খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫: উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর দেশের বাইরে চাকরি নিয়েছে মেয়েটি। কিন্তু ছুটিছাটায় বাড়ি আসলেই তাঁকে শুনতে হয় হাজারটা প্রশ্ন— ‘তোমার বয়স হয়ে যাচ্ছে? কবে বিয়ে করবে? আরেকটু দেরি হলে তো কেউ বিয়েই করবে না!’ এমন হাজারো প্রশ্নের তোড়ে রীতিমতো ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! যেন তাঁর এই পড়ালেখা, যোগ্যতা এসবের কোনো দামই নেই! ‘কুড়িতে বুড়ি’ কথাটি মজা করে বললেও বাস্তব জীবনে শুনলে কার না অস্বস্তি লাগে!
‘আমি কোথায় চাকরি করি, কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করলাম, এসব জানার আগ্রহ নেই কারও। কিন্তু কেন বিয়ে করছি না? এ নিয়ে গবেষণার যেন কোনো অন্ত নেই। আমার মানসিক না শারীরিক সমস্যা, সেটাও হয়ে ওঠে আলোচনার বিষয়। শুধু আমি নই, সঙ্গে পরিবারকেও এ কারণে বিব্রত হতে হয়।’ এমনটাই জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেয়েটি।
আশপাশে একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, আমাদের দেশের মেয়েরা এখন সব জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছে। পেশাগত ক্ষেত্রে দিচ্ছে দক্ষতার পরিচয়। অনেক মেয়েই চায় নিজের ক্যারিয়ার গুছিয়ে একটু সময় নিয়ে বিয়ে করতে। আর সে সময় কৌতূহলী প্রশ্নগুলো তাঁকে বিব্রত করে।
সীমন্তি হাসান একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী। তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারের বড় সন্তান হওয়াতে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল আমাকে। সেশনজটের কারণেও বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করতে বাড়তি সময় লেগেছে। কিন্তু দেরিতে বিয়ে করার কারণে অনেক কথাই শুনতে হয়েছে আমাকে।’ তিনি বলেন, ‘আমি যদি পরিবারের কথা না ভেবে শুধু নিজের কথা ভাবতাম, তাহলে হয়তো এরাই বলত, আমি স্বার্থপর। পরিবারের কথা ভেবেই যে আমি বিয়ে করতে দেরি করেছি, এটা কেউ মনেই রাখেনি।’
আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮। এই বছরের মার্চে বিয়ের বয়স ১৮ থেকে ১৬ করার সরকারি পরিকল্পনা তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। আমরা বলি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে। আগে মেয়েটি লেখাপড়া শিখে নিজের মতো করে জীবন শুরু করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। অথচ সেই বয়সেই বিয়ের তোড়জোড় করলে তা কী এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা নয়?
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন মনে করেন, এটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ভাবনা। এ ভাবনা প্রভাবিত করে নারীকেও। নিজের জীবনসঙ্গী বাছাই করার স্বাধীনতা থাকতে হবে মেয়েটার। পরিবারকে তাঁর মতামতের মূল্য দিতে হবে। তবে এও ঠিক, অনেক মা-বাবা নিরাপত্তাহীনতা বোধ থেকে মেয়ের তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একদিনে তো এই ধারণার পরিবর্তন আসবে না। ধীরে ধীরে আসবে।
এখন মেয়েরা তাঁদের স্বপ্নের ডালপালা অনেক দূর ছড়িয়ে দেয়। নিজের স্বপ্ন পূরণে অনেক বাধাই আসতে পারে। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’— এ কথাটি ভুলে যেতে হবে। ‘কে তোমাকে বিয়ে করবে?’ এ ধরনের কথা কেউ বললেও সে কথাকে পাত্তা না দিলেই হয়। যদি নাছোড়বান্দা কেউ এসে আপনাকে বিরক্ত করতে থাকে, তাহলে আপনি কী চান, সেটি তাকে ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনার চাওয়াটা পরিবারকে খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে, যেন কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়। সিদ্ধান্তটা আপনার, অন্য কারও নয়।