Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
অ-

sah...................................খোলা বাজার২৪ ॥  ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস। চীনের রাজধানী পেইচিংয়ে চলছে বিশ্ব মহিলা সম্মেলন। বহু দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সম্মেলনের মূল অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কমিটিতে চলছে ইস্যুভিত্তিক আলাপ-আলোচনা, তর্কবিতর্ক। প্রয়াস চলছে অনুপুঙ্খ পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রতিটি ইস্যুতে একটি সমঝোতা বা ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য। বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে একটি বড় আকারের সরকারি দল। এ ছাড়া অনেক এনজিও নিজস্ব উদ্যোগে তাদের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। তারা তাদের নিজ সংগঠনের এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। একটি কমিটিতে প্রায় তিন দিন তিন রাত ধরে আলাপ-আলোচনা, বোঝাপড়া চলছে; কিন্তু সম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না।

বিতর্কের বিষয় হচ্ছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ছেলে-মেয়ের মধ্যে বণ্টনের নীতিমালা প্রণয়ন। আফ্রিকান দেশগুলোর প্রতিনিধিদলে খ্রিস্টান ও অমুসলিম তরুণ-তরুণীদের প্রাধান্য দৃশ্যমান। তাদের দাবি, উপর্যুক্ত সম্পত্তিতে ছেলে-মেয়েদের সমান অধিকার থাকবে, সম্পত্তি বণ্টনে তাদের মধ্যে তারতম্য করা যাবে না। পক্ষান্তরে ইরানের নেতৃত্বে মুসলমান দেশের প্রতিনিধিরা একবাক্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে সম্পত্তি বণ্টনে সম-অধিকার ফর্মুলা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী, এটি কোনো রকমেই গ্রহণযোগ্য হবে না। দুই পক্ষই অনড়। বহু বিকল্প ফর্মুলায় সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। সমাধানের পথ পাওয়া যাচ্ছে না। তবু সবাই আশাবাদী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে। হলোও তাই। তিন দিন তিন রাতেরও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থানে একটি সমাধানের পথ বেরিয়ে এলো। সম্মত ফর্মুলা সম্মেলনের ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত হলো।

আরো একটি ঘটনা মনে পড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) কর্মরত থাকা অবস্থায় জাপান সরকারের সঙ্গে ‘নেগোসিয়েশন’ ও কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করেছি। একটি নেগোসিয়েশনে জাপানিপক্ষ চুক্তির যে খসড়া দিল তা ছিল সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য, পড়লে রীতিমতো মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ইআরডির মন্ত্রী ছিলেন মরহুম সাইফুর রহমান। তাঁকে খসড়াটি দেখানো হলে তিনি রেগে আগুন; বললেন, এ চুক্তি হবে না, কোনো নেগোসিয়েশনের দরকার নেই। নেগোসিয়েশন বাতিল করা হোক। কিছু সময় নিয়ে তাঁকে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে সক্ষম হলাম যে নেগোসিয়েশন বাতিল করলে সব দোষ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে নেগোসিয়েশন চালিয়ে যাওয়া। আমরা আমাদের পছন্দমতো তাদের খসড়াতে যত ইচ্ছা সংশোধনী আনব। তারা মেনে নিলে ভালো; না নিলে নেগোসিয়েশন বিফল হবে, তাতে আমাদের ওপর কোনো দোষ পড়বে না। বরং এর দায় জাপানিপক্ষকে বহন করতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিমরাজি হয়ে মন্ত্রী বললেন, ‘তোমাদের সংশোধনী প্রস্তাবে জাপান রাজি হবে না। তবু চেষ্টা করে দেখতে পারো।’ মন্ত্রীর সম্মতি পেয়ে আমাদের সংশোধনী প্রস্তাবসহ জাপানিপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনায় অবতীর্ণ হলাম। আশ্চর্যের ব্যাপার, জাপান আমাদের সব সংশোধনী প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। খবর শুনে মন্ত্রী বেজায় খুশি। তাঁর সম্মতি নিয়ে আমরা সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে সমঝোতা দলিল স্বাক্ষর করলাম। আলোচনার ফল হলো বড়ই ইতিবাচক।

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো মতপার্থক্য নিরসন করা যায়। প্রথম দিকে আলোচনায় দুই পক্ষ, ক্ষেত্রবিশেষে তিন-চার পক্ষও হতে পারে, বেশ দূরত্বে অবস্থান করে। এদের মধ্যে কোনো কোনো পক্ষ অনড় অবস্থান গ্রহণ করে। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষের প্রকৃত অবস্থান, তাদের অসুবিধাগুলো, তাদের নমনীয় জায়গা ও তাদের অবস্থানের কার্যকারণ বোঝা যায়। একজন গতিসঞ্চারক বা ‘ফ্যাসিলিটেটর’ থাকলে ভালো হয়, তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারেন। সব পক্ষের স্পর্শকাতর দিকগুলোর প্রতি সম্মান রেখে সমঝোতায় পৌঁছানোর গুরুত্ব সবার কাছে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারলে আলোচকরা ধীরে ধীরে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করতে থাকেন। এর জন্য প্রয়োজন হয় নতুন নতুন শব্দ ব্যবহার এবং বহুবার নতুন অবয়বে বাক্য গঠন, যাকে আলোচনার পরিভাষায় বলা হয় নতুন ‘ফর্মুলেশন’। শব্দ ও বাক্যের যথাযথ মিশ্রণে সমস্যার পাথর অল্প অল্প করে গলতে শুরু করে। পারদর্শী মুন্সিয়ানার চূড়ান্তরূপে প্রণীত হয় এমন এক ‘ফর্মুলেশন’, যা মতপার্থক্যের শেষ পাথর টুকরাকেও গলিয়ে ফেলে। তৈরি হয় সমঝোতার শান্তি সুধা।

