খোলাবাজার২৪, রবিবার,১৮ নভেম্বর২০১৮ঃ আধুনিক বিশ্বে প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে। অনেক সময় দেখা যায় এককভাবেই হোক আর বড় একটা অংশই হোক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে বঞ্চিতরা অধিকার বলেই বলীয়ান হয়ে দাবী-দাওয়া তুলে ধরে এবং অদায়ও করে। দাবী-দাওয়াগুলো এককভাবে সাধারণত: আদায় হয় না। সংঘবদ্ধ হয়ে গোষ্ঠী, সংস্থা বা দলের ভিত্তিতে অধিকারগুলো দাবী-দাওয়ার মাধ্যমে তুলে ধরে আদায় করা হয়। দাবী-দাওয়া পূরণ হলেই আসে বিজয় এবং দেখা যায় শান্তি-শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা, সহবস্থান।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়-মানুষ তার অধিকার কতোটুকু পায়? নিজ ঘরে বসবাস করা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু মানুষ কি নিজ ঘরে নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে? নিজ ঘর, অফিস-আদালত, পথে-ঘাটে, বাজারে, চলতে-ফিরতে কোথাও মানুষ নিজেকে নিরাপদবোধ ভাবে না। না জানি কখন হতে হয় গুম,অপহরণ, লাঞ্ছনা,অত্যাচারিত,নিপীড়নের স্বীকার। বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে সত্য অবলম্বনে বিবেকের তাড়নায় হলেও কেউ কিছু বলতে গেলে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে তাদের নিজেদের করা আইন এবং সে আইনগত দিকের কথা বলে ভোটারবিহীন-প্রার্থীবিহীন জবর-দখলকারী এই ক্ষমতাসীনদের দ্বারা হতে হয় অপমানিত, লাঞ্ছিত। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোথাও বস্তুনিষ্ঠের ভিত্তিতে সমালোচনা করলে আওয়ামী জোট ক্ষমতাসীনদের কটু, জঘন্য আক্রোসে পড়তে হয়-তাদের ভাষায় হতে হয় রাজাকার, হতে হয় স্বাধীনতা বিরোধী। জনগণ এসব দেখে-শুনে-ভাবে এবং বলেও চুন থেকে পান খসানোর মতো ভিত্তিগতভাবে একটু সমালোচনা করলেই যে ওরা রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী বলে অথচ ওদের আত্মীয়-স্বজন, সংগঠন বা দলেই রয়েছে ভূরি ভূরি রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী।………… তাই দেখা যায় মানুষ যেনো অসহায়। ন্যায্যতার ভিত্তিতেও কিছু বলতে-করতে গেলে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাদের পিছনে পুলিশ লেলিয়ে দেয়-মামলা দেয়, হেনেস্তার স্বীকার হতে হয়। অথচ মানুষের কথা বলার কতো কিছু আছে-কয়লা উধাও, ব্যাংকের স্বর্ণ উধাও, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে রিজার্ভ লুট, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেংকারী, বিডিআর হত্যা, বিশ্বজিত হত্যা, নারায়নগঞ্জের সাত খুন, আওয়ামী ক্যাডার ও দোসরদের দ্বারা খাদিজা-তনুদের শ্লীনহীনতা, ধর্ষণ, খুন ইত্যাদি। এগুলোকেও ছাপিয়ে আওয়ামী জোট ক্ষমতাসীনরা অপহরণ করেছেন গণতন্ত্রায়ন তথা মানুষের ভোটের অধিকার। বর্তমান আওয়ামী জোট ক্ষমতাসীনদের সময় মানুষ তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন না। ভোটের আগেই আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের চামচা, সান্ডা-পান্ডা-গুন্ডারা ভয়-ভীতি দেখায়, ব্যালটে তাদের প্রতীকে ছিল মেরে ভরে রাখে এবং ভোটের দিনও জাল ভোট দিয়ে নিজেদের অনুকুলে ছিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরায়। সাধরণ জনগণ ভোট দিতে গেলে ভোট কেন্দ্রের সামনের ঐসব আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের চামচা, সান্ডা-পান্ডা-গুন্ডারা লগি-বৈঠা হাতে বসে থাকে আর বলে-আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে-আর ভোট দিতে হবে না-বাড়ী যান। এতে জনতা ‘নিজের ভোট নিজে দিবে’ এই সোচ্চার হলে-আওয়ামী পুলিশি বাহিনী তাদের হেনেস্তা করে বা সরিয়ে দেয়, পুলিশিবাহিনী সাথে অধিকার বলে বলিয়ান জনতার সোচ্চার বা রুদ্রতার মাঝে ক্ষমতাসীনদের সৃষ্টি হেলমেটবাহিনী সশস্ত্রভাবে এসে নির্বিচারে লাঠিচার্জ, গুলিবর্ষণ করে; পুলিশ-হেলমেটবাহিনী মিলে জোরপূর্বক সরিয়ে