Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খোলা বাজার ২৪,সোমবার,২৬ নভেম্বর ২০১৮ঃ সিইসি নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা, গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা সিইসির প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। ওনার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সে কারণেই আমরা সিইসি কেএম নুরুল হুদার পরিবর্তন দাবি করছি।

রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তিন তলার হলরুমে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ থেকে কয়েক নেতার গণফোরামে যোগদান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে দেশের প্রশাসন ও পুলিশ চালানোর কথা। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ইসি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সরকারের আদিষ্ট হয়ে ইসির কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তা শুধু সংবিধান ভঙ্গই হবে না তা হবে রীতিমতো সংবিধান লঙ্ঘন।

সিইসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, আপনি একজন বয়স্ক মানুষ। সিনিয়র মানুষ। আপনার কাজে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি নাই। আপনার কাজের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মতামত পরিবর্তনও করতে পারিনি। সুতরাং আগে যাই করেছেন, আজকে থেকে আপনি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখুন।

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ইসির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিইসিকে আমরা বলেছি, আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখুন। নিরপেক্ষতাই এখানে পূর্ব শর্ত। সিইসিকে আমি আরো বলব— আপনি নিজে কী এগুলো করছেন, না কী কারো আদেশে এসব করছেন? মনে রাখবেন, কারো আদেশে আদিষ্ট হয়ে কাজ করা শুধু অপরাধই নয়, রীতিমত সংবিধান লঙ্ঘন। আপনি ইতিহাসে সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, এই বিষয়ে বসা হচ্ছে। যে প্রার্থী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, সেই রকম প্রার্থী আমরা দেব। সেটা আগামী ২ থেকে ৩ দিনের ভেতর জানতে পারবেন।

আসন বণ্টন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে কী না, সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে হেসে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান এ নেতা বলেন, দূরত্বও তৈরি হতে পারে আবার খুব কাছাকাছি চলে আসতে পারে। আমরা দেশে গণতন্ত্র ও একটি সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্য গড়েছি। আমরা ইতিবাচক মন নিয়ে নিয়মিত বসছি। আশা করি, সব ঠিকঠাক হবে।

নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ধর-পাকড় বন্ধ করতে হবে। এটা তো সুষ্ঠু পরিবেশ না। সুতরাং সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য গ্রেফতার বন্ধ হওয়া দরকার।

এর আগে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, গণভবন, মন্ত্রীদের বাসভবনে নির্বাচনী কাজ করা হচ্ছে। যা আচরণবিধির (১৪(১), (১৪)(২) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সুব্রত চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন দেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের পুরোপুরি কর্তৃত্বের মধ্যে থাকলেও আজ অবধি প্রসাশনিক কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আইন বহির্ভূতভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী বিরোধীপক্ষের বিরুদ্ধে হাজারো হামলা-মামলা ও গ্রেফতার-তল্লাশি অব্যাহত রেখেছে। এমনকি নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদেরও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারি দলের প্রার্থী ও মন্ত্রীরা দাপটের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার ও ভোটারদের কাছে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন তাদের প্রটোকলসহ সার্বিক সহযোগিতা করছে। আর বিরোধীদলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো কাজ করা হচ্ছে। কর্মীদের সঙ্গে নিজ এলাকায় বৈঠক পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না।

এর আগে গণফোরামে যোগদান দেয়া রেজা কিবরিয়া এবং কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলন শেষে ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আনুষ্ঠানিকভাবে গণফোরামে যোগ দেন। এ যোগদান অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক মন্ত্রী একে খন্দকারের আসার কথা থাকলেও তিনি আসেননি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, ঐক্যফ্রন্ট নেতা সাবেক ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহাসিন মন্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।