Sun. Jun 8th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলাবাজার২৪,বৃহস্পতিবার,০৬জানুয়ারি,২০২২ঃবুধবারের এই পরীক্ষা চলতি বছর দেশটির প্রথম বড় ধরনের অস্ত্র পরীক্ষা বলে জানান দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।

বৃহস্পতিবার কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭০০ কিলোমিটার(৪৩৪ মাইলস) দূরের লক্ষ্যস্থলে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কথা জানালো ‍উত্তর কোরিয়া। ‘হাইপারসনিক’ মিসাইল একটি দূরপাল্লার এবং শব্দের চেয়ে কয়েকগুণ দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যস্থলের অনেক কাছে চলে আসার পরই কেবল রাডারে ধরা পড়ে, এর তুলনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক আগেই শনাক্ত করা যায়।

বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে দেশটির পূর্ব উপকূল থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপান সাগরে গিয়ে পড়ে। এই দিন সকালেই জাপানের কোস্টগার্ড প্রথম এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করে, এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ তা নিশ্চিত করে বলে জানিয়েছেন বিবিসি।

কেসিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবারের পরীক্ষায় ‘হাইপারসনিক গ্লাইডিং ওয়ারহেডটি’ এর বুস্টার রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যস্থলে ‘নিখুঁতভাবে আঘাত’ হানার আগে ১২০ কিলোমিটার উড়ে যায়। পরীক্ষায় ফ্লাইট কন্ট্রোল ও শীতকালীন ঠাণ্ডার মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানার সক্ষমতাও নিশ্চিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।

সাধারণত হাইপারসনিক অস্ত্র ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে অনেক নিচু দিয়ে লক্ষ্যের দিকে উড়ে যায়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণেরও বেশি গতিতে, ঘন্টায় প্রায় ৬২০০ কিলোমিটার বেগে উড়ে যেতে পারে।

নতুন বছরের প্রাক্কালে ৩১শে ডিসেম্বর উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার (ডব্লিউপিকে) ৮ম কেন্দ্রীয় কমিটির ৪র্থ পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের শেষ দিনে ও নিজের ক্ষমতারোহণের দশম বর্ষপূর্তিতে দেওয়া ভাষণে কিম জং উন আন্তর্জাতিক ও কোরীয় উপদ্বীপের অস্থিতিশীল সামরিক পরিস্থিতির মুখে জাতীয় প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার ডাক দিয়েছিলেন। এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তার প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে। অক্টোবরের পর এই প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল দেশটি।

দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থবির হয়ে থাকার মধ্যেই গত বছর নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ট্রেন থেকে ছুড়তে সক্ষম এমন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং নতুন দীর্ঘ পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।

দেশটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির চেষ্টার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়াসহ অল্প কয়েকটি দেশের সঙ্গে যোগ দিল। এই মূহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মত অল্প কয়েকটি দেশেরই কেবল হাইপারসনিক মিসাইল আছে। এ মুহূর্তে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে।

একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে হওয়াসং-৮ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া, কিন্তু এবার যেটি পরীক্ষা করেছে তা পুরোপুরি আগেরটির মতো নয়, শুধু কিছু বৈশিষ্ট্যে দু’টির মিল রয়েছে’।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম গত বছরের শেষ ভাষণে পারমাণবিক অস্ত্র বা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে স্কুল ইউনিফর্ম ও দেশের একটি ট্রাক্টর ফ্যাক্টরি নিয়েই বেশি কথা বলেছিলেন, এতে নতুন বছরে তার মনোযোগ অস্ত্রের চেয়ে দেশের জনগণের ‘খাদ্য ও জীবনমান উন্নয়নে’ বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

তিনি আরও বলেন যে, তার দেশ এখন ‘জীবন-মৃত্যুর লড়াই’ এর মুখোমুখি। কিন্তু দেশে উন্নয়ন বাড়ানো এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা দেশটির এ বছরের লক্ষ্য বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কয়েকদিন আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-আন পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার ঘোষণার পরই এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার খবর পাওয়া গেল।

নতুন বছরের প্রথম দিনে এক ভাষণে নেতা কিম বলেছিলেন, ‘কোরীয় উপদ্বীপে ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীল সামরিক পরিবেশ দেখা দিয়েছে, যে কারণে পিয়ংইয়ং নিজের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবে।’

এমন এক সময়ে উত্তর কোরিয়া এ পরীক্ষা চালালো যখন করোনাভাইরাসের কারণে সীমান্ত অবরোধের ফলে পিয়ংইয়ং এখন খাদ্য সংকটে পড়েছে। এ কারণে দেশটির অর্থনীতির অবস্থা এখন খুবই খারাপ।

অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সত্ত্বেও দেশটি নিজের সমরাস্ত্র কর্মসূচী চালিয়ে গেছে, এবং বরাবর নিজেদের আত্মরক্ষাকে এর পেছনের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছে পিয়ংইয়ং।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে তার পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ পরিত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আসছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সাথে পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্ক এখন পর্যন্ত উত্তেজনায় ভরা।