খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৫ : মানুষের বানানো যন্ত্রেরও থাকবে মানুষের মতোই বুদ্ধি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে এমন যন্ত্র হরহামেশা পাওয়া গেলেও, বাস্তবজীবনে এখনও এর দেখা মেলে নি। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরাও চালাচ্ছেন নানা গুবেষণা। এবার নিয়ে আশার নতুন মুখ দেখালেন একদল বিশেষজ্ঞ। ২০৫০ সালের মধ্যে পুরোপুরি মানুষের মতো বুদ্ধিসম্পন্ন যন্ত্র পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস করেন তারা। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম বা মানুষের মতো তথ্য সংগ্রহ করে শিখতে সক্ষম এমন যন্ত্র ইতোমধ্যেই চলে এসেছে। এখন বিট আর বাইটের বাইরের দুনিয়া নিয়েও চিন্তা করতে পারে কম্পিউটার। ফেই-ফেই লি নামের এক পিএইচডি শিক্ষার্থীর কথা জানা যায় বিবিসির এক প্রতিবেদনে। গবেষণার পাশাপাশি তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার ভিশন ল্যাবের পরিচালকও। রোবটের জন্য ইলেক্ট্রনিক চোখ আর দেখার যন্ত্র বানানো ও তাদের পরিবেশ বুঝতে পারাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। চলতি বছর এক সম্মেলনে লি বলেন, “একটি শিশুকে বিশেষত একদম শুরুর বছরগুলোতে কেউই একজন শিশুকে বলে না কীভাবে দেখতে হয়। তারা বাস্তব-অভিজ্ঞতা আর উদাহরণ কাজে লাগিয়ে শিখে নেয়। যদি আপনি একটি শিশুর চোখকে একজোড়া বায়োলজিক্যাল ক্যামেরা হিসেবে বিবেচনা করেন, তারা প্রতি ২শ’ মিলিসেকেন্ডে একটি করে ছবি নিচ্ছে। সে হিসাব অনুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে একজন শিশু ১০ কোটির মতো বাস্তব ছবি দেখছে। শিক্ষার উদাহরণ হিসেবে এটা বিশাল।” একই উপায়ে কম্পিউটারকেও শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি ও তার এক সহকর্মী এজন্য এক বিশাল কাজ হাতে নিয়েছিলেন। বাস্তব উদাহরণ হিসেবে কম্পিউটারের সামনে তুলে ধরতে ইন্টারনেট থেকে এলেমেলোভাবে বিভিন্ন ধরনের ১শ’ কোটি ছবি নেন তারা। কম্পিউটার কোনো কিছুর ছবি যথেষ্ট পরিমাণে দেখলে, তা বাস্তব জীবনে চিনতে পারবে- এমন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ইমেইজ নেট নামের এক ডেটাবেইজ তৈরি করেছেন তারা। দেড় কোটি ছবির এই ডেটাবেইজে ছবিগুলোকে প্রতিদিনকার ইংরেজি শব্দের মাধ্যমে ২২ হাজারেরও বেশি ভাগে ভাগ করে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর ইউনিভার্সিটিটির পক্ষ থেকে গুগল, মাইক্রোসফট আর চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বাইডুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা করে দেখে তাদের সিস্টেমগুলো কীভাবে ইমেইজনেটকে কাজে লাগায়। শেষ কিছু বছর ধরে তারা বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছে। সিস্টেমগুলোর ছবি চেনায় মাত্র ৫ শতাংশের মতো ভুল ছিল। কম্পিউটারকে ছবি চেনাতে কৃত্রিম ব্রেইন সেলযুক্ত কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেছেন লি ও তার দল। এ সেলগুলো মানুষের ব্রেইনের মতো একই উপায়ে কাজ করে। সেই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে নিউট্রাল নেটওয়ার্ক, যা দিয়ে এখন প্রায় পুরোপুরি ঠিকভাবে ছবি চিনতে পারছে কম্পিউটার। ইমেইজ-রিডিং মেশিন এখন বেশিরভাগ সময়ই সঠিক ছবির ক্যাপশন দিতে পারে। লি বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা কম্পিউটারকে কোনো কিছু দেখতে শিখিয়েছি, এমনকি কোনো ছবি দেখার পর তা নিয়ে সাধারণ কিছু কথা বলতেও শেখানো হয়েছে।” নিজের পারিবারিক এক অনুষ্ঠানের একটি ছবি দেখিয়ে কিছু বলতে হলে হলে, তার মেশিনটি বলে, “কেকের সামনে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।” এ নিয়ে লি বলেন, “কম্পিউটার যা দেখতে পায় নি তা হচ্ছে, এটি একটি বিশেষ ইতালিয়ান কেক যা কেবল ইস্টারের সময় বানানো হয়।” মেশিনকে পুরো দৃশ্য, মানুষের আচরণ আর সম্পর্কগুলো বুঝানো তাদের পরবর্তী লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তারা। সার্জিক্যাল অপারেশন বা দুর্যোগে মানুষকে সহায়তা করতে ‘সিয়িং’ রোবট বানানোকে প্রধান লক্ষ্য বলে জানান তিনি। অনেক আগে থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এখন এর উন্নতির ধারা দেখলে সহজেই বুঝা যায় যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্ভবত সোনালি যুগে প্রবেশ করছে।