Mon. May 5th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
36সংবাদটি পিলে চমকানো। শুধু পিলে চমকানো বললে ভুল হবে। আহত ক্ষত, বিক্ষত হওয়ার মতও। মানুষের মূল্যবোধের কতটা অধ:পতন হলে অবিশ্বাস্য এ ঘটনাগুলো ঘটতে পারে। সামনে কোরবানি। রাজধানীতে বসেছে পশুর হাটে। হাটে গরু যাচ্ছে। আর পথ থেকে সেই গরু ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক, ট্রলারে করে কোরবানির পশু নিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদাবাজী চলার পাশাপাশি এখন শুরু হয়েছে ছিনতাই। অথচ পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে গরুর হাট থেকে রাস্তাঘাটে কোরবানির পশু আনার সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কান দিচ্ছে না ছিনতাইকারীরা। ধারদেনা বা ঋণ নিয়ে সারাবছর গরু লালন পালন করে কোরবানির গরু বিক্রি করে যে কৃষক দুটি পয়সা আয়ের স্বপ্ন দেখেছিল তারা এখন সর্বস্ব খুঁইয়ে ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা রোধ করতে পারছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শনিবার সকালেও এ ধরণের একটি ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মানিক নগরে গরু বোঝাই একটি ট্রাক ছিনতাই করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শুধু ট্রাক ছিনতাই নয়, ব্যবসায়ীদের ছুরি আঘাতে ক্ষত বিক্ষতও করেছে। যারা ছিনতাই করেছে তাদের গ্র“পটি এক দু’জনের নয়, আট থেকে দশ বারো জনের সংঘবদ্ধ একটি গ্র“প। যারা ছিনতাই করেছে তারা মানুষ সন্দেহ নেই, এদের মুসলমান হওয়ার বিষয়টিও কোনো ধরণের সন্দেহ জন্ম দেয় না। ওপরে আল্লাহ, মনে নবীর বিশ্বাস তাদেরও রয়েছে। এ ধর্ম বিশ্বাস নিয়েই হয়তো তারা জীবনের পথ পাড়ি দিচ্ছে। কোরবানির গোস্ত হয়তো তাদের মুখেও দু’ এক টুকরা আল্লাহ উঠাবেন। এতটুকু দয়া আল্লা দেখাবেন। মহা মহীয়ানের দয়ার শেষ নেই। কিন্তু যারা এ ছিনতাইয়ের কাজটি করেছে তাদের হৃদয়ের সংকীর্ণ সাহসিকতা দেখে কেঁপে উঠতে হয়। সাহসের মাত্রা কতটা সীমা লঙ্ঘন হলে ইবাদত পণ্যতেও মানুষ হামলা চালাতে পারে। সমাজে কতটা নীতি ও নৈতিকতার পচন ধরলে কবর থেকে লাশ চুরি হয়ে যায়। লোভের মাত্রা কতটা ছাড়িয়ে গেলে মসজিদ ও দানবক্সের টাকা নিয়েও হয় রাজনীতি। আগে গ্রামে বাঁশ চুরি হত না কারণ কবরস্থানে বাঁশ ব্যবহার হয় বলে। এখন বাঁশ ঝাড় সুদ্ধ লোপাট হওয়ার উপক্রম হবার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ দৃশ্য দুই এক যুগ আগেও দেখা ছিল ভার। বাঁশ দিয়ে মানুষকে কবর দেওয়া হয় বলে বাঁশঝাড়ের বাঁশ চুরি হত না। এখন তো লাশই চুরি হয়ে যায়। চোরের কোনো ধর্ম নেই। চুরিই চোরের ধর্ম। এখানে জাত বেজাতের হিসাব নেই। হিসাব নেই ইবাদতপণ্যেরও। বিষয়টি অস্বীকার করার মত নয়। তবে চোরকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব কাদের। হয়তো রাষ্ট্রের। মানুষ অভাবে থাকলে চুরির সংখ্যা বাড়বেই। অভাব অনটন মানুষকে চোর বানাতে বাধ্য করে। বেকারত্ব ছিনতাই বাড়িয়ে দেয়। আজ কোরবানির পশুও সেই বেকার ছিনতাইকারীদের শিকার নাকি সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের। সম্প্রতি ছিনতাই ঘটনা বৃদ্ধি কোন দিকে ইঙ্গিত করে। অতল গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের আর্থিক অবস্থা। অভাব সঙ্কটের বড় ইঙ্গিত করছে কোরবানির পশু ছিনতাই। স্বর্ণ দোকানে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে গেল কয়েকদিন আগে। প্রতিযোগিতা দিয়েই বাড়ছে লুটপাট। মনুষত্বের দোষ দিয়ে লাভ কি যদি মানুষ বেঁচে থাকার উপকরণ না পায়। