খােলা বাজার২৪। সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭: সারাদেশে ইটভাটা তৈরিতে চলছে চরম নৈরাজ্য। নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ইটভাটা তৈরির কারণে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অপরদিকে দিন দিন কমছে আবাদি জমি। এছাড়াও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো থেকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। ইটভাটার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে প্রশাসনের সিদ্ধান্তও মানছেন না মালিকরা। সবমিলিয়ে এ খাতে চরম নৈরাজ্যকর অবস্থা চলছে।
তথ্য ও সূত্র মতে, রাজধানীসহ সারাদেশে বৈধ প্রায় ৬ হাজার ইট ইটভাটা রয়েছে। অনুমতির বাইরে (অবৈধ) রয়েছে আরো কয়েক হাজার। এ ইটভাটা থেকে বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ইট তৈরি হয়। অধিকাংশ ইটভাটাগুলো শুষ্ক মৌসুমে চালু থাকে। বছরের অন্য সময়ে ইটভাটা বন্ধ থাকে। বিশেষ করে শহর, উপশহর, বড় বড় কলকারখানা বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি জায়গায় এবং যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ও সহজে ইট আনা-নেয়া করা যায় এবং ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে এমন এলাকা বেছে নেয় ইটভাটার মালিকরা। মূলত এ জায়গা থেকেই শুরু হয় পরিবেশ দূষণ।
এদিকে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন এবং ব্যাপকভাবে ইটভাটাগুলোতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার কারণে শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পায়। মূলত নিচু মানের জ্বালানি ও অনুপযুক্ত চিমনি ব্যবহারের কারণে ইটভাটাগুলো পরিবেশ দূষণে সহায়ক করছে। ইটভাটার চারপাশ ছড়িয়ে পড়ছে ছাই, ধুলা ও সালফার-ডাই-অক্সাইডসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস। আক্রান্ত এলাকায় এসিড বৃষ্টির মতো ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এ ছাড়া ইটভাটাগুলো শস্যাহানি, ধাতব পদার্থে মরচে সৃষ্টি, বর্ণক্ষয়, ভূমিক্ষয়, ভূমিধস ও ভূমির উর্বরতা হ্রাসে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইটভাটায় ব্যবহৃত জায়গাজমি দীর্ঘ সময় কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জমির উর্বরতাশক্তি এমনভাবে নষ্ট হয় যাতে আর কোনো ফসল হয় না এবং এই জমিতে ফসল ফলালেও ফসল সামান্য উৎপন্ন হলে ফলাফল ভালো হয় না এবং এই জমিগুলোতে উর্বরতাশক্তি আনয়ন করতে দীর্ঘকাল সময়ের প্রয়োজন হয়।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ একক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ২ লাখ ৩৮ হাজার একক। ১৯৯৭ সালে তা কমে এসে হয় ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একর এবং সর্বোপরি বর্তমানে বাংলাদেশের আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একরে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরিবেশ বিপর্যয়, কৃষি জমি ধ্বংস, প্রশাসনের অনুমতি না থাকায় কুমিল্লা সদরের ইরা ব্রিকস ফিল্ড নামে এক ইটভাটার কার্যক্রম চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। ইটভাটা তৈরীর সময় স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বনবিভাগ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র না থাকায় কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আজিজুর রহমানের আদালত এ নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু প্রশাসনের এ আদেশ না মেনে মালিক বিল্লাল অবলিলায় তার ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নে মেসার্স এসএনবি ব্রিকস নামের ইটভাটাটির একই অনিয়মের কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। কিন্তু এর মালিক শামছুল আলম আদালতের নিষেধ উপেক্ষা করে চালিয়ে যাচ্ছেন ভাটা।
পাবনার ঈশ্বরদীতে লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলের তিনটি গ্রাম জুড়ে ৫০টি ইট ভাটা। এ ইটভাটাগুলো তৈরীতেও কোন ধরনের নিয়ম মানা হয়নি। ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে স্থানীয় লোকজনের দেয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইটভাটাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু ওই পর্যন্তই, এরপর আর বন্ধ হয়নি, ইটভাটাগুলো এখনো সচল রয়েছে। এছাড়াও নাটোর, সাতক্ষিরা, পটুয়াখালি, মানিকগঞ্জ, গাজিপুরসহ অন্তত ৫০টি ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয় আদালত কিন্তু আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এখনো চলছে ইটভাটাগুলো। এক কথায় যে যেভাবে পারছে তারা চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময়.কম