 

যেহেতু মানুষের চিন্তা করার সামর্থ্য রয়েছে এবং পছন্দ-অপছন্দ করা তার স্বভাবজাত আচরণ হিসেবে স্বীকৃত, সেহেতু ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী পর্যায়ে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও পরমত পর্যালোচনা করার প্রবণতা মানুষকে সমঝোতার দিকে এগিয়ে নেয়। এর অভাবে মানুষ সংঘাত-সহিংসতার পথে ধাবিত হয়। সংঘাত-সংঘর্ষ সব ক্ষেত্রে সব অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে অপ্রয়োজনীয়- এমনটি বলা ঠিক হবে না। কিন্তু এ কথাও সত্য যে দু-একটি ক্ষীণকায় ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ক্ষেত্রে সমঝোতার মাধ্যমে সংঘর্ষ এড়ানো যায়, যার ফলে বিপুল ধন-সম্পদ বিনাশ ও প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রনায়ক, সমাজ সংস্কারক ও ধর্ম প্রবর্তক নিজেদের প্রয়োজনে যুদ্ধ করেছেন, আবার যুদ্ধের মধ্যেও সন্ধি করার জন্য প্রস্তুত থেকেছেন। নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা ব্যবহার করে যথাসময়ে সন্ধি করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। পক্ষান্তরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ উপেক্ষা করে নিজ সংগঠন ও প্রতিপক্ষের শক্তির অনুপুঙ্খ বিচার-বিবেচনা না করে সংঘর্ষ-সংঘাতকে বেছে নেওয়ার কারণে একটি দুর্ধর্ষ গেরিলা বাহিনী থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে তোলা আন্দোলন ও সংগঠন ধ্বংস হয়ে গেছে এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে রয়েছে।

আলোচনার ব্যাপারে গতিসঞ্চারক বা ‘ফ্যাসিলিটেটর’-এর কথা বলেছিলাম। ‘ফ্যাসিলিটেটর’-এর প্রথম কাজ হচ্ছে বিবদমান পক্ষগুলোর সঙ্গে বারবার আলাপ-আলোচনা করে তাদের সমঝোতা (Negotiation) টেবিলে বসানো। এটি একটি দুরূহ কাজ; শুরুতে কোনো পক্ষই আলোচনায় বসতে চায় না। উল্টো ফ্যাসিলিটেটরকে তারা সন্দেহ করতে থাকে। ফ্যাসিলিটেটরকে তাই প্রথমে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। সুনামধারী ব্যক্তি বা দেশ এ কাজটি ভালো করতে পারে। তাদের মর্যাদা ও ক্ষমতাও এ ক্ষেত্রে কিছুটা কাজ করে। সুনামধারী প্রতিষ্ঠিত দেশ হিসেবে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসের নাম উল্লেখযোগ্য। আলোচনা সংগঠন ও সম্পন্ন করার ব্যাপারে এসব দেশ ইতিমধ্যে কিছু কৃতিত্ব অর্জন করেছে। ক্ষমতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য কয়েকটি আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে সম্পৃক্ত রয়েছে। ছোটখাটো সফলতাও রয়েছে।

সমঝোতা কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ফ্যাসিলিটেটর, আলোচকরা ও আলোচকদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ- সবাই কৃতিত্বের ন্যায্য দাবিদার। বাইরের লোকজন অবশ্য ফ্যাসিলিটেটর ও আলোচকদের সম্পর্কে বেশি জানে। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সাধারণত আড়াল থেকে তাদের সুপ্রভাব প্রয়োগ করে। তারা যদি সুপ্রভাব প্রয়োগ না করে কিংবা বিভিন্ন পর্যায়ে নানারূপ বাধা-বিপত্তির সৃষ্টি করে, তবে আলোচকরা এগোতে পারেন না। আমার জীবনে এ ধরনের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। আলোচনা সফল করতে হলে তাই দৃশ্যমান সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং পর্দার আড়ালে প্রভাবশালী নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, এক কথায় সব Stakeholderকে অর্থবহভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল অথবা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ নিরসনকল্পে আলোচনা-সংলাপ আয়োজনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে এর আগে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সংলাপের আয়োজকদের বড়জোর সমাজহিতৈষী মুরব্বি-মাতব্বর হিসেবে দেখা হতো। জাতীয় পর্যায়ে কালেভদ্রে এ কাজে যাঁরা প্রয়াস পেয়েছেন তাঁদের স্বঘোষিত মুরব্বি হিসেবে বেশির ভাগ সময়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেছে এঁরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছেন। তাঁদের প্রচেষ্টা ও প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে। তাঁরা হতাশ হয়েছেন।

