Tue. Sep 16th, 2025
Advertisements

19খোলা বাজার২৪॥ মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৫: উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বলা হচ্ছে, যদিও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তবু শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। সত্যিকারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চমানের শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। কমিশনের ৪১ তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
কমিশনের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দেশের কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, বিশেষ করে কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটছে, তবু শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।’
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেখানের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নেই। এর দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, শিক্ষকতা পেশায় আর মেধাবীরা আসছেন না। অন্য কারণটি হচ্ছে, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষক নিলে তাঁর খরচও বেড়ে যাবে। এভাবে মেধাবী ও অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকার কারণে সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। ইউজিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলাম (পাঠ্যসূচি) যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রতিবেদনে মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষাকার্যক্রম সবার জন্য উন্মুক্ত না করে কেবলমাত্র বাছাই করা মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্য পরিচালনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, যেহেতু চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি ‘প্রান্তিক ডিগ্রি’ হিসেবে গণ্য করা হয়, সেহেতু মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষাকার্যক্রম কেবলমাত্র বাছাই করা মেধাবী স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা কাম্য। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই এই নীতি অনুসরণ করছে না। এতে মাস্টার্স পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সত্যিকারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চমানের শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও মাস্টার্স ডিগ্রি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে।
ইউজিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে টাকার বিনিময়ে সনদপত্র বিক্রি করে। এ বিষয়ে ইউজিসি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক কলেজে প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষক পর্যন্ত নেই। এতে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে তেমন শেখার সুযোগ পান না।
ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুয়ায়ী ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ গঠনের জন্য একটি খসড়া নীতিমালা কমিশন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই নীতিমালা পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনে সংশোধন করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা প্রমাণে নিজস্ব বিষয় ছাড়াও তিনটি বিষয়ে পারদর্শিতা থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এসব বিষয় হচ্ছে—ইংরেজি ভাষার দক্ষতা, লিখিত ও মৌখিকভাবে নিজস্ব চিন্তা উপস্থাপনের ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা। শিক্ষার্থীরা যাতে এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন, এ জন্য পাঠ্যরসূচির সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান সংযোজন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।