দেয় নয়তো অপহরণ করে নিয়ে যায়। রাজশাহী, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দেখা গেল রাজশাহীতে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করেছে-আর ২ দিন পর পাওয়া যায় পাবনা জেলখানায়-আসামী করা হয় দু’বছর আগের এক অজ্ঞাত মামলায়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ভোটের সময় প্রশাসনের পরিচয় বা আইডি দেখিয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে আসা হয় টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহে-আশ্চর্য এসব ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক সাংঘর্ষিক। বিরোধী দলের এজন্টেদের আগের রাতেই হুমকি-ধূমকি, ভয়-ভীতি দেখানো হয়-অত্যাচারিত করা হয়, বিনা অপরাধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়, রিমান্ডে নেওয়া হয়। দেখা যায় কেন্দ্রে ১০০% এর বেশী ভোট পরে। আবার না বালকরা লাইনে দাড়িয়ে একর পর এক ভোট দিয়ে যায়-মিডিয়া জিজ্ঞাসা করলে বলে-বড় ভাইয়েরা এসে ভোট দিতে বলছে। মৃত ব্যক্তিও কোন অলৌকিক ক্ষমতায় ভোট দিয়ে যায় অথার্ৎ মারা গেলেও তার ভোট আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের চামচা, সান্ডা-পান্ডা-গুন্ডারা নিজেরা ছিল মেরে নেয় । এই হচ্ছে গণতন্ত্রের মানস কন্যার গণতন্ত্র ? না-কি……………..? এতো কিছুর পরেও যদি কোথাও বিরোধী দলের বা জোটের কেউ বিজয় লাভ করে তখন আওয়ামী জোট সরকার তার নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করিয়ে জেলে রাখে-কাজ করতে দেয় না। জনগণের অধিকার আর রাজনৈতিক এসব অধিকার নিয়ে বিরোধী দল বিএনপি বা এদের জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সম্প্রতি ৭ দফা ও ১১ টি লক্ষ্য প্রকাশ করেছেন তা নিম্নরূপ-
৭ দফাসমূহ:
১.অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
২.গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুন:গঠন ও নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার ব্যক্তিদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যাস্ত করতে হবে।
৬.নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনাস্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশে কোন প্রকার বিধি নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের উপর যে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চুড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোন ধরনের নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
১১ লক্ষ্যসমূহ:
১.মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনাভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিদ্যমান স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান করে সুশাসন, ন্যায়ভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা। এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসান কল্পে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনায়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা।
২. ৭০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের যুগোপযোগী সংশোধন করা। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদানের জন্য সাংবিধানিক কমিশন ও সাংবিধানিক কোর্ট গঠন করা।
৩.বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা।
৪.দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা, দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমন।
৫.দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুব সমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কোটা সংস্কার করা।
৬.সকল নাগরিকের জান-মালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিধান করা। কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারী অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
