Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8 সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রতি সেকেন্ডে হাতের নখ কতটুকু বাড়ে? এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ বা এক ন্যানোমিটার। আগামী ৭০ সেকেন্ডে আপনার নখ যতটুকু বড় হবে আজকের গড়পড়তা ট্রানজিস্টরের আকার ঠিক ততটুকুই। কল্পনা করা কঠিন হয়ে গেল? একটি আলপিনের মাথায় (পিনহেড) ১০ কোটিরও বেশি ট্রানজিস্টর বসানো সম্ভব। কে জানে এই লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়তো সে পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। মাইক্রোপ্রসেসরের প্রযুক্তি এমনই। প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তির ট্রানজিস্টর তৈরি করতে হয়, যা আগের চেয়ে আকারে ছোট, কম বিদ্যুৎ খরচ করবে কিন্তু কাজের গতি বাড়াবে কয়েক গুণ।

একটি নির্দিষ্ট আকারের ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) বোর্ডে মোট ট্রানজিস্টরের সংখ্যা ভবিষ্যতে কত হবে তা নিয়ে গর্ডন আর্ল মুর ১৯৬৫ সালের ১৯ এপ্রিল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তা মুরস ল বা মুরের তত্ত্ব নামে পরিচিতি পায়। চলতি বছরে পঞ্চাশ পেরিয়ে মুরের সেই সূত্র এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। মুরের মূল পরিচয়, ব্যবসায়ী। তিনি শীর্ষ মাইক্রোপ্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইনটেল করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু গর্ডন মুরের সূত্র থেকে এখনো মাইক্রোপ্রসেসর শিল্প দিকনির্দেশনা পাচ্ছে। ১৯২৯ সালের জানুয়ারিতে জন্ম নেওয়া এই কিংবদন্তির বেশির ভাগ সময় এখন কাটে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। সিলিকন ভ্যালির জন্মদাতাও বলা হয় তাঁকে, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিকাশ যে হয়েছে তাঁর হাত ধরেই।

মুরের সূত্র কী
ইলেকট্রনিকস সাময়িকীর ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন ফেয়ার-চাইল্ড সেমিকন্ডাক্টরের গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক গর্ডন মুরকে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের আগামী দশক নিয়ে পূর্বাভাস দিতে বলা হয়। তখন তিনি লেখেন, ১৯৭৫ সাল নাগাদ এক ইঞ্চির এক-চতুর্থাংশে ৬৫ হাজার ট্রানজিস্টর স্থাপন করা সম্ভব হবে, যা প্রতি দেড় থেকে দুই বছরে দিগুণ হারে বৃদ্ধি পাবে। তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে কিছু যুক্তি দেখান তিনি। গর্ডন মুরের সেই গবেষণাপত্রটি পরবর্তী সময়ে মুরস ল বা মুরের সূত্র হিসেবে পরিচিতি পায়। আবার ১৯৭৫ সালে তিনি বলেন, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত প্রতি দুবছরে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বোর্ডে ট্রানজিস্টরের সংখ্যা দিগুণ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তবে ১৯৮০-এর পরে এই হার কমতে থাকবে। আজও তাঁর সেই পূর্বাভাস অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে।

মুরের সূত্র কেন পুরোনো হয় না
কম্পিউটারের ভাষা বাইনারি। বিদ্যুতের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয় বাইনারি সংকেত। আর এই সংকেতগুলো তৈরি করে ট্রানজিস্টর নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অর্ধপরিবাহী যন্ত্র। একটি মাইক্রোপ্রসেসরে যত বেশি সংখ্যক ট্রানজিস্টর থাকে, সংকেত তত দ্রুতগতিতে প্রক্রিয়াজাত করা যায়। সুতরাং, নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত ট্রানজিস্টরের সংখ্যা না বাড়িয়ে দ্রুতগতির কম্পিউটার তৈরির উপায় নেই। এদিকে ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ, তারপর স্মার্টফোন-ট্যাবলেট কম্পিউটার যন্ত্রের আকার ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে। ঢাউস আকারের কম্পিউটারের চল সেই ২৩০০ ট্রানজিস্টরের প্রথম ইনটেল ৪০০৪ মাইক্রোপ্রসেসর থেকেই বিদায় নিয়েছে। এখন সেখানে ৫৫০ কোটি ট্রানজিস্টরের প্রসেসর তৈরি হয়েছে। আকার কিন্তু বাড়েনি, বরং কমছে। আর তাই গর্ডন মুরের সেই ভবিষ্যদ্বণী এখনো সীমা খুঁজে পায়নি।
ব্যবসায়িক দিক থেকে দেখলে, মাইক্রোপ্রসেসর শিল্প খুবই নাজুক। সময়ের সঙ্গে চলতে একটু গরমিল হলেই মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। এর বহু উদাহরণ আছে। এএমডির কথা তো আমাদের সবারই জানা। উদ্ভাবন, উন্নয়ন আর গবেষণায় শত শত কোটি ডলার খরচ করতে হয় প্রতিনিয়ত। আগের মাইলফলক ছাড়িয়ে নতুন রেকর্ড গড়তে হবে প্রত্যেকবার। যাদের সে সামর্থ্য নেই তারাই ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ কারণেই নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই মুরের সূত্র এখনো টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ভবিষ্যৎ
ঢাকা শহরের কথা ভাবুন। শৌখিন এক বা দ্বিতল বাড়ি তৈরির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। মানুষ বেশি, জায়গা কম। সম্প্রসারণের পথ এক উপরের দিকেই খোলা আছে। মাইক্রোপ্রসেসরে ট্রানজিস্টর বসানোর ক্ষেত্রেও এই নীতি মানা হচ্ছে। এক স্তরের পরিবর্তে বহু স্তরে বিন্যাস করা হচ্ছে। কিন্তু তারও একটা সীমা আছে। ট্রানজিস্টরের আকার যখন পরমাণুর আকারে গিয়ে ঠেকবে, আর ছোট করার পথ থাকবে না, তখন? মুরের সূত্র হয়তো তখনই অকার্যকর হয়ে পড়বে। মুর সে সম্ভাবনার কথা আগেই জানিয়েছেন। নতুন পথের সন্ধান অবশ্য এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ট্রানজিস্টরভিত্তিক ডিজিটাল কম্পিউটারের পরিবর্তে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির চেষ্টা চলছে। ইনটেলের কথাই বলি। প্রতিষ্ঠানটি ডাচ বিশ্ববিদ্যালয় ডেলফ্ট ইউনিভার্সিটি ও গবেষণা সংস্থা টিএনওর সঙ্গে এক দশকের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনটেলের গবেষণাগারে তাঁরা একসঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করবেন। মুরের সূত্র যে সীমায় পৌঁছেছে তার ইঙ্গিত ইনটেল নিজেই দিচ্ছে। আগামী এক দশকে অবশ্য সে সম্ভাবনা কেউ দেখছেন না।