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। ক্ষুধা লাগলে পৃথিবী গদ্যময় হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। এ গদ্যময়কে কাব্যময় করে তোলাও দেশকে ছিনতাইমুক্ত করা সরকারের দায়িত্ব। প্লিজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! নজর দেন ছিনতাইকারীদের প্রতি। কোরবানির পশু ছিনতাইকারীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এমনকি সাগরে আগের চেয়ে জলদস্যুর হামলা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। বলা হয় জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে টহল জাহাজ, উপকরণ ও লোকবলের অভাব। এজন্যে কোস্টগার্ড রয়েছে। তারা কি করছে? বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা অবস্থায় ভোলার দৌলতখানের প্রায় ৩০টি ট্রলারে জলদস্যুরা হামলা চালিয়েছে। এ সময় জলদস্যুদের গুলিতে অন্তত ৩৫ জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে জেলে মো. সিডু (৪২) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহতের বাড়ি দৌলতখানের ভবানিপুর ইউনিয়নে। তার মরদেহ শনিবার সকালে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া এফবি রাফিন নামে একটি ট্রলার ডাকাতদের ট্রলারের ধাক্কায় ডুবে গেছে। শুক্রবার রাতে ফিরে আসা জেলেদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ২ জনকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দৌলতখান থানার ওসি আবুল বাশার সিডু জেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ভোলার দৌলতখান উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী কুদ্দুস মিয়ার মাছ ধরার ট্রলার এফবি ফারিহা বৃহস্পতিবার ১৯ জন মাঝি মাল্লা ও জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। ট্রলারটি শুক্রবার বিকেলে বঙ্গপোসাগরের কালকিনি এলাকায় মাছ ধরা অবস্থায় জলদস্যুরা হামলা চালায়। ওই ট্রলারের মাঝি মোসলেউদ্দিন মুঠোফোনে জানান, হঠাৎ করে ২/৩টি ট্রলারযোগে জলদস্যুরা তাদের ট্রলার ধাওয়া করে এলোপাথারি গুলি ছুঁড়ে। এ সময় ডাকাতদের গুলিতে মো. সিডু (৪২) ও মিজান (৩৫) গুলিবিদ্ধ। এদের মধ্যে সিডু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সিডুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৫ গুলি লাগে এবং মিজানের মাথায় একটি গুলি লাগে। কিন্তু জলদস্যুরা তাদের ধরতে পারেনি। তিনি আরো জানান,ওই সময় একই স্থানে ভোলার ২৫ থেকে ৩০টি ট্রলারের জেলেরা মাছ ধরছিলো। জলদস্যুদের হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এছাড়া ডাকাতরা ধাওয়া করে এফ বি রাফিন ট্রলারের উপর জলদস্যুদের ট্রলার উঠিয়ে দিয়ে জেলেদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় অন্য ট্রলারের সহায়তায় জেলেরা উদ্ধার হয়। এ পর্যন্ত যে সব ট্রলার জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে এফবি মা-৩, এফবি মাসুদ হাসান, এফবি মা জননী, এফবি সাদিয়ার নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে সাদিয়া ট্রলারের সারেং রফিক মাঝিও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদিকে মোসলেউদ্দিন মাঝি আরো জানান, নিহত ও গুলিবিদ্ধ জেলেদের নিয়ে তারা ভোলার দৌলতখানের উদ্দেশে ফিরছে। এ ব্যাপারে দৌলতখান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার গাগো নিউজকে জানান, তিনি বঙ্গপোসাগরে ট্রলারে ডাকাতির খবর শুনেছেন। ডাকাতদের কবল থেকে ফিরে আসা গুলিবিদ্ধ জেলে রফিক মাঝি ও আবদুল হাকিমকে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। জলে কিংবা স্থলে ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোরবানির পশু থেকে শুরু করে সাগরের মাছ কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।