৭.জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা।
৮.রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বন্টন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূরীকরণ ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। নিম্ন আয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা এবং দ্রব্যমূল্যের সাথে সংগতিপূর্ণ বেতন-মজুরী কাঠামো নির্ধারণ করা।
৯. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যমত গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক, সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। কোন জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া।
১০.‘সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সৎ প্রতিবেশীসূলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিত্বে ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সর্ম্পক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১১.বিশে^র সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুর্নাবাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষাবাহিনীর আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, প্রযুক্তি ও সমর সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।
উপরে উল্লেখিত এসব দফা বা লক্ষ্য নিয়ে কথা বললে দেওয়া হয় তাদের নামে ভৌতিক মামলা। মামলা দিতে দিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার এতটাই অন্ধ হয়ে গেছে যে, ঘটনা না ঘটলেও মামলা হয়-গ্রেফতারের অবিরাম মহোৎসবে চলমান…….। এইতো দেখা গেল ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা তো দুরের কথা, ঘটনা ঘটেই নি অথচ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ একাধিক শীর্ষ নেতাদের নামে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়ে গেল। কতো শতো মাইল দুরে পবিত্র মক্কা শরিফে আল্লাহর বান্দা গেছেন হজ¦ পালন করতে-তাকে খেতে হয়েছে নাশকতার মামলা-প্যারালাইজড রোগী বিছানা থেকে উঠতে পারেন না-তাকে বানানো হয়েছে ককটেল ছোড়া বা ফাটানোর মামলার আসামী, রোগী আইসিইউতে প্রাণ যায় যায়-তার নামেও হয় ককটেল বিস্ফোরণ মামলা। তাই জনগণ ভাবছে আজগুবি বা ভৌতিকের একটা সীমা আছে-আওয়ামী জোট সরকারের এমন ভৌতিক মামলা দায়ের আর জ্ঞানর কাছে জি¦ন-পরী-ভূতরা যেনো লজ্জা পেয়ে লুকাবে বা দেশ ছেড়ে পালাবে।
জনগণের অধিকার, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা নিয়ে কথা বলায় মিথ্যা, ভূয়া, মামলায় সরকার গণতন্ত্রেও মা (গণতন্ত্রের আপোসহীন লড়াইয়ের জন্য জনগণ কর্তৃক উপাধি) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার ভয়ে ভীত হয়ে;জবর-দখল ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছেন-জামিন পেলেও জামিন না দিয়ে অন্যান্য মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী দীর্ঘায়িত করছেন।…………..জনগণ বুঝতে পেরেছে এখানে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মিথ্যা, ভুয়া, সাজানো মামলায় পরিকল্পিতভাবে প্রহসনের রায় দেওয়া হয়েছে-যা ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসা-জিঘাংসার প্রতিফলনও। জনগণ এসব জারি-জুড়ি বুঝতে পেরেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে মানুষের অধিকার আদায়ে, শান্তি-শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা বজায়ে দাবীগুলো যোক্তিক। বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেনো সাধারণ মানুষের কথাগুলোই তুলে ধরেছেন তাদের দাবী বা লক্ষ্যের মধ্যে। এতে করে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাড়িয়ে উপযুক্ত কাজ করেছেন। অতএব বুঝাই যাচ্ছে সাধারণ মানুষের অধিকার সম্বলিত এসব দাবী ও লক্ষ্যগুলো ১০০% যৌক্তিক-আর এতে সাধারণ মানুষের পুরো সমর্থন আছে। সাধারণ মানুষের অধিকার সম্বলিত এসব দাবীগুলো নিয়ে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’রা বিপুল জনসমর্থন সত্ত্বেও যেনো লাইট-লাইমে না আসতে পারে তার জন্য ক্ষমতাসীনরা শুরু করে দিয়েছেন ভৌতিক বা আজগুবি মামলা-যা সমাজে হাস্যকরে পরিনত হয়েছে। কেননা, দু’বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির নামেও দেখা গেছে মামলা হয়েছে। ঘটনাগুলো কতোটা আজগুবি বা ভৌতিক..? সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে জোরপূর্বক বিদেশ পাঠানোর আগে ক্যান্সার হয়েছে বলে সরকারের মন্ত্রী-এমপি-চ্যালা-চামুন্ডারা বলা শুরু করেছিল। অথচ প্রবল-প্রকট চাপের মুখে এসকে সিনহার বিদেশ যাওয়া আজ কতো দিন হলো তার কোন ক্যান্সার তো দুরের কথা অসুস্থতাও দেখা যায়নি। এতে জনগণ বুঝতে পেরেছে আওয়ামী জোট সরকার নিজ হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে কতো নির্লজ্জ, বেহায়া, বেশরম, বেলল্লে হয়ে কাজ করে। জনগণ এও গভীরভাবে বুঝতে পেরেছে-প্রতিহিংসা, জিঘাংসার বশঃবর্তী হয়ে নিজ হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতেই নিয়ম-নীতির বিসর্জন দিয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অযাথাই মিথ্যা মামলায় আগেই পরিকল্পিত,নিধারিত প্রহসনের রায় দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছেন। এর ফলে বেগম খালেদা জিয়া আজ শুধু একটা দলের নেত্রীই না। তিনি আজ একটি সংস্থায় পরিনত হয়েছেন। দেশনেত্রী থেকে দেশমাতা,গণতন্ত্রে মাতায় পরিনত হয়েছেন-যা সর্বজনবিদিত সার্বজনীন-সর্বজনীন।………….. তার দলের নেতৃবৃন্দরা তাকে (বেগম খালেদা জিয়া) বন্দী করার পর জনসম্পৃক্ততামূলক একের পর এক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন-জনকল্যাণ তথা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠায় বেগম খালেদা জিয়ার কাজকে নিষ্ঠার সাথে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব কাজে বাধা দানের জন্য আওয়ামী জোট সরকার একর পর এক দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীদের নামে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন, গেফতার করছেন-যা আজগুবি বা ভৌতিক। এক তথ্য সুত্রে দেখা যায় চলতি ২০১৮ সালে ০১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে প্রায় সাড়ে চার হাজার ভুতুরে মামলা হয় আর এসব ভুতুরে মামলায় আজগুবিভাবে জ্ঞাত-অজ্ঞাত আসামী প্রায় তিন লক্ষ্যের উপরে। সব মিলিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে প্রায় ৮০ হাজার মামলা দায়ের হয় আর আসামী প্রায় সাড়ে চার লক্ষ। আজ আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সব জনতা বুঝতে পেরেছেন জনকল্যাণ তথা মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী বা কান্ডারীর ভূমিকা পালন করতে গিয়েই আজ বেগম খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা-জিঘাংসার লালসের স্বীকার হয়েছেন। আর বেগম খালেদা জিয়ার চলমান কাজ সমাপ্ত করে চুড়ান্ত ফলাফল আনায়নে যখন জনসমর্থনমূলক দফা ও লক্ষ্যগুলো তুলে ধরেছে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তখন দেশব্যাপী শুরু হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে ভৌতিক-আজগুবি মামলা-গ্রেফতার, জেল-জুলুম, রিমান্ড। দেশব্যাপী তাই হুঁ হুঁ করে রেড়েই চলছে বিএনপি’র জনসমর্থন-যা আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় হবে অবশ্যম্ভাবী। জনসমর্থনমূলক যৌক্তিক দাবীর পিছনে সরকার যে ভৌতিক মামলাগুলো দিচ্ছেন এতে বিএনপি’র দিকে গণজোয়ার দিনকে দিন এতই বেড়ে যাচ্ছে যে, বিজয় বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সময়ের ব্যাপার যদি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়-প্রাপ্ত ভোটের সঠিক হিসাবের প্রতিফলন বা ঘোষণাও ঠিক থাকে। অর্থাৎ সার্বিক ফলাফল এসে দাড়াবে যৌক্তিক দাবী+ভৌতিক মামলা=বিজয়।
লেখক: মোঃ মিজানুর রহমান,সাংবাদিক ও কলামিস্ট