Mon. May 5th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

32ঝিনাইদহ. সোমবার, ৩১ আগস্ট ২০১৫
যে হাত দু’টি হতে পারতো ভিক্ষুকের হাত। সেই দু’টি হাতকে কর্মের হাতে পরিনত করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মজুমদারপাড়া গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলতাপ হোসেন (৬০)। জীবিকার তাগিদে শৈলকুপা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের ব্রীজের এক প্রান্তে বসে পাখা ও ঝাড়ু বিক্রি করেন তিনি। ঝড়, বৃষ্টি ও খরতাপের সাথে সংগ্রাম করে এই ব্রীজের ওপর বসে পাখা ও ঝাড়ু বিক্রি করে আসছেন দীর্ঘ ১৫বছর ধরে ।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানেই অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেঁচে থাকা কিংবা আত্মসম্মানবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামা-এটি মানতে নারাজ ছিলেন তিনি। তাই আত্মপ্রত্যয়ী আলতাপ হোসেন রোজগারের জন্য বাড়ি থেকে ১কি.মি. দূরের কুমার নদের এই ব্রীজটিকে বেছে নিয়েছিলেন । প্রতিদিন সকালে আসেন, ফেরেন সন্ধ্যায়। “পাখা বিক্রির সামান্য আয়ে স্ত্রী সন্তানদের মুখে তিন বেলা পেটভরা খাবার তুলে দিতে না পারলেও আত্মমর্যাাদার সাথে বেঁচে আছি,” বলেন অন্ধ আলতাপ হোসেন।

আলতাপ হোসেন জানান, কুড়ি বছর বয়সে টায়ফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি । সে সময় দরিদ্র বাবা-মা তাকে ভালো চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। দীর্ঘদিন ওই জ্বরে ভোগার পর এক সময় সেরে উঠেন ঠিকই, কিন্তু হারিয়ে ফেলেন দৃষ্টি শক্তি। আলতাপ হোসেনের ৩ ছেলে মেয়ের মধ্যে বড়, মেয়ে। মেয়ে শাহিনুর(১৮) ঝিনাইদহ শহরের মল্লিক কারিগরী কলেজে পড়ে। ছেলে বাপ্পি(১৭) এস এস পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় পরের দোকানে কাজ শুরু করেছে। ছোট মেয়ে তাজমীন শৈলকুপা পাইলট গার্লস স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

আলতাপ জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৫/২০টি পাখা ও ৪/৫টি ঝাড়ু বিক্রি হয়। প্রতিটি পাখা ১৫ থেকে ৩০টাকায় ও ঝাড়– ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার দিনে প্রায় ৬০ থেকে ৭০টাকা আয় হয়।

আলতাপ হোসেনের ৭শতাংশের বসত ভিটায় একটি দোচালা ঘর আছে। মাঠে কোন যায়গা জমি নেই। তাই পাখা বিক্রির আয় দিয়েই তাকে পরিবারের সদস্যদের ভরন-পোষণ ও পড়াশুনার ব্যয়ভার মেটাতে হয় বলে তিনি জানান।

অন্ধ আলতাপ হোসেনের পাশে আতাউর রহমান(৩৮) নামের এক শিক্ষিত যুবক খোস-পাচড়া, দাঁত সুরক্ষার ঔষধ ও বিভিন্ন প্রসাধনী বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “ আমি পাশে থাকাতে আলতাপ চাচার কিছুটা উপকার করতে পারি। ঝড় বৃষ্টি আসলে পাখাগুলো গুছিয়ে দিই, বৃদ্ধ মানুষ, অনেক সময় নিরাপদ স্থানে যেতে যেতে বৃষ্টিতে ভিজে যায়। বৃষ্টি থেমে গেলে ভেজা কাপড়ে আবার ব্রীজের ওপর আসেন পাখা বিক্রি করতে।” আতাউর আরো জানান, তিনি দাঁতের চিকিৎসায় ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বাজারে একটি দোকানের সন্ধানে আছেন। ভালো দোকান পেলে দ্রুতই সেখানে চলে যাবেন। তখন চাচার টাকা গননা, পাখা গোছানো, ঝড় বৃষ্টির সময় দ্রুত সরে পড়তে সহায়তা করার কেউ থাকবেনা- দীর্ঘাশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বলেন আতাউর। আতাউর সমাজের বৃত্তবানদের কাছে অন্ধ আলতাপ চাচাকে ব্রীজের পাশের খালি যায়গায় একটি টোঙ দোকান করে দেয়ার দাবী জানান। একটি টোঙ দোকান হলে পাখার পাশাপাশি অন্য কিছুও বিক্রি করতে পারতেন, চাচা নিরাপদে নিশ্চিন্ত থাকতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে চাচাকে ছেড়ে গেলেও কষ্ট পেতাম না, এই ভেবে যে চাচা নিরাপদ আশ্রয়ে ভালো আছেন।