খোলা বাজার২৪ বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫।।মাথাব্যথা হয় না এমন লোকসমাজে কমই আছে। ওয়াটার নামে একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক তার এক জরিপে লিপিবদ্ধ করেছেন, শতকরা ৭০ থেকে ৯০ জন মানুষ বছরে কম করে হলেও একবার কোনো না কোনো সময় মাথাব্যথায় ভুগেছেন। আসলে মাথাব্যথা বলতে আমরা বুঝি- রোগীরা এই মাথা ব্যথাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন। যেমন মাথাব্যথা, মাথা ধরা, মাথা ভারী, মাথার শূন্যতা প্রভৃতি। আবার মাথার আশপাশের অন্য কোনো জায়গায় ব্যথা হলেও একই সাথে আবার মাথাব্যথাও হতে পারে। যেমন- কান ব্যথা, সাইনাসের ব্যথা, চোখের ব্যথা আবার এসব নাক, কান, গলা, চোখ, ঘাড় প্রভৃতির কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। ভালকুয়িস্ট তার এক সমীক্ষায় জানান, শতকরা ১৮ জন ছেলেমেয়ে যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তারা বেশির ভাগ সময় বিভিন্নভাবে মাথাব্যথার অভিযোগ করেন। আর এই মাথাব্যথার অভিজ্ঞতার আলোকেও কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাথাব্যথার অভিযোগও কমতে থাকে। মাথাব্যথা কিন্তু শরীরের কোনো অংশের কার্যক্ষমতার তারতম্য হওয়ার এবং যার নির্দিষ্ট কারণ কিংবা কোনো কারণ ছাড়াও মাথাব্যথা হতে পারে। সুতরাং মাথাব্যথা এমন একটি রোগ, যা কোনো কোনো রোগের বহিঃপ্রকাশ মাত্র কিংবা অন্য কোনো রোগের সাথে এমনিতেই দেখা দিতে পারে। আবার এই মাথাব্যথা হতাশা, আবেগ, রাগ, অসন্তুষ্টি, মানবিক চাপ, ঘুমের অতৃপ্তি, কাজের চাপেও হতে পারে। তবে যে কারণেই মাথাব্যথা হোক না কেন, এর কারণ খুঁজে অবশ্যই বের করতে হবে এবং এর সুষ্ঠু চিকিৎসা করা দরকার।
মাথা ব্যথার উৎপত্তি : অনেক সময় মাথাব্যথার রোগী চিকিৎসকের কাছে সরাসরি জানতে চান তাদের মাথায় কোনো টিউমার হয়েছে কি না। কেননা অনেকে মনে করেন মাথাব্যথা টিউমারের জন্যই হয়ে থাকে। তা হলে আমাদের প্রথমেই জানা দরকার মাথা বলতে কী বুঝি। সাধারণত মাথা বা হেড বলতে মস্তক বা শরীরের একেবারে ওপরের অংশ বোঝানো হয়। কাঠামোগত দিক থেকে যদি মাথা বা হেডকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন মাথার খুলি, মাংসপেশি ও অন্যান্য আবরণ যা মাথাকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছে। অন্য দিকে মাথার খুলির মধ্যে আছে ব্রেইন যা কিনা স্নায়ুবিশিষ্ট টিসু দিয়ে তৈরি এবং সেটারও সুন্দর আবরণ আছে। আর এই ব্রেইনের মধ্যে স্নায়ুবিশিষ্ট টিসু ছাড়াও আছে রক্তনালী এবং আরো অনেক সূক্ষ্ম জিনিস। সুতরাং পুরো ব্যাপারটাকে যদি এখন ব্যথার দিক থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে ওই সব কাঠামোর মধ্যে যেগুলো ব্যথায় স্পর্শতুল্য সেগুলোর ওপর কোনো না কোনোভাবে চাপ পড়লে ব্যথার উৎপত্তি হয়। এ ছাড়া মাথার আশপাশের কোনো জায়গায় স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটলেও মাথাব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়ে যেমন পাঁচ থেকে ১০-১২ বছরে মধ্যে মাথা ব্যথার কারণ সাধারণত এডিনয়েডের [নাকের পেছনের টনসিল বড় হলে] কারণে হয়ে থাকে। তাহলে দেখা যায় চধরহ ঝবহংরঃরাব এলাকা যেমন- মাথার আবরণ, স্কিন, মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশি, চোখ, কান ও নাকের বিভিন্ন অংশ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ তো গেল ব্রেইনের বাইরের কারণ। আর ব্রেইনের ব্যাপারগুলো যেমনÑ টিউমার, প্রদাহ, রক্তনালী কিংবা ব্রেইনের আবরণের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হলেও মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এখানে মাথাব্যথা বলতে মূলত মাথার খুলির বা ব্রেইনের বাইরের অংশগুলো নিয়েই আলোচনা। আর সেগুলোর মধ্যে নাক, কান, সাইনাস, ডিএনএস, কান, গলা, চোখ, দাঁতের কোনো রোগ, মাথা, মুখমণ্ডল, চোখ কিংবা ঘাড়ের মাংসপেশির সঙ্কোচন বা Sustained muscles Contraction মাথার শিরা-উপশিরার প্রদাহ কিংবা কোনো রকমের জটিলতা, মাথা, মুখমণ্ডল চোখ, কান, নাক, গলায় বা ঘাড়ের মধ্যে বা আশপাশের কোথাও আঘাতজনিত কারণ কিংবা টিউমার বা টিউমার জাতীয় রোগ হলে মাথা বা মুখমণ্ডলের যেকোনো জায়গায় ব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথার প্রকারভেদ : মাথাব্যথাকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে কিন্তু এখানে যেসব কারণে কিংবা যে ধরনের মাথাব্যথা খুবই সচরাচর হয়ে থাকে সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
টেনশন হেডেক : যখন কখনো অনেক সময় ধরে মাথার বা ঘাড়ের মাংসপেশি সঙ্কুুচিত অবস্থায় থাকে তখন এ ধরনের হেডেক হয়ে থাকে।
ভাসকুলার হেডেক : রক্তের নালীর স্ফীতি বা প্রসারণে এ ধরনের মাথাব্যথা যেমন মাইগ্রেইন বা ক্লাস্টার হেডেক। বস্তুত এই টেনশন ও ভাসকুলার হেডেক সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং সব মাথাব্যথার কারণের মধ্যে অন্যতম।
সাইনোসাইটিস এবং হেডেক : বিভিন্ন ধরনের সাইনাসের প্রদাহে মাথার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হয়ে থাকে।
ওকুলার হেডেক : মাথার মধ্যে কিংবা মাথার বাইরে কোনো টিউমার বা টিউমারজাতীয় রোগ কিংবা প্রদাহ হলেও মাথাব্যথা হতে পারে।