খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২০ নভেম্বর ২০১৫ : ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যমই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিলেও বিকল্প পথে (প্রক্সি সার্ভার দিয়ে) এসব মাধ্যম ব্যবহার করছেন অনেকে। কেউ বিকল্প পথে বন্ধ অ্যাপস ব্যবহার করলে জানামাত্র বিটিআরসি সেটি বন্ধ করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা প্রযুক্তি দিয়েই করতে হবে।
বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নিয়মিতভাবেই হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হচ্ছে। দলটির সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলো পরিচালনা করে দলীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
সিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেজটির অ্যাডমিন (পরিচালনাকারী) সবাই বাংলাদেশেই থাকেন। এ বিষয়ে দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অনেক শুভানুধ্যায়ী দেশের বাইরে আছেন। তাঁরা দেশের বাইরে থেকে এগুলো আপডেট করছেন।’
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফেসবুক-ভাইবার-হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যমগুলো ডাইনামিক (পরিবর্তনশীল) আইপি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় বন্ধ করা কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট প্রবহমান হওয়ার কারণে সেটাতে বাধা দিলেও কিছু লিকেজ তৈরি হয়। প্রক্সি সার্ভার, নতুন নতুন অ্যাপসের মাধ্যমে কেউ ভাইবার বা অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করতে পারেন। সেটাই ‘লিকেজ’। বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, ‘প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করেই এসব অ্যাপসে ঢুকছেন ব্যবহারকারীরা।’
মুঠোফোনে কথোপকথন, বার্তা ও ভিডিও বিনিময়ের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় অ্যাপসের মধ্যে রয়েছে ভাইবার, ট্যাংগো, হোয়াটসঅ্যাপ, মাইপিপল ও লাইন।
শ্রীলঙ্কাভিত্তিক টেলিযোগাযোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সায়ীদ খান বলেন, ‘সন্ত্রাস দমনে সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে অ্যাপস বন্ধ করে সন্ত্রাস কার্যকরভাবে বন্ধ করা গেছে-এমন নজির আমরা দেখি না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা জাতীয় টেলিকম মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) প্রযুক্তিগতভাবে অত্যনমশ শক্তিশালী করতে হবে। আর এনটিএমসিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনী ও সংস্থার সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে তৈরি করতে হবে। তাঁর পরামর্শ হলো, জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দিক থেকে এনটিএমসিকে এমনভাবে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে এর সক্ষমতা টেকসই হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটা মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো অবস্থা।’ তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। কোনো অ্যাপস বন্ধ করা নয়; বরং সক্ষমতা বৃদ্ধিই সমাধান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রকে দুর্বল দেখতে পাই।’
প্রযুক্তিগত অপরাধ প্রযুক্তি দিয়ে মোকাবিলার বিষয়ে একমত ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সরকার এসব অপরাধের মোকাবিলায় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন এবং দক্ষ জনবল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনার উদ্যোগের কথাও জানালেন তিনি।
নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধে গত বুধবার ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন, ট্যাংগো ও হ্যাংআউটসহ সামাজিক যোগাযোগের কয়েকটি মাধ্যম ও অ্যাপস বন্ধ করে দেয় সরকার। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এসব অ্যাপস বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। এ পদক্ষেপ নিতে গিয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় সারা দেশে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট সেবা।-নিউজওয়ার্ল্ডবিডি।