খোলা বাজার২৪,বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫: বছর শেষ হতে চলেছে। এ বছর প্রযুক্তিখাতে দারুণ এগিয়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা। পরিবেশের সঙ্গে মানানসই প্রযুক্তি থেকে শুরু করে দারুণ সব পণ্য বানানো হয়েছে এ বছর। তা ছাড়া প্রযুক্তিতে আরো এগিয়ে যেতে আগ্রহী আমেরিকা, চীনের মতো দেশগুলো। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন এমন কিছু প্রযুক্তিপণ্যের কথা। এগুলো গতানুগতিক পণ্য নয়। এদের দ্বারা পৃথিবী আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।
১. চালকবিহীন গাড়ি : স্বচালিত গাড়ি বানানোর পেছনে সম্প্রতি বিনিয়োগ করছে বিশ্বের বড় বড় টেক প্রতিষ্ঠান। পুরোপুরি ইলেকট্রিক এই গাড়িগুলো একাই চলবে যাত্রী নিয়ে। বলা হচ্ছে, এই গাড়িগুলো দুর্ঘটনার হার হ্রাস করতে সক্ষম। বাঁচাবে প্রচুর জ্বালানী। এর সঙ্গে রোড-ঘাট খুঁজে বের করার সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে। গুগল এ গাড়ি নিয়ে তোলপাড় করে দেয়। এদের প্যারেন্ট কম্পানি আলফাবেট ইনকরপোরেট স্বচালিত গাড়ি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এটি রীতিমতো ডিজনির কল্পনার গাড়ি বাস্তবে এনেছে। এদিকে টেসলা বিলাসবহুল ইভি বানাচ্ছে। এটি স্বচালিত গাড়িকে আরো একধাপ এগিয়ে নেবে। সম্প্রতি অ্যালও চালকবিহীন গাড়ি নিয়ে মেতেছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে এই পরিবেশবান্ধব গাড়ি বিশেষ কিছু দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২. ফুয়েল সেল কার : টয়োটার সর্বাধিক বিক্রিকৃত হাইব্রিড গাড়িটির নাম প্রায়ুস। এতে হাইড্রোজেনকে ইলেকট্রিসিটিতে পরিণিত করে। বিনিময়ে কয়েক ফোঁটা পানি ছাড়া আর কিছুই পড়ে না। ক্যালিফোর্নিয়ার বাজারে চলে আসবে শিগগিরই। আর আগামী বছরে অল্প সময়ের মধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে চলে যাবে। এ গাড়ির প্রযুক্তির নাম ‘মিরাই’। এটি জাপানি শব্দ যার অর্থ ভবিষ্যত। এক ট্যাঙ্কের জ্বালানিতে অনায়াসে চলে যাবে ৩১০ মাইল। বাজারের যেকোনো ইলেকট্রিক গাড়ির চেয়ে এটি দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়। তবে দামটা একটু বেশি, ৫৭ হাজার ডলারের মতো পড়বে।
৩. অ্যাডভান্সড নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর : পরিবেশবাদীদের মতে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রযুক্তিবিদদের নজরে পড়েছে। বিকল্প হিসেবে অনেকে সূর্যের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর চিন্তা করছেন। এর জন্যে বিশাল আকৃতির বিশেষায়িত কোনো রিঅ্যাক্টর বানানোর কথা ভাবছেন। লকহেড মার্টিন এবং জেনারেল অটোমিকস-এর মতো দানব প্রতিষ্ঠানগুলো এটি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই রিঅ্যাক্টর বানাতে আগ্রহ প্রকাশ করছে।
৪. টাইডাল পাওয়ার : বিশ্বের প্রথম মাল্টি মেশিন বানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে এ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে কার্নেগি ওয়েভ এনার্জি। এক যুগের গবেষণার পর এটি বানানো হয়েছে। পানির নিচে একটি কাজ করে। সমুদ্রের ঢেউ, ঝড় এবং জোয়ারের শক্তি কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপন্ন করবে। এর মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার বাড়িতে যাবতীয় শক্তি সরবরাহ করা যাবে।
৫. সোলার : এটি নতুন কিছু নয়। তবে এর সুবিধা বড় আকারে প্যানেলে মেলে। আধুনিক বিজ্ঞান এমন উপায় বের করেছে যার মাধ্যমে আরো ছোট আকারের সোলার প্যানেলের মাধ্যমে শক্তি জমানো যাবে। তা ছাড়া একে যেকোনো স্থানে যেকোনো কাজে লাগানো যাবে।
৬. বাতাস : সমুদ্র উপকূলে শুধু পানি নয়, বাতাসও দারুণ শক্তির উৎস হতে পারে। এ কাজে উইন্ড টাওয়ার সিস্টেম গড়ে তোলা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। উচুঁ স্তরের বাতাসকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদনের এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতকে অনেক কিছু দেবে।
৭. ব্যাটারি : সূর্য এবং বাতাস সীমাহীন শক্তি উৎস। কিন্তু শক্তিকে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা অতি জরুরি। এর জন্যে উন্নতমানের ব্যাটারি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরই এক উদাহরণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি। তাই দুই যুগ আগে তৈরি করেছে সনি। হার্ভার্ডের গবেষকরা এমন ব্যাটারি নিয়ে কাজ করছেন যা উন্নতমানের, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এবং বিষবিহীন হয়ে থাকবে। প্রচুর পরিমাণ শক্তি ধারণে সক্ষম হবে এসব ব্যাটারি।
৮. অটোমেটিক বাড়ি : এমন বাড়ির জন্যে দারুণ শক্তিশালী ব্যাটারি জরুরি বিষয়। গোটা বাড়িতে নানা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকবে। এগুলোতে শক্তি জোগাবে ব্যাটারি। বাড়িকে অটোমেটিক করতে স্মার্টফোনেও আসছে অ্যাপ। যেমন, অ্যাপলের ডিজিটাল অ্যাসিস্টেন্ট সিরিকে গোটা বাড়ির আলো নিভিয়ে দেওয়াল নির্দেশ প্রদান করা যায়। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি বাঁচানো যাবে। তা ছাড়া জীবনও অনেক সহজ হবে বলে বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের।