Fri. Sep 12th, 2025
Advertisements

download

 খোলা বাজার২৪,শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫।। পৌর মেয়র পদে দলীয় বিদ্রোহ থামাতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সব পৌরসভা থেকে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দিতে কাজে নেমেছেন দুই প্রধান দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে এসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে জোর চেষ্টা চলছে। বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে প্রধান দুই দল। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। সব পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেক পৌরসভায় দুই দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ নামে এসব বিদ্রোহীকে সরাতে না পারলে খেসারত দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন দুই দলের নীতিনির্ধারকরা। এ অবস্থায় এখন দুই প্রধান দল বিদ্রোহী প্রার্থী থামাতে কাজ শুরু করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গতকাল শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই সবকিছু গুছিয়ে আনতে চাইছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপিও বিদ্রোহী প্রার্থী থামানোর কৌশল ঠিক করেছে। এর আগে বুধবার রাতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা করেছেন নেতারা।৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার কার্যক্রম শুরু হলে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এবার এমপিদের বাদ দিয়েই কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক টিমকে মাঠে নামাবে সরকারি দল। বিএনপিও অনুরূপ টিম নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামবে।

আওয়ামী লীগ :আওয়ামী লীগের প্রাথমিক হিসাবে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে কমপক্ষে ৫০টিতে ৭১ বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত হিসাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অবশ্য সব বিদ্রোহী প্রার্থীকেই ‘ধর্তব্যে’র মধ্যেও আনছে না দলটি। তবে যারা নির্বাচনী ফলাফলে ভূমিকা রাখতে পারেন তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিবেচনায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকালের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিভাগওয়ারী শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা করে তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ না মানলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারিও পুনরুচ্চারণ করা হয়। এ বৈঠকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহউদ্দিন সিরাজ, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বিভিন্ন পৌরসভায় ৭১ জন ‘বিকল্প প্রার্থী’ রয়েছে। তবে ১৩ ডিসেম্বরের পর একটি পৌরসভায়ও কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না।

বিএনপি :দলের দুঃসময়ের কথা বলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মন গলানোর চেষ্টা করবে বিএনপি। আপাতত বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে। সে জন্য মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন নেতারা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে সম্মত করানো না গেলে বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হতে পারে।
এদিকে দলের পৌর নির্বাচন সমন্বয়ক টিমের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করছেন। তবে বেশিরভাগ পৌরসভায় কৌশলগত কারণে দলের একাধিক বিকল্প প্রার্থীও রাখা হয়েছে। কোনো কারণে দলীয় প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে সমর্থন দেওয়া হবে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে সব বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে।পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত খালেদা জিয়ার একটি চিঠিও পাঠানো হচ্ছে তৃণমূলে। ওই চিঠিতে বিদ্রোহী প্রার্থীসহ সবার কাছেই দলীয় ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান থাকছে। মনোনয়ন নিয়ে যাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে তাদেরও দলের স্বার্থে সব রাগ-দুঃখ ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে চিঠিতে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীদের জেতানোর কৌশল নিয়ে কথা বলেছেন। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দল চিন্তিত নয়। কেননা যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদেরও দলের প্রতি দরদ আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিবৃত্ত করা হবে।
দলের যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ মুহূর্তে ব্যক্তিগত জয়-পরাজয় বড় নয়, দলকে জেতানোই সবার ওপরে বিবেচ্য বিষয়। তাই নানা কারণে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, শেষ পর্যন্ত দলের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।