খোলা বাজার২৪ ॥প্রকৃত গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত দেশে জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। অর্থাৎ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে যাকে নেতা নির্বাচিত করবে তারাই জনগণের আশা-আকাঙ্খার সাথে মিল রেখে দেশ পরিচালনা করবে। আমাদের এই দেশ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। সংবিধান অনুযায়ী এ দেশেও জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু এ দেশের জনগণ কি দেখল ০৫ ই জানুয়ারী ২০১৪ তে। ঐ দিন ভোট দেওয়া তো দুরের কথা, তার আগে থেকেই জনগণ অবরুদ্ধ; ঢাকা সব জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচনে সাধারন জনগন সরকারী (অওয়ামী লীগ) দলের প্রার্থীদের দৌরাতেœ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারে নি। অথচ র্পাশ্ববর্তী জেলা থেকে বাসভর্তি লোক এনে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নাকের ডগার উপর দিযে তারা সিল মেরে নিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী বাস আটকায় নি বা কোন টু শব্দ করে নি। অথচ নেতা নির্বাচিত হলো।
এভাবে মন্ত্রী, এমপি নেতা নির্বাচিত’র এই ঘটনাবহুল দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে গেল কিছু ঘটনা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর র্দুবৃত্তদের গুলিতে রাজধানীর গুলশানে ইতালী নাগরিক সিজার তাভেলা নিহত হন। ঘটনা ঘটার সময় রাস্তার লাইটগুলো বন্ধ ছিল। ঘটনা ঘটার পর পুন:রায় লাইটগুলো জ্বলছিল। এর ঠিক পাঁচ দিনের মাথায় ০৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও দিনের বেলায় খুন হন। এই সব ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশ শিরোনাম হয়। ঘটনাগুলো ঘটার সময় ভোটারবিহীন এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশের বাহিরে ছিলেন। সেখানে থাকা অবস্থায় এবং পরে দেশে ফিরে সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র নেতাদের তথা চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অথচ পুলিশ-প্রশাসন তখনও ঘটনার কোন কুল-কনিারা বের করতে পারে নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী,এমপি’রা ঘটনা ঘটার সাথে সাথে বিভিন্ন বক্তব্যে বলতে থাকলেন, ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। পত্রিকার রির্পোট মতে কিছু বিদেশী সংস্থা আগে থেকেই নাকি হামলা সর্ম্পকে সরকারকে সর্তক করেদিয়েছিল। যেখানে পুলিশ-প্রশাসন বা তদন্ত কমিটি তখনও কোন কুল-কিনারা বের করতে পারে নি সেখানে প্রধানমন্ত্রী, মুন্ত্রী- এমপি’রা ঘটনা ঘটার সাথে সাথে কিভাবে বলেন, ঘটনা কারা ঘটিয়েছে ? তারা যদি এতই জানেন তাহলে আগাম তথ্য পেয়েও কেনো আগেথেকে নিরাপত্তা’র ব্যবস্থা নিল না ? খুন হওয়ার সময় কেনো রাস্তার লাইটগুলো বন্ধ ছিল এখনও পর্যন্ত খুজেঁ বের করল না ? তা না করে তারা বি এন পি’র উপর মিথ্যাভাবে দোষ চাপালেন। আর সে অনুযায়ী ঢাকায় এক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই এম এ রফিককে আটক করে (পরিবারের দাবি অনুযায়ী কিন্তু প্রশাসনের অস্বীকার) এবং বংপুরে বিএন পি নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ভাই স্থানীয় বি এন পি নেতা রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লব সহ আরো এক বিএনপি নেতাকে আটক করে পুলিশ-প্রশাসন। কোনো তদন্ত চাড়াই, সত্য-মিথ্যা নির্ণয় ছাড়াই, প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত ছাড়াই পুলিশ-প্রশাসন সরকারের তল্পিবাহক ,তাবদার, অনুগত দাস হিসেবে বিএনপি নেতাদের দোষ দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। এ যেনো সাজানো গোছানো সরকারী নির্দেশ মতো কাজ করা। সম্প্রতি গুলশান ইতালী নাগরিক তাভেলা হত্যাকান্ডে বিএনপি নেতা কমিশনার এম এ কাইয়ুমের নাম প্রকাশ করেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী। এর পরে এও হয়তো প্রকাশ করবে এর পিছনে ল-নের এক নেতা জড়িত-ঘটনা ঘটার পর অযাচিত, মিথ্যাচারিতা করে সরকার থেকে প্রশাসন যেভাবে দোষ দেওয়া শুরু করেছে; তাতে অমূলক কিছু নয়। জনগণ কখনো কিছুতেই এমন বক্তব্য আশা করে না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য পূরন হয়তো হবে কিন্তু জনগন মনে-প্রানে বিশ্বাস করবে না, তারচেয়েও সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে সরকারের রাজনেতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে গিয়ে প্রকৃত অপরাধী আড়ালে থাকবে এবং তারা এই রকম অপর্কম আরো চালাবে, ফলে এক সময় নিয়নত্রনের বাহিরে চলে যেতে পারে।
সরকার ও পুলিশ-প্রশাসন যে একই সুরে কথা বলে তারও নজির আছে। যেমন-২২ অক্টোবর রাতে গাবতলীতে তল্লাশীচৌকিতে এক সন্দেহবাজনের ব্যাগ তল্লাশির সময় এএসআই ইব্রাহিম মেল্লাকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। পুলিশ থেকে কোনো তদন্ত ছাড়াই তাৎক্ষনিক বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র হত্যায় জড়িত।
দেশে কোনো কিছু ঘটলে কোনো সুহ্দ ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা যদি সত্য বিবৃতি বা রির্পোট প্রকাশ করে তখন যেনো মনেহয় সরকারের গাঁ জ্বালা করে। যেমন-সম্প্রতি টিআই বি রির্পোট প্রকাশ করে যে,“বর্তমান সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালা, নতুন নির্বাচনই সমাধান”। অমনি সরকারের গাঁ জ্বলা শুরু হয়েছে। তারা বলা শুরু করছে-‘টিআই বি ও আই এস একই সুরে গাঁথা’।‘টিআইবি বিএনপি’র অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে’। অর্থাৎ সরকার সর্ম্পকে কোন সত্য শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারন করা যাবে না। যে কেউই হোক সত্য উচ্চারন করলে বা কোন টু শব্দ করলে সরকার ও তার লোকজন তাকে হেঁয় প্রতিপন্ন করেই ছাড়বে। মনেহয় সরকার এক্কেবারে ধোঁয়া তুলসি পাতা। অথচ তারা ০৫ জানুয়ারী ২০১৪ ‘জাতীয় নির্বাচন’ এবং ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ‘তিন সিটি নির্বাচন’ যে ভাবে করলো তাতে তাদের একটা ‘সাংবিধানিক বিবেক থাকা উচিত’। কারন ঐ নির্বাচন গুলোতে জনগণের কোনো প্রকৃত গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোটাধিকার ছিল না। নির্বাচন ছিল জবর-দস্তি-দখল মূলক, ১৫৩ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত। জনগণের কাছে তাদের যেনো কোনো জবাবদিহি নেই। তাই তাদের দ্বারা গঠিত সরকার যা খুশি তাই করছে। প্রশাসনও সেভাবে নিজস্ব , দাসভুক্ত লোক দ্বারা সাজিয়ে নিয়েছ্।ে তারা কথায় কথায় বিএনপি নেতা-নেত্রীদের দোষ দিচ্ছে, মিথ্যা মামলা-হামলা করে জেলে নিচ্ছে-রিমা-ে নিচ্ছে, মেরে হাড় ভেঙ্গে দিচ্ছে, গুলি করে পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে, জোর করে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করছে। এ যেনো “হীরক রাজা”র দেশ। যা খুশি তাই করা যায় এবং জোর করে তারা তাই করছে। কিন্তু কখনই এমনটি জনগণ আশা করে না। সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা সুষ্ঠ , সঠিক ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের দ্বারা প্রকৃত অপরাধী বের হয়ে আসুক এটাই জনগন চায়। অযাথা মিথ্যাভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা-নেত্রীদের দোষ দেওয়া, মামলা-হামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-অপহরণ করা ঠিক না। বিএনপি নেতা-নেত্রীদের উপর অওয়ামী সরকারের এমন মিথ্যা দোষারুপের ও দমন-পীড়নের ফলে জনগণের মনে মনে আজ এক বাংলা ফিল্মের গানের কথা ধ্বণিত হচ্ছে-
“সবকিছুরি শুরু আছে, শেষ হয়ে যায়
শ্রাবন এসে ঝরে ঝরে সেও ফিরে যায়
দু:খের শেষে সুখ এসে দুয়ারে দাড়ায়”।
………………………………………কবে আসবে জনগণের দুয়ারে সেই সুখ, সেই গণতন্ত্র।