খোলা বাজার২৪ ॥সোমবার, ৯ নভেম্বর ২০১৫:
কালো জিরো পয়েন্টে ফুলে ফুলে ভরে যাবে শহীদ নূর হোসেন চত্বর। গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়ে আজো তার আত্মা অঝোরে কাঁদছে। স্বৈরাচার আর আমের আচার এক হয়ে গণতন্ত্র ধ্বংসের মহাযজ্ঞ চলছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১০নং মহা বিপদসংকেত চলছে। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কেউ নিরাপদে নেই। উৎসাহ নেই বিনিয়োগে, উৎকন্ঠা বর্তমান পরিস্থিতিতে, ব্যবসায়ীরা হতাশ, ঘাটে ঘাটে হয়রানি, দুই বিদেশী নাগরিক হত্যা, ব্লগার হত্যা, নারী-শিশু হত্যাসহ মাদকে ছেয়ে গেছে দেশ। দুর্নীতি-অনিয়মে হাবুডুবু খাচ্ছে ভোটারবিহীন সরকার। ঠিক সেই সময় আবারো শহীদ নুর হোসেনের রক্তের সাথে বেঈমানী করে স্বৈরাচার এরশাদকে সাথে নিয়ে ২৮ বছর পর নূর হোসেন দিবসে যখন কর্মসূচী দেয় তখন একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেও আমরা লজ্জা বোধ করি। শহীদ নূর হোসেন তুমি ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ এই স্লোগান ধারণ করে রাজপথে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছিলে। সেইদিন যারা তোমার রক্তের উপর ভর করে গণতন্ত্রের পথে চলতে শুরু করেছিল, তোমাকে নিজেদের কর্মী হিসেবে দাবি করেছিল, আজো সেই দাবি করে কৃতিত্বের সাথে তারাই স্বৈরাচারের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছে। অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য গণতান্ত্রিকমনা মানুষের উপর সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন, হামলা-মামলাসহ এমন কোন ন্যাক্কারজনক কাজ নেই তারা করছে না। দেশের গণতন্ত্রে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি জনগণকে দিশেহারা করে তুলেছে। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেন সেই দেশের সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে আশ্রয় প্রশ্রয় নেবে? শহীদ নুর হোসেন তোমার মত এদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মহান ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। শহীদ ডাঃ মিলনসহ যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে তারা চিৎকার করে না ফেরার দেশে বসে আর্তনাদ করছে আর হয়তো বলছে এইজন্য কি আমরা আমাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলাম। সাংবাদিক সাগর-রুনির শিশু পুত্র মেঘের কান্না কখনো শুকাবে না। ইলিয়াস কন্যা আজো জানে না তার বাবা কবে ফিরবে? শাহীনবাগের সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ যে ৮ জন গুম হয়েছিল তাদের পরিবারের কেউ ভাল নেই। অপেক্ষা আর প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে তাদের সময় শেষ হচ্ছে। ঈদ, পূজা তাদের কাউকে আনন্দ দিতে পারে না। বরং উৎসবের দিনগুলো ভেজা ভেজা চোখে প্রিয়জনদের কথা ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায়। এভাবে আর কতদিন? দেশের মানুষ কবে ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পাবে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যৌথ বাহিনীর নামে বেছে বেছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। কি অপরাধে বারবার একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে যেতে হচ্ছে? আমার দেশ পত্রিকার সাহসী সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথাতো আমরা ভুলেই গেছি। দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আর কত মূল্য দিতে হবে? শহীদ নুর হোসেন কেন আমরা তোমার মত গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নিজেদের রাজপথে নামাতে পারছি না। কেন রাজপথে গণতন্ত্রের স্লোগান দিতে পারছি না। লগি-বৈঠার তান্ডব আর কতদিন চলবে? শিক্ষাঙ্গণে ছাত্রলীগের প্রকাশ্য সন্ত্রাস কবে বন্ধ হবে? পিএসসি থেকে শুরু করে বিসিএসসহ সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস কবে বন্ধ হবে? প্রিয় নুর হোসেন তোমার প্রতি আমাদের অজস্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। তুমি আমাদের ক্ষমা করো আর গণতন্ত্র রক্ষার নতুন আলোকবর্তীকা হয়ে পথ দেখাও। লেখকঃ মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসা, প্রেসিডিয়াম সদস্য, এনডিপি
