Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫
26বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি কেন্দ্রীয়ভাবে ডাটাবেজে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকার চার স্তরের ডাটা সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে, যাতে একটি স্তরে কোন কারণে সমস্যা হলে অন্য স্তর থেকে ডাটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। এটা সম্পন্ন করা হলে বর্তমানে কাগজে ফাইল সংরক্ষণের পদ্ধতি উঠে যাবে। সরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানও এই ডাটা সেন্টারের সুবিধা নিতে পারবে। এই জন্য দিতে হবে নির্ধারিত ফি। এই ফির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। জিটুজি প্রকল্প হিসাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চীনের জেট কর্পোরেশন ও জেট হোল্ডিংকে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এবিষয়ে মন্ত্রণালয় ও ওই কোম্পানির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এরপর প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমার্শিয়াল চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত ডিপিপি প্রস্তাবটি এতদিন একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। মঙ্গলবার প্রোজেক্ট ডেভলপমেন্ট প্রফর্মা (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এই বিষয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। এদিকে সরকারের ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ডাটা (তথ্য) সেন্টার স্থাপনে ১৫শ’ কোটি টাকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেকের বৈঠকে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রশাসনে আইসিটি সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে জনগণের দোরগোড়ায় তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দিতেই এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও বিটিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ৪ স্তরের ডাটা সেন্টার স্থাপিত হলে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে। এরমধ্যে রয়েছে জাতীয় গুরুত্বপূর্র্ণ তথ্যাদি ডাটা হিসাবে কেন্দ্রীয়ভাবে কম্পিউটার সিস্টেমে নিরাপদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে। এই সংরক্ষিত তথ্যের আন্তর্জাতিক মানের সর্বো”চ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ডাটা সেন্টারে সংরক্ষিত সকল তথ্যের ব্যাক আপ ভৌগলিকভাবে ভিন্ন স্থানে রাখা হবে। যাতে করে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক স্থানে সংরক্ষিত তথ্য নষ্ট হয়ে গেলেও তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে। এছাড়াও সুযোগ থাকবে সংরক্ষিত তথ্যের সহজেই সংযোজন, বিয়োজন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি প্রসেসিং করার। সেই ব্যবস্থা থাকবে সংশ্লিষ্টদের হাতেই। সূত্র জানায়, ডাটা সেন্টারে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য ছাড়াও কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা অন্য কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি নিরাপদে সংরক্ষনের সুবিধা পাবে। সে জন্য তাদের সঙ্গে ডাটা সেন্টার কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতাও হবে। তারা গোপনীয়তার সঙ্গেই তা সংরক্ষণ করবে। জনপ্রশাসনে তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজের দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সেবার মান বাড়ানোর জন্য উ”চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই সেন্টারের প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ভূমি মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের জন্য ডাটা সেন্টারের সেবার চাহিদা রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে মূল অর্থায়ন করবে চীন। সরকারের তহবিল থেকে ৩১৬ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এতে বলা হয়, এরই মধ্যে চীনের জেডটিই করপোরেশনের সঙ্গে কম্পিউটার কাউন্সিলের বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। মঙ্গলবার একনেক সভায় প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রকল্প শুরু এবং ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ হবে। বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করে তাদের নিজেদের মতো করে। সেটা করার জন্য বিভিন্ন সরকারী/ বেসরকারী প্রতিষ্ঠান আলাদা আলাদা ছোট ছোট ডাটা সেন্টার স্থাপন করে। চার স্তরের ডাটা সেন্টার করা সম্ভব হলে তখন ওই সব প্রতিষ্ঠানকে আলাদাভাবে সেটা করতে হবে না। সকলেই এই টায়ার -৪ ডাটা সেন্টারের সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ফলে তাদের বিভিন্ন রিসোর্স এর সাশ্রয় হবে। এতে এই খাতে এখন তারা যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে সেটা করতে হবে না। জানা গেছে, এই ডাটা সেন্টার থেকে জনগণ সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করতে পারবে। এই সেন্টার থেকে সহজেই ক্লাউড বেজ আধুনিক সেবা দেয়া সম্ভব হবে। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সকল কার্যক্রমের কাগজের ফাইল আর থাকবে না। ফাইল টানাটানির দিন শেষ হয়ে যাবে। আমাদের ডাটার চাহিদা অনেক কিন্তু সেই অনুযায়ী পাচ্ছি না। প্রকল্পের মাধ্যমে ডাটার চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশ আরও ডিজিটালাইজড হয়ে যাবে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির ভবন ও আনুসঙ্গিক স্থাপনা হবে হাইটেক পার্কে। এজন্য কত সংখ্যক জনবল লাগবে, তাদের পেছনে ব্যয় কেমন হবে সেটাও নির্ধারণ করা হবে। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় বিবেচনা করেছে। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটির কাজ চলছে ভীষণ ধীর গতিতে। এক মন্ত্রণালয় থেকে আর এক মন্ত্রণালয় কাজ ধীর গতিতে হওয়াতে এখনও মাঠ পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি আশা করছে এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দ্রুত কাজ করবে। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ফাইল চালাচালিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ মিলিয়ন ডলার। চীনা প্রতিষ্ঠান জেডটিই করপোরেশনের সঙ্গে ফোর টায়ার জাতীয় ডাটা সেন্টার প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। ২০১৩ সালে এটি হাতে নেওয়ার পর এখনও কাজ শুরু করতে না পারার কারণে এর নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যেতে পারে বলে ধারনা করছে সংশ্লিষ্টরা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সাত একর জমির ওপর ডাটা সেন্টারটি স্থাপন করা হবে।