Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

35খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : তথ্যপ্রযুক্তির জগতে এ বছরে বর্ষসেরা ব্যক্তি কে হতে পারেন? উত্তরটি একেকজনের কাছে একেকরকম হতে পারে। তবে এ বছর পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে পরিবর্তন নিয়ে আসার মতো ক্ষমতার অধিকারী দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ‘স্টিভ জবস’ ছাড়া আর কারও নেই। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সত্যিই অনন্য ছিলেন। একদিকে তাঁর ছিল দূরদৃষ্টি, অন্যদিকে স্বপ্নকে সফল করে তোলার অদ্ভুত ক্ষমতা। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করছেন—এমন ব্যক্তির সংখ্যা নেহাত কম নয়।
গত ১৮ মাসে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মাইক্রোসফটকে পুরো বদলে দিয়েছেন সত্য নাদেলা। মাইক্রোসফটের পণ্য ও নকশার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছেন তিনি। এ বছরে গুগলের পণ্য বিভাগের প্রধান থেকে পুরো গুগলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে এসেছেন সুন্দর পিচাই। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কথা না বললেই নয়, সুচতুর পরিচালনায় ফেসবুকসহ বিভিন্ন অ্যাপ নিয়ে বাজারে আরও বেশি দখল নিচ্ছেন তিনি। যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে যোগাযোগের জগতে নিজেকে তুলে ধরেছেন উবারের প্রধান নির্বাহী টার্ভিস কালানিক। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। তবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইয়াহুর দৃষ্টিতে এবারে সবাইকে ছাপিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বের সেরা হওয়ার মতো ব্যক্তি একজনই। তিনি এলন মাস্ক। আর সবার মতো তিনি বেশি গণমাধ্যমের সামনে আসেন না। তাই আর সবার মতো এলন মাস্ককে খুব বেশি মানুষ হয়তো চেনেন না।
এলন মাস্কএলন মাস্ক
দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ৪৪ বছর বয়সী এলন মাস্ক এ বছর নানা ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। এলন মাস্কের একটি পরিচয় হচ্ছে, তিনি টেসলা মটরসের প্রধান নির্বাহী ও মালিক। মার্কিন গাড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানটি মডেল এস নামের গাড়িটি ৯০ হাজার ইউনিট বিক্রি করেছে। এ বছর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির নিয়ন্ত্রণ সুবিধাসহ মডেল এস, নতুন মডেল এক্স গাড়ি এনেছে টেসলা। গাড়ি ছাড়াও রকেট নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান স্পেস এক্সের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক। এ বছর গভীর মহাকাশ থেকে পরিবেশের ওপর নজরদারি করার জন্য গুগল ও ফিডেলটি নামের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার তহবিল পেয়েছে তাঁর এই প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া মহাকাশ থেকে তারহীন উপায়ে পুরো বিশ্বে নেটওয়ার্ক সিস্টেম গড়ে তুলতে ৪০০ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে স্পেস এক্স। ২০১৩ সালে একটি বিশেষ টিউবের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতির ট্রেন সিস্টেম বা হাইপারলুপের নকশার কথা জানান মাস্ক।
এলন মাস্কের দাবি, হাইপারলুপ হবে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির যোগাযোগ প্রযুক্তি। সৌরশক্তিনির্ভর এ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় ৬০০ মাইলেরও বেশি গতিতে যোগাযোগ করা যাবে, অথচ এ যোগাযোগ প্রযুক্তি হবে প্লেন বা ট্রেনের চেয়ে সাশ্রয়ী। স্টেশন থেকে দ্রুতগতির হাইপারলুপ প্রযুক্তির যানে চেপে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। হাইপারলুপ প্রযুক্তি মার্কিন ব্যাংকগুলোর অর্থ লেনদেনের একটি পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এলন মাস্কের মতে, হাইপারলুপ হবে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতির কনকর্ড বিমান, দ্রুতগতির ট্রেন ও এয়ার হকির নকশার সমন্বিত রূপ। এটি এমন একটি যোগাযোগব্যবস্থা হবে, যার মাধ্যমে একটি টিউব কয়েকটি দেশ অথবা শহরজুড়ে থাকবে। টিউবের ভেতর থাকবে ক্যাপসুল। টিউব ব্যবস্থার মধ্যে কোনো বায়ু থাকবে না। ফলে থাকবে না কোনো প্রকার ঘর্ষণশক্তি। এই দ্রুতগতির ক্যাপসুলে চড়ে ঘণ্টায় ৬০০ মাইল বেগে ভ্রমণ করা যাবে।
