Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

59খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৪ নভেম্বর ২০১৫: এখনও মানুষের কাছে খুব একটা পরিচিত হয়ে উঠেনি ভার্চুয়াল মুদ্রা বিটকয়েন। কিন্তু আর হয়ত খুব বেশিদিন বাকি নেই যে সবাই বিটকয়েনের মাধ্যমেই তাদের সারবে তাদের প্রয়োজনীয় লেনদেন। বিটকয়েনের প্রচলন বাড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তোড়জোড় অনেকটা সেদিকেই ইঙ্গিত করে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে আমেরিকান এক্সপ্রেস, বেইন ক্যাপিটাল, ডেলোয়েট, গোল্ডম্যান স্যাকস, মাস্টারকার্ড, নিউ ইয়র্ক লাইফ ইন্সিওরেন্স কোম্পানি, নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিটকয়েন খাতে লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। সব মিলিয়ে বিটকয়েনসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে ১শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে, ব্যাংকগুলো এই মুদ্রায় বিনিয়োগ করছে না, সব বিনিয়োগই যাচ্ছে বিটকয়েনের প্রচলন বাড়ায় এমন প্রযুক্তি খাতে।
এই প্রযুক্তির ফলে একসময় বদলে যাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, স্টক, অর্থ লেনদেন, শ্রমিকের বেতন দেওয়াসহ সব আর্থিক লেনদেনের রীতি।
বিটকয়েন খাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো ‘ব্লকচেইন’ নামে এক অসাধারণ পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সারাবিশ্বের সব লেনদেন যাচাই করা যায়। বিটকয়েন নেটওয়ার্কে একটি পরিপূর্ণ রেকর্ড লগ থাকে। নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা বিশ্বের সব কম্পিউটারে এই রেকর্ড একই রকম থাকে, আর প্রতিটি লেনদেনের পরপরই এটি কিছুক্ষণ পরপর আপডেট হয়। বর্তমানে প্রচলিত ব্যাংকিং ধারায় সব রেকর্ড কেন্দ্রীয়ভাবে রাখা হয়। এ কারণে কোনো একটি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক হ্যাক হলে, সহজেই এর ডেটা ভুয়া বানিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্লকচেইনের কারণে সব কম্পিউটারে একই রেকর্ড থাকায়, কোনো ভুয়া রেকর্ড দেওয়া হলে তা সঙ্গে সঙ্গেই ধরা যাবে। বিটকয়েনের এমন সুবিধাই ব্যাংক আর অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির জন্য লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
ইতোমধ্যে, স্টক ব্যবসায় খাত আরও কার্যকরী ও নিরাপদ করে তুলতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জ নাসডাক।
ইলেক্টনিক চুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডকুসাইন আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভিসার সঙ্গে যৌথভাবে একটি চুক্তি উন্মোচন করে। এ চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানদুটি এখন কাগজের কাজ কমিয়ে তা ব্লকচেইনের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ‘স্মার্ট কন্ট্রাকটস’ নামের নতুন উদ্যোগ উন্মোচন করবে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। বিটকয়েন নেটওয়ার্কের বাইরে হলেও ব্লকচেইনের মতো একই কাজ করে এমন প্রকল্প ইথারিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কম্পিউটার সার্ভার ভাড়া দেওয়ার খাতে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাবে মাইক্রোসফট।
মজার বিষয় হচ্ছে, ব্লকচেইন প্রযুক্তির এই ধারণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মগজে এমন ভাবেই ঢুকেছে যে তারা এখন নিজেদের জন্য ছোট আকারের ‘প্রাইভেট ব্লকচেইন’ বানাতে পরীক্ষা চালানো শুরু করেছে।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা দেয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চেইন। চলতি বছরের শুরুতে ক্যাপিটাল ওয়ান, সিটি ভেনচার্স, নাসডাক স্টক এক্সচেঞ্জ আর ভিসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ৩ কোটি ডলার উঠায় প্রতিষ্ঠানটি।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থবিষয়ক সম্মেলন মানি২০২০। আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ওয়ানের জরিপ অনুযায়ী, সম্মেলনে উপস্থিত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মনে করেন আর্থিক সেবাখাতে আগামি তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বিটকয়েনের ব্লকচেইন প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় প্রভাব রাখবে।
অন্যদিকে, ভার্চুয়াল মুদ্রাটিকে ভালভাবে নেয়নি ‘মুরুব্বি’ ঘরানার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কোনো দেশের সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হওয়ায় আর এটি সম্পূর্ণ গোপনভাবে বানানো অনলাইন মুদ্রা হওয়ায়, এটিকে বিপজ্জনক হিসেবে দেখছে তারা।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ‘ডিজিটাল মুদ্রাখাত আর ব্লকচেইন পরিবেশে সবচেয়ে বড় প্রাথমিক বিনিয়োগ পোর্টফলিও’ হিসেবে দাবি করে যাত্রা শুরু করেছে ডিজিটাল কারেন্সি গ্রুপ। মেইন ক্যাপিটাল, মাস্টারকার্ডসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় এ গ্রুপ তৈরিতে নেতৃত্ব দেন ব্যারি সিলবার্ট।
সিলবার্টের তহবিল সহায়তায় বিটকয়েনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এরই মধ্যে ১শ’ কোটি ডলার উঠেছে। এমন বিশাল অংক আর্থিক উদ্ভাবনী খাতে বিটকয়েনের গুরুত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ভেনচার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান ব্লকচেইন ক্যাপিটালের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা উইল ও’ব্রেইনের কথায় তা-ই প্রকাশ পায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন আগ্রহ দেখে মনে করাই যায়, সামনের কয়েক বছরেই হয়তো কমে যাবে প্রচলিত মুদ্রার ব্যবহার, আর্থিক সব লেনদেনের ধারায় আসবে ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রচলন।