নিউজ ডেস্ক: সব গোল তাহলে জমিয়েই রেখেছিল আর্জেন্টিনা! বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগ। অথচ প্রথম চার ম্যাচে মাত্র চার গোল। আগের তিন ম্যাচে গোল মোটে দুটি। সেমিফাইনালেও উঠেছে টাইব্রেকারের লটারিতে। অবশেষে নিন্দুকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিতেই জ্বলে উঠল আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ের জালে গুনে গুনে আধ ডজন গোল! ৬-১-এ জিতে ১১ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে আকাশি-সাদারা। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে স্বাগতিক চিলি।
ছয় গোল, কিন্তু বিস্ময়করভাবে স্কোরশিটে নেই লিওনেল মেসির নাম। জাতীয় দলের হয়ে গোল না-পাওয়া নিয়ে শৈশবের বন্ধু মেসিকে কদিন আগে খোঁচাও দিয়েছেন সার্জিও আগুয়েরো। ম্যাচজুড়ে প্যারাগুয়ের একমাত্র সফলতা মেসিকে গোলবঞ্চিত রাখা। না হলে চারটি গোলে অবদান রাখলেন অধিনায়কই। আগুয়েরো নিজেও গোল পেয়েছেন। তাঁর বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছেন গঞ্জালো হিগুয়েইনও। কিন্তু আর্জেন্টিনা এক হালি পূর্ণ করেছে তাদের কোনো ফরোয়ার্ডকে ছাড়াই।
সেট পিস থেকে গোল করতে না-পারা, দুর্বল ফিনিশিংয়ে প্রতিপক্ষের গোলমুখ খুলতে ব্যর্থ-সব সমালোচনার জবাব দিতে প্যারাগুয়েকেই বেছে নিল আর্জেন্টিনা। ১৫ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক থেকে বক্সের জটলায় বল পেয়ে প্রথমে এগিয়ে দেন মার্কোস রোহো। বিশ্বকাপের পর আবারও গোলের দেখা পেলেন এই ফুলব্যাক।
২৭ মিনিটে মেসির দুর্দান্ত থ্রু বল তিরের ফলার মতো ঢুকে গেল প্যারাগুয়ের রক্ষণ চিঁড়ে। তিরটাকে হাভিয়ের পাস্তোরে গোলা বানিয়ে করে ফেললেন ২-০। রোহোর মতো এটিও তাঁর জাতীয় দলের হয়ে মাত্র দ্বিতীয় গোল। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলা পিএসজির মিডফিল্ডার অবশ্য আশাবাদী করছেন, তৃতীয় গোলের জন্য অপেক্ষাটা দীর্ঘ করবেন না।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষেই প্যারাগুয়ে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ড্র নিয়ে ফিরেছিল। আজও দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর লড়াইয়ে ফেরার আভাস ছিল তাদের। প্রথমার্ধের শেষ প্রান্তে সেই লুকাস ব্যারিয়স দুর্দান্ত শটে ২-১ ব্যবধান নামিয়ে এনেছিলেন, আর্জেন্টিনার মাটিতেই যাঁর নাড়িপোঁতা। তবে কি আবারও…।
না, আর্জেন্টিনা এবার ম্যাচের শেষপ্রান্তের নাটকীয়তার কোনো সুযোগই দিল না। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ৮ মিনিট গড়াতে না-গড়াতেই ৪-১ করে ফেললেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। ৪৭ মিনিটে বক্সের বাঁ প্রান্ত দিয়ে ঢুকে নিখুঁত ফিনিশিংয়ে করলেন তাঁর প্রথম গোলটি। ৫৩ মিনিটে গোলরক্ষকের সেভ থেকে ফেরা ফিরতি বলে ট্যাপ ইন করে আরও একবার দু হাতে হৃদয় আঁকলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে খোঁজা এই উইঙ্গার।
চারটি গোল হয়ে গেছে। ম্যাচও ততক্ষণে এক রকম শেষ। কিন্তু মেসি তো বটেই, গোলের দেখা পাননি আগুয়েরোও। ক্রসগুলো আর্জেন্টিনা কাজে লাগাতে পারে না—এই দুঃখটাও ভুলিয়ে দিয়ে দারুণ হেডে আগুয়েরো করলেন টুর্নামেন্টে নিজের তৃতীয় গোল। আগুয়েরোর বদলি হিসেবে নামতে না-নামতেই ৮৩ মিনিটে হিগুয়েইন পূর্ণ করলেন গোলের আধ ডজন। এবারও মেসিকে আটকাল প্যারাগুয়ে রক্ষণ। মেসি পড়ে গেলেন। মাটিতে শুয়েই আলতো টোকায় বল বাড়ালেন। সেখান থেকেই হিগুয়েইনের গোল, জাত স্ট্রাইকারদের মতো, সামান্য জায়গা থেকেই জোরালো শট।
খেলার তখনো সাত মিনিট বাকি। সাত নম্বর গোলটাও হয়ে যাক, মেসিকে দিয়েই! কিন্তু না, আর গোল হলো না। রেফারিও প্যারাগুয়েকে আর লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না। ৯০ মিনিট হতেই বাজিয়ে দিলেন শেষের বাঁশি। টানা দ্বিতীয়বার কোনো দলকে নিয়ে কোপার ফাইনালে গেলেন জেরার্ডো মার্টিনো, গতবার কোচ ছিলেন প্যারাগুয়েরই।
গতবার মার্টিনোও খালি হাতে ফিরেছেন। এবার আর্জেন্টিনা ফিরতে চায় না। দীর্ঘ শিরোপা-খরা ঘোচানোর তীব্র ক্ষুধাটা আজ স্পষ্ট হলো। জমিয়ে রাখা গোলগুলো সব সেমিতেই নিশ্চয়ই তারা খরচ করে ফেলেনি। সবচেয়ে বড় কথা, টানা চার ম্যাচে গোলশূন্য মেসির জমানো গোলগুলো তো ফাইনালের জন্য রইলই।
৪ জুলাইয়ের ফাইনালে অবশ্য স্বাগতিক চিলি, টুর্নামেন্টজুড়ে যারা দুর্দান্ত খেলেছে। তবে আর্জেন্টিনা স্বপ্ন আর আশায় বুক বাঁধতেই পারে।
১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে যাওয়ার দুঃখ পরের বছর কোপার শিরোপা দিয়ে অনেকটাই ভুলেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯১ সালে চিলিতে হওয়া কোপার আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারাই। মজার ব্যাপার হলো, গত বছরও বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে আবার কোপার শিরোপার সামনে ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা।
সেই ১৯৯৩ সালের পর থেকে শিরোপা-খরা চলছে আর্জেন্টিনার। বার্সার হয়ে দুই ডজন ট্রফি জেতা মেসির জাতীয় দলের হয়ে ট্রফি জেতার অপেক্ষার পালা কি এবার ফুরোবে?