হাইপারলুপ ব্যবস্থায় ঘণ্টায় দুই লাখ মানুষের ভ্রমণের সুযোগ থাকবে। আর নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট এবং নিউইয়র্ক থেকে বেইজিং যেতে লাগবে দুই ঘণ্টা। মাস্ক প্রবর্তিত এই হাইপারলুপ প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এ বছর। হাইপারলুপ ধারণার ওপর ভিত্তি করে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা নির্মাণে কাজ শুরু করেছে মার্কিন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘হাইপারলুপ ট্রান্সপোর্টেশন টেকনোলজিস (এইচটিটি)’। ওই হাইপারলুপ ট্র্যাক নির্মাণে খরচ হবে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।
ইয়াহুর প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের চোখে এলন মাস্ক হচ্ছেন কারিগরি দিক থেকে স্মার্ট, দারুণ ব্যবসায়ের সমন্বয়। কল্পনায় থাকা অনেক প্রযুক্তির বাস্তব রূপদান করা তাঁর পক্ষে সম্ভব। এ কারণেই তিনি ইয়াহুর চোখে প্রযুক্তি ক্ষেত্রের বর্ষসেরা।
মার্ক জাকারবার্গমার্ক জাকারবার্গ
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ এ বছর নানা কারণে খবরে এসেছেন। ফেসবুকের তরতর করে এগিয়ে চলা, মেসেঞ্জারের ব্যবহারকারী বৃদ্ধিসহ, ইন্টারনেট প্রসারে জাকারবার্গের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ এ বছর আলোচিত ছিল। সবচেয়ে বড় খবর—এ বছর বাবা হয়েছেন জাকারবার্গ। সে এক হইচই। এ বছরের ১ ডিসেম্বর ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান ফেসবুকে থাকা তাঁদের শেয়ারের ৯৯ শতাংশই দাতব্য কাজে দান করার ঘোষণা দেন। জাকারবার্গের দান করা অর্থের মূল্য হবে ৪৫ বিলিয়ন ডলার (সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মতো)। জাকারবার্গ তাঁর ফেসবুক পেজে কন্যা ম্যাক্সকে লেখা এক খোলা চিঠিতে এ কথা জানান। দানের ওই অর্থ ব্যবস্থাপনায় তাঁরা একটি নতুন দাতব্য সংস্থা গঠন করার ঘোষণা দেন। এর নাম হবে ‘চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ’। সংস্থাটির লক্ষ্য হবে, মানুষের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়া এবং আগামী প্রজন্মের সব শিশুর জন্য সমতা নিশ্চিত করা। জাকারবার্গ বলেন, তাঁদের কাজের প্রাথমিক ক্ষেত্রগুলো হবে—ব্যক্তিগত শিক্ষা, রোগব্যাধির চিকিৎসা, মানুষকে সংযুক্ত করা এবং শক্তিশালী কমিউনিটি গড়ে তোলা।
সত্য নাদেলাসত্য নাদেলা
২০১৪ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি ভারতীয় বংশোদ্ভূত সত্য নাদেলার মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ শুরু। বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে মাইক্রোসফটের পরিচয়। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হয়েছে বিল গেটসের হাতে। এতে প্রায় ১৪ বছর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন স্টিভ বলমার। এই করপোরেট বাণিজ্যের যুগে মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহীর পদটি নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জের। সফটওয়্যারের পাশাপাশি এখন হার্ডওয়্যার ব্যবসার দিকেও মাইক্রোসফটের লক্ষ্য। সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের মোবাইল নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান নকিয়ার মোবাইল বিভাগ কিনেছে মাইক্রোসফট। সব মিলিয়ে নতুন নির্বাহীর দিকে তাকিয়ে ছিল প্রযুক্তি-বিশ্ব। গত এক বছরে এই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। অনেক সমালোচনা থাকলেও মাইক্রোসফটের ব্যবসাকে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছেন নাদেলা। একদিকে উইন্ডোজ ১০, সারফেস ট্যাবেলেটের মতো পণ্য বাজারে ছেড়ে মাইক্রোসফটকে সামলেছেন, তেমনি অ্যান্ড্রয়েডের মতো প্ল্যাটফর্মেও মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার উন্মুক্ত করে সাহসী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সুন্দর পিচাইসুন্দর পিচাই
সুন্দর পিচাই নামটি গত এক বছরে বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। কারণ, তিনি যে এখন গুগল সামলানোর দায়িত্বে আছেন। গুগলের ক্রোম ব্রাউজার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তাঁর। এ বছরের ১০ আগস্ট সোমবার মাত্র ৪৩ বছর বয়সী সুন্দর পিচাইকে গুগলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন। গুগল সম্প্রতি অ্যালফাবেট নামের একটি মূল প্রতিষ্ঠান তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। গুগল থাকবে অ্যালফাবেটের অধীনে। সুন্দর পিচাইকে গুগলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব দিয়ে ওই পদ থেকে সরে গেছেন ল্যারি পেজ। তিনি অ্যালফাবেটের প্রধান নির্বাহীর পদে দায়িত্ব নিয়েছেন। অ্যালফাবেটের অধীনে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পিচাই। গুগলের অধীনে সার্চ ইঞ্জিন, বিজ্ঞাপন, ম্যাপ, অ্যাপ, ইউটিউব ও অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মতো সেবাগুলো পরিচালিত হচ্ছে।