খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ঢাকা : প্রযোজকদের কাছে যন্ত্রপাতি ব্যবহারের খরচ বাবদ ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৪ টাকা পাওনা আছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসির)। ৭২জন প্রযোজকদের কাছে এই টাকা বকেয়া রয়েছে। সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার পর এ ৭২টি চলচ্চিত্রই পরিচালকরা মুক্তি দিয়েছেন। এসব চলচ্চিত্রের প্রযোজকেরা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস এর সর্বশেষ হিসেব পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধ করেনি।
এফডিসি সূত্র জানায়, ‘বকেয়া অর্থ আদায়ের জন্য এ প্রর্যন্ত এ ৭২ জন প্রযোজককে তাদের ঠিকানায় চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া তাদের দেওয়া ঠিকানার বিষয়ে যাচাই বাছাই চলছে। অনেক প্রযোজকের বিষয়ে আমরা প্রাথমিক খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি। তারা এখন আর পুরনো ঠিকানায় নেই। যার কারণে এ বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে এফডিসির কর্মকর্তাদের বেশখিানিকটা বেগ পেতে হচ্ছে।’
১৯৮৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এ অর্থ বকেয়া রয়েছে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে সুমন ফিল্মস ইন্টারন্যাশন্যাল ব্যানারে নির্মিত ‘কালা মানুষ’ চলচ্চিত্রের প্রযোজকের কাছে ১৫ লাখ ২ হাজার ২০২ টাকা। আর সর্বনিম্ন ৩৪ হাজার ২৭৫ টাকা বকেয়া রয়েছে চিত্রাঞ্জলী ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ‘দূর থেকে কাছে’ ছবির। এ ছবিটির কাজ ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়।
এ বিষয়ে এফডিসির হিসাবশাখা সূত্র জানায়, ‘বকেয়া এ টাকাগুলো আদায়ের জন্য প্রযোজকদের বর্ণিত ঠিকানায় বিভিন্ন সময় চিঠি পাঠানো হয়েছিলো, এখনও হচ্ছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝেমাঝে দু-একজন প্রযোজক এসে তাদের বকেয়া পাওনার কিছু অংশ পরিশোধ করে যান। এরপর আর তাদের সেভাবে কোন ধরনের খবর পাওয়া যায় না। যোগোযোগ করা হলে আজ না হয় কাল। এভাবে সময় পার করছেন। বকেয়া টাকা আদায় নিয়ে কয়েকজন প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু এভাবেও এফডিসি লাভবান হচ্ছে না। কারণ মামলা হলে চূড়ান্ত রায় পেতে প্রায় ১০ বছরের মত লেগে যায়।’
৭২টি ছবির নাম হলো-প্রেমবিরহ(১৯৮৭), সতী নাগ কণ্যা(১৯৮৪), দি রেইন(১৯৮৪), দূর থেকে কাছে(১৯৮৪), মালা বদল(১৯৮৬), শত্রু(১৯৮৬), মেঘমালা(১৯৮৭), আপোষ(১৯৮৭), দশ গেরামের মোড়ল(১৯৮৭), হুমকি(১৯৮৭), রমি রহিম জান(১৯৮৯), সাজা(১৯৯০), লাখে একটা (১৯৯০), আসমান জমিন (১৯৯০), রাজাজনি (১৯৯০), রতনমালা (১৯৯০), পদ্মা মেঘনা যমুনা( ১৯৯১), বিচ্ছেদ (১৯৯২), গোলামীর জিঞ্জির(১৯৯২), ঘর ভাংঙা ঘর (১৯৯২), প্রেমের মরা জলে ডুবে না (১৯৯২), জেলের মেয়ে রশ্নি (১৯৯২), দুই গোলাপ (১৯৯২), চরম প্রতিশোধ (১৯৯৩), অপরাধ জগতের রাজা ( ১৯৯৭), জীবনসঙ্গী (১৯৯৭), সুন্দরী মিস বাংলাদেশ (১৯৯৭), রাখাল রাজা (১৯৯৭), এখনও অনেক রাত (১৯৯৭), ঘাটের মাঝি (১৯৯৮), নেশা (১৯৯৮), সিংহ পুরুষ (১৯৯৮), কুংফু নায়ক (১৯৯৯), মুদ্রণ খাত (১৯৯৯), আলী কেন গোলাম (১৯৯৯), রাহরাম বাদশা (১৯৯৯), মানুষ মানুষের জন্য(১৯৯৯), শক্তের ভক্ত (১৯৯৯), বিশ্ব হারামী (১৯৯৯), বাঘের থাবা (১৯৯৯), ভাই কেন আসামী(২০০০), বস্তির