খােলাবাজার ২৪, বৃহস্পতিবার, ১৬মে ২০১৯ঃ তর্কশাস্ত্রের তৈলাধার পাত্র না পাত্রাধার তৈল অথবা ডিম আগে না মুরগি আগে এ প্রশ্নের সমাধান না হলেও গরু মেরে জুতা দান, না জুতা মেরে গরু দান এর সমাধান রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য দুটোই সত্য। কেননা গরু মেরে পরে তাকে জুতা দান যেমন সম্ভব, তেমনি জুতা মেরে পরে তাকে গরু দান করাও সম্ভব। বাংলা ব্যাকরণে রচনা, বিরচন, প্রবাদ-প্রবচন এবং বাগধারা অংশে এ প্রবাদ দুটোই রযেছে।
জুতা মেরে গরু দান-এর অর্থ দেয়া হয়েছে— প্রথমে অপমান করে পরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা; ড. শাহ জাহান মনির-এর বাংলা ব্যাকরণ বইটিতে গরু মেরে জুতো দান-এর অর্থ দেওয়া হয়েছে— কারো যথেষ্ট ক্ষতি করে পরে তার সামান্য উপকার করা। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এ দুটো অর্থ দুটো দিক থেকেই ঠিক। বিষয়টা অবশ্য এসেছে এভাবে— জনৈক ধূর্ত মুচি কোনো এক ব্রাহ্মণের একটি গরু মেরে তার চামড়া তুলে নেয়। পরে জানাজানি হয়ে গেলে মুচি ঐ চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে ব্রাহ্মণকে উপহার দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। এ থেকেই প্রবাদটির প্রচলন। দয়ালু ব্রাহ্মণ অবশ্য মুচিকে ক্ষমা করে থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে এত বড় সর্বনাশ করে সামান্য ক্ষতিপূরণ করলে তা কারো পক্ষে মেনে নেবার কথা নয়।
সনাতন ধর্মে শ্রাদ্ধে গরু দান শ্রেষ্ঠ। পরের স্তরে অন্ন বস্ত্র জল। ভূমি দান এখন হয় না বললেই চলে। তাই গরু দানের প্রসঙ্গ ওঠে দানক্ষেত্রে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কাউকে জুতা মারা কেবল প্রহার করা নয়— রীতিমত অপমান করা। তাই কাউকে জুতা মেরে পরে তার ক্ষতিপূরণ বাবদ গরু দান করলেও কি অপমানের কালিমা পুরোপুরি মুছে যায়? এক্ষেত্রে এরই অনুকরণে কাউকে প্রথমে অপমান করে পরে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার বাগধারাটি এই জুতা মেরে গরু দান।
“তুই এই রকম গরু মেরে জুতা দান বা জুতা মেরে গরু দান অনেক ভারই করেছিস! তাই আর গরু মেরে জুতা দান বা জুতা মেরে গরু দান করার আর দরকার নেই তুই তোর মতন করেই ভালো থাক। আর গরু মেরে জুতা দান বা জুতা মেরে গরু দান করতে আসিসনা”
গরু মেরে জুতা দান প্রবাদটির আরো বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় ক্ষুদ্র কিছু করার জন্য ব্যাপক ক্ষতিকারক আয়োজন। যেমন রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতায় বর্ণিত রানীর শীতের দিনে স্নান সেরে শীত নিবারণ কল্পে গরিব পল্লিবাসীদের ঘরে আগুন লাগিয়ে আগুন তাপানো। এর ক্ষতিপূরণে মহারানী যতই যুক্তি দেখান— সে নিছক অহংকার ছাড়া কিছুই নয়। তাই বৃহত্ ক্ষতি করে পরে সামান্য ক্ষতিপূরণ করার ব্যাপারেই প্রবাদটি প্রযোজ্য। সাধারণ্যে জুতা মেরে গরু দান নাকি গরু মেরে জুতা দান— সেটি নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।