসের কারণে উদ্ধারকাজও ব্যাহত হচ্ছে।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে হালাবজায় আঘাত হেনেছে। এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। তবে ইরানের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ভূমিকম্পটি ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ছিল বলে জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রথমবার ভূকম্পনের পর তাঁরা ছোট ছোট আরো কয়েকবার ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। এ ঘটনায় কারমানশাহ ও ইলাম প্রদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে কুর্দি স্বাস্থ্যমন্ত্রী রিকত হামা রশিদ বলেছেন, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। স্থানীয় জেলা হাসপাতালও অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে কোনো বিদ্যুৎ নেই। তাই আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য দূরের সোয়ামানিয়া শহরে পাঠানো হচ্ছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালিহিয়া জেলা শহরের বাসিন্দা মাজিদা আমের বলছিলেন, ‘আমি বাচ্চাদের নিয়ে রাতের খাবার খেতে বসেছিলাম। হঠাৎ করেই দেখি, আমার ঘর হাওয়ায় দুলছে। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম, শক্তিশালী কোনো বোমার বিস্ফোরণ হয়তো ঘটেছে। কিন্তু পরক্ষণেই শুনতে পাই, লোকজন ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে চিৎকার করছে।’