খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ২০১৬: ৫ বছর আগে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরী থানার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ কিশোরী ফেলানীকে তার অসহায় বাবা নুরুল ইসলামের সামনে নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকারী সদস্য অমিয় ঘোষের বিচার আজো হয়নি- বিচার পায়নি বাংলাদেশ। বিচার আর ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছে ফেলানীর পরিবার। বারবার বাংলাদেশ সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে বিএসএফ। সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে গুলি করে নির্যাতন করে মানুষ মারছে। প্রতিবছর শত মানুষের লাশের তালিকা বাংলাদেশ উপহার পায়। কিন্তু হতভাগা বাংলার নাগরিকেরা দেখে বাংলা থেকে সেই ভারতে করিডরসহ নানা উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হচ্ছে। ফেলানীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বাবা আজো অঝোরে কেঁদেছে। কেঁদে কেঁদে বিচার দাবি করেছেন। কিন্তু সে কি পাবে তার বিচার? বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন বীরবিক্রম আজো এক আলোচনা সভায় ঢাকায় ভারতীয় দুতাবাসের সামনের রাস্তার নামকরণ ফেলানী সড়ক করার দাবি করেছেন। অন্যদিকে ৭ জানুয়ারি ফেলানী দিবস পালন করার জন্য জাতিসংঘের কাছে বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি প্রদান করেছে। ফেলানীর বাবা-মা বিচারের নামে ভারতের নাটক মঞ্চে বেশ কয়েকবার গিয়ে সাক্ষী প্রমাণসহ কথা বললেও আসামী অমিয় ঘোষ বেকসুর খালাস পেয়েছে। বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের ফেলানীরা প্রকাশ্যে নির্মম হত্যার শিকার হয়। আমরা দেখেও প্রতিবাদটিও করতে পারি না। আর কতদিন এভাবে ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলবে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে লাল-সবুজের পতাকা এই জন্য কি অর্জিত হয়েছিল? সেদিন পাকিস্তানের গোলামী ছিন্ন করে যে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ পেয়েছিলাম আজ কি ভারত সেই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা রক্ষা করতে পেরেছে? তারা মুখে আমাদের বন্ধুত্বের কথা বললেও অন্তরে আমাদেরকে গোলাম হিসেবেই অলিখিত জিঞ্জির পরিয়ে দিয়েছে। এই তো বছর খানেক আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বাবু যখন বাংলাদেশে আসলেন তখন বাংলাদেশে সবদলের নেতাকর্মীরা ও শীর্ষ কর্তারা মোদি বন্দনায় এমনভাবে নিজেদেরকে ডুবিয়ে রেখেছিল তখন মনেই হয়নি অন্য রাষ্ট্রের কোন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন। তিনি এক এক করে সব চুক্তি করে নিয়ে গেলেন। আজো দেশবাসী জানতে পারেনি কি কি চুক্তি হয়েছে? কিন্তু আমরা যে নতুন করে গোলামি চুক্তিতে বন্দী হয়েছি একথা নতুন করে বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ফারাক্কার পানি শুকিয়ে গেলেও, তিস্তার বাধ দিয়ে আমাদেরকে মৃত্যুর ফাঁদে আটকে দিলেও আমাদের দেশপ্রেমিকদের মুখে কুলুপ এঁটেছে। কোন কথা বের হয় না। যখন ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের আকাশ সংস্কৃতির ভিতরে প্রবেশ করেছে আমরা দিনরাত ষ্টার জলসা, জিটিভি, জি সিনেমা, জি বাংলা নিয়ে ব্যস্ত থাকি তখন সীমান্ত থেকে আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেনসিডিলের কারখানা খুলে বসে একচেটিয়া বাণিজ্য করে নিচ্ছে। আর আমার দেশের ইলিশ থেকে শুরু করে ভাল ভাল মূল্যবান জিনিসগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। এভাবে আর কতদিন নিরবতা পালন করবেন। আর কতো ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে বেড়ায় ঝুললে আমাদের চৈতন্যে বিবেক নাম বস্তুটি ফিরে আসবে। আজো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে প্রতিবাদ করতে চাই। চাই মুক্তভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে। যুব সমাজ মাদকমুক্ত হবে তাদের দুই হাত দেশকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে সেই স্বপ্নে দু চোখ থাকে বিভোর। যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছেন তারা তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য নানামুখী নতজানু পররাষ্ট্রনীতি করতে পারে। তারা প্রকাশ্যে -অপ্রকাশ্যে দাদা-বৌদিদের দালালি করতে পারে। কিন্তু যারা সবসময় আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে জনগণের ভোটের বারবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন আজ তাদের কথা বলার সময় এসেছে। তারা যদি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসে তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কি অবস্থান থাকবে জাতিকে স্পষ্ট করে বলার সময় এসেছে। ‘মুখে শেখ ফরিদ আর বগলে ইট নিয়ে’ কথা বললে আর যাই হোক অজস্র লক্ষ জনতার স্রোত থাকলেও ভোটের বাক্সে শূন্য ছাড়া পূর্ণ হবে না। আসুন ফেলানীর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধু তাকে স্মরণের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ না রেখে একজন সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে পরিস্কার করে তুলে ধরি এবং যারা ভবিষ্যতে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধের শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান ভারতনীতি সম্পর্কে জাতির সামনে আপনাদের স্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরুন। এতেই হয়তো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নতুন মাইলফলক হতে পারে।