এ বছর নোবেল পুরস্কার কমিটি তিউনিসিয়ার বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে সফলভাবে আলোচনার টেবিলে বসানোর জন্য সে দেশের চারটি আয়োজক সংগঠন বা ‘ফ্যাসিলিটেটর’ গ্রুপকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সংলাপের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে তার যথাযোগ্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। একই সঙ্গে সংলাপের চার ফ্যাসিলিটেটর শ্রমিক, নিয়োগকারী, আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতা যথাক্রমে হুসেইন আব্বাসি, উইদেদ বোচামাওই, মোহাম্মদ ফাদেল মাহমুদ ও আবদে সাত্তার বেন মুসাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে ‘সংলাপ আয়োজক’-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা তার উপযুক্ত মর্যাদা লাভ করেছে। সংলাপের আয়োজক ব্যক্তিরা সাধারণত তাঁদের দেশ বা সমাজের অতি উচ্চমাত্রার ধীশক্তিসম্পন্ন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও উচ্চমানের কৌশলী হয়ে থাকেন। একই সঙ্গে তাঁদের হতে হয় অসীম ধৈর্যশীল, উদ্দেশ্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এবং স্থির লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে নিরন্তর নিষ্ঠাবান। সংলাপ আয়োজন ও সম্পন্ন করার কার্যাবলি চলে গোপনে, লোকচক্ষুর আড়ালে দীর্ঘ সময় ধরে। আয়োজকদের সাধারণ রীতিতে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। প্রায় সব ক্ষেত্রে তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে নিজেদের সংগঠনের যৎকিঞ্চিৎ আর্থিক সমর্থনে অথবা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে এ কাজ সম্পন্ন করেন। সংলাপ সফলভাবে সম্পন্ন না হলে তাঁদের কার্যাবলি লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়; মহৎ প্রচেষ্টা গ্রহণের জন্য তাঁরা কোনো প্রকার কৃতিত্বের দাবি করতে পারেন না। এ রকম একটি অনিশ্চিত, কষ্টসাধ্য ও আর্থিক দিক থেকে অনাকর্ষণীয় কাজে সহজে কেউ জড়াতে চান না। যাঁরা জড়ান তাঁরা আসলে ব্যতিক্রমধর্মী, অসাধারণ ব্যক্তি।

আমাদের দেশে সফল সংলাপ আয়োজনের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দুই প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীর একযোগে কাজ করার ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা। সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ ও তাঁর সহযোগীরা দুই নেত্রীকে এক জায়গায় বসিয়ে এ সমঝোতায় আনতে পেরেছিলেন যে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁদের দল যুগপৎ একই কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। নেত্রীদ্বয়ের এ ঘোষণা বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছিল এবং মোক্ষম কাজে লেগেছিল। দুই নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে সব বিরোধী দলের কর্মীবাহিনী ও জনগণ এরশাদের পতন নিশ্চিত করেছিল। সেই সমঝোতা সৃষ্টিতে ফয়েজ ভাই ও তাঁর সহযোগীরা জোরালো ভূমিকা রেখে দেশপ্রেমের যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন, জাতি আজও প্রশংসার সঙ্গে তা স্মরণ করে। বাংলাদেশের প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাসে এটি সত্যি একটি বড় মাইলফলক।

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনীতি চলে আসছে। পরিস্থিতির অবনতি হয়ে এটি এখন নিশ্চিহ্নকরণের রাজনীতিতে (Politics of annihilation) পর্যবসিত হয়েছে। দেশের মানুষ শঙ্কিত। তারা অস্বস্তিতে আছে। সহিংস রাজনীতি তারা চায় না। তারা চায় নিরেট উদার রাজনীতি (Pristine liberal Democracy), যেখানে ধৈর্য, পরমতসহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক আস্থার ওপর ভর করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় অনৈক্য চূড়ান্ত পর্যায়ে ঐকমত্যে বিলীন হবে। সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে বলছি, ‘আমরা তিউনিসীয় নাগরিক সংগঠন চতুষ্টয়ের সঙ্গে একমত যে এটা অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে এই খবর রটাল, সংলাপ যেকোনো সমস্যার সুরাহা দিতে পারে। কিন্তু হিংসা কাউকে কোথাও পৌঁছে দেবে না।’

আমি যত লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলি তাদের প্রায় সবাই শান্তি চায়, তারা হিংসা চায় না। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে করজোড়ে আমাদের অনুরোধ তাঁরা যেন বলেন, ‘ক্ষমা করো।’ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অশান্ত পরিবেশের মধ্যে সেই হোক শান্তির পুণ্যবাণী।

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান