Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলাবাজার ২৪, মঙ্গলবার, ২৪সেপ্টেম্বর, ২০১৯ঃ গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এমএসসি গণিত বিভাগের ছাত্র মো. আল গালিব।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এক স্বৈরাচারী ভিসির বিরুদ্ধে যার নৈতিক স্থলন চরম পর্যায়ে, পরিপূর্ণ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত শিক্ষার শত্রু খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে, তার বন্দী জিঞ্জির থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন করছি। আজ আমরা তার পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরছি-

১. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই আড়াই কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে, যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এখানে তিনি চরমভাবে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছেন।

২. বিগত বিভিন্ন সময়ে যে কোনও তুচ্ছ বিষয়ে যথেচ্ছাভাবে শিক্ষার্থীদের শোকাজ করা, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ (যা ইতিমধ্যে আপনারা প্রচার) এবং অন্যায়ভাবে ৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

তুচ্ছ বিষয়কে অভিভাবকদের ডেকে এনে ঘোর আপমান ও গালিগালাজ করে থাকেন। যা সহ্য করতে না পেরে অকারণে আত্মহুতি দিয়েছেন মেধাবী শিক্ষার্থী অর্ঘ বিশ্বাস। যাকে আমরা পরোক্ষ হত্যা বলে মনে করি।

৪. ভিসি কোটার নামে ভর্তি বাণিজ্য ও জালিয়াতি করছে। এমনও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যেখানে তিনি ভর্তি পরীক্ষা না দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়েছেন। যা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আপনাদের মাধ্যমে এর সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

৫. মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি ও সেমিস্টার ফি এবং বছর বছর অন্যায়ভাবে ভর্তি ফি বাড়িয়ে চলেছেন, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণের প্রধান অন্তরায়।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কাজে তীব্র অনীহা স্পষ্ট। প্রমাণস্বরূপ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও স্থয়ী শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি।

৭. বৃক্ষরোপণের নামে অগণিত টাকা আত্মসাৎ। প্রমাণস্বরূপ জয় বাংলা চত্বরের বনসাই এবং ২ কোটি টাকার গোবর বাণিজ্য।

৮. ভিসি আবাসিক ভবনে বিউটি পার্লার বানিয়ে নারীদের যৌন হেনস্থা এবং অনৈতিক কার্যকলাপের রমরমা বাণিজ্য।

৯. চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, যেখানে ঝিলিক নামের নারীকে অন্ত:স্বত্ত্বা করা হয়েছে।

১০. বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সবসময় খাটো করে দেখেছেন, এমনকি ১৫ আগস্ট সঠিকভাবে পালন করা হয় না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।

১১. এর আগের কর্মস্থল বাংলাদেশি কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ে থাকাকালে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক প্যানেল সোনালী দলের হয়ে সক্রিয় থেকেছেন। যার ফল স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর সঠিক আদর্শ এখানে বাস্তবায়িত হয় না।

১২, সব প্রকার লেনদেনে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত তিনি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক হিসাব দেখলেই বুঝা যায়। এসবের কিছু দালিলিক প্রমাণ আমরা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব।

১৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিষয়ে যেখানে তার কোনও এখতিয়ার নেই, সেখানেও হস্তক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে প্রধান অন্তরায় হিসেবে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। যা শিক্ষার পরিবেশকে চরমভাবে বিষাক্ত করে তুলেছে।

১৪. শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের এবং অধিকতর কম সিজিপিএ ধারীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে যেখানে তাদের থেকেও অধিকতর যোগ্য এবং মেধাবীদের রিফিউজ করা হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন হলো কেন এবং কীভাবে? এর প্রমাণ গত নিয়োগের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের দুই শিক্ষক।

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী কায়দায় এই খোন্দকার নাসিরউদ্দিন মুক্তমনা শিক্ষক ও সমস্ত শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রেখে শিক্ষার পরিবেশ তীব্রভাবে কলুষিত করে যাচ্ছেন। যা সমসাময়িক দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা পিছিয়ে পড়েছি প্রতিনিয়ত।

সবাই আজ জেগেছে সবাই শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ চাই। আর এই ভিসি নাসিরউদ্দিন এর পদত্যাগই এর একমাত্র সমাধান। তাই আমাদের এক দফা এক দাবি- এই ভিসির পদত্যাগ।

আপনারা জানেন, গত ৫ দিন ধরে বিনা বিরতিতে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করে যাচ্ছি। যাতে সংহতি জানিয়েছেন সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ। এই আন্দোলনে বিঘ্ন ঘটাতে এই বর্বর হায়েনা আমাদের উপর তীব্রভাবে নির্যাতন ও হামলা চালিয়েছে এবং কোনঠাসা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এ সময় আইন বিভাগের ছাত্র শফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল রাফি, নাহিদ মোল্লা, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী রেহেনুমা তাবাসুম প্রমুখ উপস্তিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।