শাহেনসা(২০০০), কারিশমা (২০০০), আমার প্রেম আমার অহংকার (২০০০), এরই নাম দোস্তী (২০০০), আতংকবাজ (২০০১), শয়তানের আজরাইল (২০০১), অন্যায়ের প্রতিশোধ (২০০১), আমার বউ (২০০১), বিল্লু মাস্তান (২০০২), মায়ের সম্মান (২০০২), নিশি রাইতে আইশো বন্ধু (২০০২), মন দিওয়ানা (২০০২), মহা তান্ডব (২০০২), আবার একটি তান্ডব (২০০২), হৃদয়ের বাশি(২০০২),ডাইরেক্ট অ্যাকশন(২০০২), কারাগার (২০০৩), খেয়া ঘাটের মাঝি(২০০৩), সাহসী সন্তান(২০০৩), যুদ্ধ ঘোষনা(২০০৩), অমানুষের ভালোবাসা (২০০৩), গড ফাদার (২০০৩), কালো হাত (২০০৪), মহিলা হোস্টেল(২০০৪), ঢাকার রানী (২০০৪), কালা মানুষ (২০০৪), রাঙ্গা বাইদানী (২০০৬), সন্ত্রাসী ধরো (২০১২), ক্ষোভ (২০১৩),খাঁচার পাখি (২০১৪০, লাল্টু কসাই (২০১৪)।
বকেয়া টাকা আদায় বিষয়ে এফডিসির প্রশাসনিক সূত্র দাবি করে, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ নিয়ে প্রযোজকদের সেভাবে কোন ধরনের মাথাব্যাথাও নেই। কারণ তারা এ প্রতিষ্ঠানের বড় কোন কর্তার পরিচয় দিয়ে কাজ আদায় করে নেয়। এরপর টাকা পরিশোধ নিয়ে তাদের সেভাবে কোন ধরনের তৎপরতাও দেখা যায় না’।
যদিও পরিচালক আনোয়ার সিরাজী ২০০১ সালে ‘শয়তানের আজরাইল’ নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। যে ছবির এখন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছ ৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৪৫ টাকা। এরপর একই পরিচালক ২০১৪ সালে শেষের দিকে ‘উতলা মন’ নামে এফডিসির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আরেকটি ছবির কাজ শুরু করেন। ছবিটির কাজ শেষে এখন মুক্তির জন্যে অপেক্ষা করছে। তাই এ নিয়ে এফডিসির কর্মকর্তাদের একই মুখে দু ধরনের কথা শোনা গেলো।
একটি সূত্র বলে, ‘সম্প্রতি এফ আই মানিকের পরিচালনায় ‘দুই পৃথিবী’ ও সোহেল আরমানের পরিচালনায় ‘এইতো প্রেম’ ছবি দুটির উপরে এফডিসির বোর্ড সদস্যদের মুক্তিতে অনাপত্তি ছিলো। কিন্তু এফডিসির একজন উচ্চপদস্থ কমকর্তা বিষয়টিতে বিশেষভাবে তদবির করার কারণে তাদের ক্ষেত্রে এ অনাপত্তি না মেনেই ছবি দুটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়’।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের এমডি তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘এফডিসি এমনিতেই আর্থিকভাবে বেহাল অবস্থার মধ্যে আছে। এরপর বিভিন্ন খাতে যে বকেয়াগুলো রয়েছে তা আদায়ে হিসেব শাখা বেশ তৎপর ভাবেই কাজ শুরু করেছে। আমরা কয়েকটি ছবির প্রযোজকদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছি। এতে করে প্রযোজকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি দীর্ঘসূত্রীতার মধ্যে পরে যায়। যার কারণে আমরা চাইছি তাদের কাছ থেকে মামলা বাদে অন্যকোন উপায়ে গিয়ে টাকাগুলো কিভাবে আদায় করা যায়। এ বিষয়ে এফডিসির আইনি শাখা আমাদের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করছে’।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে এফডিসি কতৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন ধরনের সহযোগিতা এখন পর্যন্ত চাননি। তবে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে জেনেছি এফডিসি প্রযোজকদের কাছ থেকে বেশকিছু টাকা বকেয়া পাবে। এফডিসি যদি এ বিষয়ে আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়। আমরা অবশ্যই এগিয়ে আসবো’।