Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements


খােলাবাজার২৪,বুধবার,২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ঃ  ভোটের মাঠে সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘অনভিপ্রেত আচরণ’ না করার পরামর্শ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

বুধবার এক লিখিত বার্তায় তিনি বলেছেন, ভোটে যারাই জয়ী হোক, দেশের মানুষ যেন পরাজিত না হয়।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কমিশনের অপর সদস্যদের সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে আলোচিত এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “জাতীয় নির্বাচনে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।

“স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর একটি সহিংসতামুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না করতে পারলে এই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না।”

ভোটের তিন দিন আগে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে ‘আমার বার্তা’ নামে এ বিবৃতি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

নির্বাচন ভবনে নিজের কক্ষে বসে লিখিত বার্তাটি পড়ে শোনালেও সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রশ্ন নিতে রাজি হননি।

তিনি বলেন, নির্বাচন কেবল অংশগ্রহণমূলক হলে হয় না, নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আইনানুগ’ হতে হয়।

“নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যিনি বা যারাই জয়লাভ করুন, দেশের মানুষ যেন পরাজিত না হয়।”

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার শুরুর পর প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনী সংঘাতে কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ভোটের প্রচারে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন প্রার্থী আহত হয়েছেন গত দুই সপ্তাহে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর এবং ভোটের প্রচারে পেট্রোল বোমা ছোড়ার মত ঘটনাও ঘটেছে।

বিএনপি নেতারা এসব ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পাল্টা অভিযোগ করেছেন।

এ পরিস্থিতি ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নে দিন দশেক আগে সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে প্রকাশ্যেই মতবিরোধে জড়ান মাহবুব তালুকদার।  

সবার জন্য সমান সুযোগ হয়নি- মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্য তার ‘ব্যক্তিগত ও অসত্য’ বলে উড়িয়ে দেন নূরুল হুদা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে মাহবুব তালুকদার সে সময় বলেন, সিইসি অস্তিত্বে আঘাত করেছেন।

নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগ জানাতে মঙ্গলবার কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল ঐক্যফ্রন্ট। কিন্তু সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে কামালের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর বৈঠক শেষ না করেই বেরিয়ে আসেন তারা।

ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দুঃখের কাহিনী শোনাচ্ছি সিইসিকে, কিন্তু সিইসি পুলিশকে ডিফেন্ড করছেন, যেন মিথ্যা কথা বলতে গেছি আমরা। সিইসি বারবার বলছেন- আমাকে দেখান; আমাকে দেখান। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় পুলিশি নির্যাতনের কথা কামাল সাহেব বলছেন, আর সিইসি বলছেন- আমাকে দেখান।”

তার পরদিন সাংবাদিকদের ডেকে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে নিজের বার্তা তুলে ধরলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তবে আগের দিনের বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “অতি উৎসাহী হয়ে কোনো অনভিপ্রেত আচরণ করবেন না। … আপনারা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। প্রত্যেকের প্রতি সম আচরণ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন আপনাদের কর্তব্য। নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকুন। নিজেদের পোষাকের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করুন।”

আর রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “জাতির ক্রান্তিকালে আপনারা এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন। বিবেক সমুন্নত রেখে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আইন অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। কোনো কলুষিত নির্বাচনের দায় জাতি বহন করতে পারে না।”

লিখিত বিবৃতি ভোটারদের ‘নির্ভয়ে’ কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাহবুব তালুকদার।

তিনি বলেন, “আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিন। ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। আপনার একটি ভোট গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। মনে রাখবেন, এবারের নির্বাচন আমাদের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন আগামী প্রজন্ম ও আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের নির্বাচন।”