খোলাবাজার২৪ শুক্রবার ২৭ জুলাই, ২০১৮ : নীল-সাদার জগতে প্রতিনিয়ত গড়ছে নতুন সম্পর্ক। বিচ্ছেদ হচ্ছে কখনও। আবার কোনো কোনো নাম নীল থেকে কালো হয়ে যাচ্ছে চিরতরে। ভাঙছে-গড়ছে, জ্বলছে-নিভছে। চলছে তো চলছেই। অনুভূতি সাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে। দুঃখ-বেদনার প্রকাশ হচ্ছে আলতো ছোঁয়ায়। টুক করে ক্লিক করলে কখনও হেসে ওঠা যাচ্ছে, কখনও প্রকাশ করা যাচ্ছে ক্রোধ। তবে সহজিয়া এসব প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমরা প্রবেশ করে ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছি না তো! খুব বেশি কিছু স্থায়ী হতে পারছে না আমাদের মননে। বন্ধুর বাবার মৃত্যু সংবাদে শোকাতুর হতে না হতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠছি সস্তা কোনো রসিকতা দেখে। আপনজনের সাফল্যে বিমোহিত হয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করতে না করতেই রেগে যাচ্ছি অন্যকিছু দেখে। মোটা দাগে ভার্চুয়ালিটির অপকীর্তি বয়ান করা খুব সহজ হলেও আমার করা উচিত হবে না। কারণ, এর কিছুটা তো আমার ওপরেও বর্তায়। আবেগ-অনুভূতির মিশ্র এই সময়ে নিজেকে প্রকাশ করার সুতীব্র বাসনা যখন আমার ভেতর টনটন করছিল, ঠিক তখনকার একদিন আমি কথা বললাম এক নারীর সঙ্গে। বয়সে বড়। ভূয়সী প্রশংসায় ভাসালেন আমাকে। আমি ভাসলাম এবং ভাসতেই থাকলাম। কথাবার্তা দীর্ঘতর হতে লাগল দিনান্তরে। প্রতিদিনকার মতোই আমি এক রাতে কথার ইতি টেনে ঘুমোতে গেলাম। সেদিন রাতেও তুমুল কথা হয়েছিল আমাদের। কিছু অসমাপ্ত কথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমরা। পরদিন ঠিকঠাক আমি উঠলেও সেই নারী আর উঠল না। একদিন, দুইদিন, তিনদিন…। নামের পাশে সবুজ রঙ দেখার জন্য আকুপাকু করতে লাগল আমার মন। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না অবশ্য। সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই শুনলাম সেই নারী ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন বছরখানেক। ক্যামো দেওয়ার পর যন্ত্রণাময় সময় পার করতেন ফেসবুকে এসে। কখনও বা কোনোদিন কিছুই বলেননি ফেসবুক বন্ধুদের। শেষ সময়টাতে অভিনয় করে গেছেন ভালো থাকবার। প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন পুরো ফেসবুকবাসীর। এ ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না তার। এ শহরের কোথায় তিনি থাকবেন বা আদৌ থাকতেন কি-না! কেমন ছিলেন তিনি? কিচ্ছুই জানি না আমি। তবুও মাঝে মধ্যে আমার মনে পড়ে তার কথা। খুব মনে পড়ে। কারও নামের পাশে সবুজ বাতি না জ্বললে মনে পড়ে। তীব্র যন্ত্রণা ধরে মননে-মস্তিস্কে। তারপর যন্ত্রণা ভুলতে ফেসবুকে সস্তাদরে নিজেকে বিকিয়ে দিই। যেমনটা বিকিয়েছিলেন তিনি।