খােলা বাজার২৪। বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭: ক্রমেই পিছিয়ে পরছে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। নিম্মমানের গ্রাহকসেবা, প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার কারণে ব্যাংকগুলো হারাচ্ছে গ্রাহক। যারা গ্রাহক হিসেবে রয়েছেন তারাও তাদের আমানত উঠিয়ে নিচ্ছে। ফলে হুমকির মাঝে রয়েছে দেশের সরকারি ব্যাংকগুলো।
অন্যদিকে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকরা তাদের সাথে লেনদেনে আকৃষ্ট হচ্ছে। ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোর তুলনায় তাদের মুনাফা ও গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)’র তথ্যমতে,তথ্যপ্রযুত্তিতে দক্ষ কর্মীর পেছনে ১ টাকা ব্যয় করলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ২৫ টাকা। এ ছাড়া অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ফলে ‘কস্ট অব ফান্ড’ ৬ টাকা থেকে কমে ২ টাকা হয়েছে। প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমে এখন বছরে গড়ে ১৭০ কোটি বার লেনদেন হচ্ছে। আর আইসিটির কারণে অনলাইনে ২০০ কোটি বারের বেশি লেনদেন হচ্ছে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ব্যাংক খাতের একজন কর্মী এখন বছরে গড়ে ১০ হাজার লেনদেন সম্পন্ন করছেন।
বিঅাইবিএম আরও জানায়, ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর একজন কর্মীর গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫ হাজারের কম। অর্থাৎ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আইসিটিতে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের জন্য তা ১৩৬ টাকার সমান উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। এর বিপরীতে প্রযুক্তিবহির্ভূত খাতে ১ টাকা খরচ করলে সেটি ৫৮ টাকার সমপরিমাণের উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসে।
একইভাবে আইসিটি বিষয়ে জ্ঞান আছে, এমন একজন কর্মীর পেছনে ১ টাকা খরচ করলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ২৫ টাকার সমান। সাধারণ একজন কর্মীর পেছনে এক টাকা খরচ করা হলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ৬ টাকা। অর্থাৎ আইসিটিতে দক্ষ একজন কর্মীর পেছনে ব্যাংকের বিনিয়োগ চার গুণ বেশি লাভজনক।
এত লাভজনক হওয়ার পরেও এখনো অনেক সরকারি ব্যাংক তার সবগুলো শাখাকে সম্পূর্ণরূপে প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। যতটুকু এসেছে তা-ও অনেক নিম্মমানের। এমন অভিযোগ গ্রাহকদের।
মনিরুজ্জামান নামের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, তিনি সোনালি ব্যাংকের মাধ্যমে তার মাসিক বেতন পেলেও সাথে সাথে তা উত্তোলন করে ইসলামী ব্যাংকে জমা রাখেন। এমন কেনো করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, সোনালী ব্যাংকের সেবা খুবই নিম্মমানের। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের সেবা খুবই উন্নত। বলতে গেলে প্রথম শ্রেণীর। তাই সেখানে টাকা রেখে সময়মত খরচ করেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, ২টি কারণে ব্যাংকগুলো প্রযুক্তিতে এগোচ্ছে না। প্রথমত, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নতুন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার ব্যর্থ হয়। তখন নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগও উঠে। ফলে কেউ দায় নিতে চাই না। দ্বিতীয়ত, এই খাতের অনেকেরই দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে। ফলে তারা নিন থেকে এগিয়ে আসেন না। তবে এটা বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোও প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছে। এটা ভালো দিক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। আমি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিলাম তাদেরকে এই কথাটা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছি। তাদের কিছু গাফেলতি আছে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেও তারা অনেক কাজ করতে পারে না। তাদেরকে এই জটিলতা থেকে মুক্ত করে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। এবং যত দ্রুত সম্ভব প্রযুক্তিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সমকক্ষ হিসেবে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে।