Mon. May 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪ঃ মঙ্গলবার, ১৫মে, ২০১৮ঃ নরসিংদী প্রতিনিধি মোঃরাসেল মিয়াঁ : গত ৩ মে বৃহস্পতিবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে খুন হন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। সেই হত্যাকান্ডের তথ্য সংগ্রহের জন্য নরসিংদী গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও আইনজীবীদের সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, এসব খুনের বিচার না হওয়ার কারণে এমন প্রবণতা বাড়ছেই  

নরসিংদীর শিবপুরের সাবেক সাংসদ রবিউল আলম ওরফে কিরণ খাঁকে ১৯৮৬ সালের ২৮ এপ্রিল রাস্তায় জনসম্মুখে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রভাবশালী এই রাজনীতিক এবং প্রতিহিংসামমূলক হত্যার বিচার পেতে তাঁর পরিবারকে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হয়। ১৮ বছর আইনি লড়াইয়ের পর ওই মামলায় একজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। তবে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগেই দন্ড পাওয়া ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

কিরণ খাঁর পরিবার তবু একটা সান্বÍনা পেয়েছিল। কিন্তু নরসিংদীর অধিকাংশ খুন হওয়া রাজনৈতিক নেতাদের পরিবারগুলো বিচার না পাওয়ার কথা বলেছেন। তারই একটি জলন্ত উদাহরণ ২০১১ সালে নরসিংদীর মেয়র লোকমান হোসেনের মৃত্যু। 

স্বাধীনতার পর নরসিংদীতে কতজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন, তার সংখ্যা পাওয়া গেল না। তবে অনুমান করা যায় চার হাজার। তবে আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নরসিংদীতে ২০১৭ থেকে ২০১৮ ইং পর্যন্ত মোট ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

নরসিংদীর আইনজীবী কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতা ও অসাধুতার কারণে বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে এ ধরণের খুন বাড়ছে ।
হানাহানির ইতিবৃত্ত

আশির দশকে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া সাংসদ কিরণ খাঁ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, বাকশাল গঠনের পরে জেলার যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। তাঁর ভাই হারুণ খাঁ এখন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বলেন, তাঁর ভাইয়ের হত্যাকান্ডের মামলা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছিল সিআইডি। সেখানে তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এরপর পরিবার নারাজি দেয়। একপর্যায়ে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়। শেষ পর্যন্ত ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। চূড়ান্ত বিচারে ১১ জন খালাস পান। একজনের ফাঁসির সাজা হয়। তিনি অবশ্য ফাঁসি কার্যকরের আগেই মারা যান।

২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদী পৌরসভার মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভেতরে প্রকাশ্যে এবং পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই হত্যাকান্ড সারা দেশে আলোড়ন তোলে। ওই মামলার আসামিরাও সবাই জামিনে।

২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদের ছয়বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক সরকার খুন হন
গত বছরের ৬ মে যুবলীগ কর্মী ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রাহাত সরকারের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। 

চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্থানীয় যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হাসানের লাশ উদ্ধার করা হয়। নরসিংদী পৌরসভার উল্টো পাশের একটি ভবনের ১৬ তলায় তাঁকে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ অন্য জায়গায় ফেলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি যত প্রভাবশালীই হোক, প্রকৃত দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবেই এসব অপরাধ কমবে।’ তিনি বলেন, শিবপুরের সাংসদ কিরণ খাঁ, পৌর মেয়র লোকমান হোসেন কিংবা বাঁশগাড়ীর সিরাজুল চেয়ারম্যানসহ এসব হত্যাকান্ডের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আধিপত্য বিস্তারের জন্য হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবেই এর প্রতিকার করতে হবে।