খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার , ২৩ নভেম্বর, ২০১৭:কৃষি সেচ ও সুপেয় পানির চাহিদা মেটানোয় ক্রমশ নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। নদী বা ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারে ঝুঁকছে সরকার। পুকুর, জলাশয়, ডোবার পানি পরিশোধনের মাধ্যমে সুপেয় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় সাভারের তেঁতুলঝরা ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে দুটি ভূগর্ভস্থ বিশাল পানি ভা-ারের (অ্যাকুইফার) বা খনির সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করছে ঢাকা ওয়াসা।
ওয়াসা বলছে, হিমালয় পর্বতমালার একটি হিমবাহ থেকে চ্যানেল হয়ে এসে পানি জমা হচ্ছে এ দুই খনিতে। ভূপৃষ্ঠের ৬শ মিটার গভীরে সুপরিসরে থাকা এ উৎস থেকে নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার হারে পানি উত্তোলন করলেও আগামী ৪০ বছরে তা ফুরাবে না। বরং হিমালয়ের পানি চ্যানেল দিয়ে এসে শূন্যস্থান ভরাট করবে। অচিরেই এ খনি থেকে পানি উত্তোলন করে রাজধানীর মিরপুরে সরবরাহের কথাও ভাবছে ওয়াসা।
ওয়াসার দাবি অনুযায়ী এ অফুরন্ত ভা-ার বা ‘পানি খনি’ কতটা বাস্তবসম্মত সে বিষয়ে সন্দিহান পানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশের ভূগর্ভে দিন দিন যেভাবে পানির স্তর কমে আসছে, সেখানে নতুন করে বিশাল পানির স্তর উদ্ভাবন এবং ওয়াসার মতো সরবরাহকারী সংস্থা ভূগর্ভের পানি হুট করে উত্তোলনের মাধ্যমে কতটুকু সফলতা বয়ে আনবে, তা ভেবে দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম শাহজাহান ম-ল আমাদের সময়কে বলেন, পিদোমিটার গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার অদূরে সাভার-গাজীপুরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ইতোমধ্যে নেমে গেছে। এসব এলাকায় শ্যালো টিউবওয়েলের মাধ্যমে এখন আর পানি উত্তোলন করা যায় না, গভীর নলকূপ বসাতে হয়। টাঙ্গাইল, মধুপুর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপরের স্তরটি কর্দমাক্ত। সেখানে পানি পাওয়া যায় না। এ এলাকা যে স্তর থেকে পানি পাওয়া যায় সেটিকে বলা হয় ‘ডুপিটিলা’। ভূগর্ভের এই ডুপিটিলা স্তরের পানি উত্তোলনের বিপরীতে তা ঠিকমতো পূর্ণ না করলে স্তর নিচে নামবে এটিই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় সেখানে সুপেয় পানির বিশাল বা অফুরন্ত ভা-ার পাওয়ার বিষয়টি ওয়াসার একটা কৌশল হতে পারে। কারণ ওয়াসা ঢাকার বাইরে থেকে পানি আনতে গেলে এ ধরনের কৌশল করে থাকে। তবে তারা কিসের ভিত্তিতে বলেছে সেটি দেখা যাক।
মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে ওয়াসা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান জানান, আট বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ শিরোনামে একটি উদ্যোগ নেন। এ সময়ে ১৬০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াতে না পারলেও ৯০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য সাভারের ভাকুর্তায় একটি পানির খনি পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তাকসিম এ খান বলেন, আগামী মার্চ মাসেই সাভার ও সিঙ্গাইরের বিশাল ভা-ার থেকে মিরপুরে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেখানে প্রায় ৪০ বছর ব্যবহার করার পানি জমা আছে এবং তা এখনো আসছে অর্থাৎ ‘সঞ্চায়ন’ হচ্ছে। তাই এ দুটো খনির পানি কখনই ফুরাবে না।
তিনি বলেন, পাইপলাইন দিয়ে মিরপুরে নিয়ে আসা হবে। কারণ সেখানে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এ পানি সম্পূর্ণই খাবার উপযুক্ত। তবে এতে আয়রনের মাত্রা বেশি। সেটি দূর করার জন্য সেখানে একটি প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
তাকসিম এ খান বলেন, আগে শুষ্ক মৌসুম শুরু হলেই পানির পাম্পে সেনা মোতায়েন করতে হতো। ২০১০ সালের পর থেকে কোথাও সেনা মোতায়েন করতে হয়নি। পানির জন্য কোনো এমপিকে তাড়া খেয়ে দৌড় দিতে হয়নি।
যদিও ঢাকা ওয়াসা শুধু ঢাকা মহানগর এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকে। আর সারা দেশে খাবার বা সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। এ দুটো সংস্থা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন।
ডিপিএইচই সূত্র বলছে, সারা বছর ধরেই তারা সারা দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, উৎস, গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ওয়াসা ৬শ মিটারের মধ্যে বিশাল এ অফুরন্ত পানির আধার পেয়েছে বলে দাবি করলেও ডিপিএইচই গবেষণা করছে ১২শ মিটার গভীরে। তবে কোনো গবেষণাতেই এ ধরনের অফুরন্ত পানির উৎসের তথ্য-প্রমাণ মেলেনি।
জানতে চাইলে ডিপিএইচই মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র দে বলেন, আমাদের গবেষণায় এ ধরনের কিছু পাইনি। তবে শুনেছি ওয়াসা সাভার ও পার্শ¦বর্তী এলাকায় কাজ করছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভূগর্ভস্থ পানি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান বলেন, অ্যাকুইফার বা ভূগর্ভস্থ পানির ভা-ার সারা দেশেই রয়েছে। পাথরের উপস্থিতি থাকায় তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া সারা দেশে এ সুপেয় পানি উত্তোলনও হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে তা লবণাক্ত বা আর্সেনিকযুক্ত। নদীগুলোর নাব্যতা হারানো বা শুকিয়ে যাচ্ছে বলে এসব আধারের পানির স্তর দিন দিন কমে আসছে। তবে আলাদাভাবে এমন অফুরন্ত পানি ভা-ারের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
সূত্র : আমাদের সময়