খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৫: পৃথিবীতে পানি কীভাবে আসলো? তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। একেক বিজ্ঞানী একেক রকম তত্ত্ব দিয়েছে। এবার বিজ্ঞানীরা বলছেন ধূমকেতুর ধুলা থেকেই পানির সৃষ্টি হয়েছে। আগে বলা হয়েছিল ধূমকেতুর বরফ থেকে পানির উৎপত্তি।
আইসল্যান্ড ও কানাডার আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে যে পানির কণা পাওয়া গেছে, তা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর পানি বরং ধুলার অন্দরেই মিশে ছিল।
এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ৪.৫ বিলিয়ন থেকে ৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে কোনও বরফ সমৃদ্ধ মহাকাশের পাথর থেকেই পানি পেয়েছে পৃথিবী। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা শোনাচ্ছে অন্য কথা। এই গবেষণা মতে, পৃথিবীর পানিকণা আটকে ছিল পৃথিবীর ধুলার বুকেই।
কেন বিজ্ঞানীদের এমন ধারণা? হাইড্রোজেন রূপভেদ ডয়টেরিয়ামের মাত্রার তারতম্য থেকেই এ ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কেননা ডয়টেরিয়ামই স্থায়ী পানি তৈরি করতে পারে। সমুদ্রের পানিতে এই ডয়টেরিয়ামের যা মাত্রা (১৫৬ পিপিএম), পাথরের মধ্যে আটকে থেকে যাওয়া পানিকণায় ডয়টেরিয়ামের মাত্রা তার থেকে অনেক কম(১২২পিপিএম)। অর্থাৎ প্রায় ২২ শতাংশ কম। এর থেকে বোঝা যায় সৌরজগতের বাইরের দিকে যে পানি, সেখানে ডয়টেরিয়ামের মাত্রা বেশি। অন্যদিকে উষ্ণমণ্ডলের পানিতে ডয়টেরিয়ামের পরিমাণ কম। এখন আগ্নেয়গিরির পাথর উঠে এসেছে পৃথিবীর বহু গভীর থেকে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে পাওয়া পানিকণায় ডয়টেরিয়াম, ধূমকেতু থেকে পাওয়া পানিতে যে ডয়টেরিয়ামের মাত্রা, তার থেকে আলাদা। এর থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, সম্ভবত কোনও ধূমকেতুর বরফখণ্ড থেকে পৃথিবীতে পানি আসেনি। বরং সৌরজগতের আদিতে উত্তপ্ত অংশেই পানির উদ্ভব হয়েছিল। এবং সেই পানি শুষে নিয়েছিল ধূলিকণা। অর্থাৎ ধুলার ভিতরেই আটকে ছিল পানি। পৃথিবী যত নিজস্ব রূপ নিয়েছে, এই পানিকনা বুকে ধরে রাখা ধুলিকণাগুলোই পৃথিবীকে পানির সন্ধান দিয়েছে। পক্ষান্তরে যা প্রাণের সন্ধানই। তাহলে বাইরের পানিতে বা সমুদ্রের পানিতে ডয়টেরিয়ামের মাত্রা বাড়ল কি করে? এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ধারণা মহাকাশে হাইড্রোজেন পরমাণুর বিস্ফারণ বা এরকম কোনও ঘটনায় বা বেড়েছে ডয়টেরিয়ামের মাত্রা।
সাম্প্রতিক এই গবেষণা নিয়ে যদিও এখনই দ্বিমত পোষণ করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। তবু মনে করা হচ্ছে, পানির উৎস সন্ধানে নয়া দিগন্ত দেখাবে এই গবেষণা।