খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারি ২০১৬: মোবাইল ফোনের প্রি-পেইড গ্রাহকরা নিজেদের ইচ্ছে মত আর ইন্টারনেট কিনতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির নতুন নিয়মে সাধারণ গ্রাহকরা দিনে ৫০০ টাকা সর্বোচ্চ রিচার্জ করতে পারবেন। তাই ইচ্ছে করলেই আর গ্রাহকরা ইচ্ছে মত ইন্টারনেট কিনতে পারবেন না। এর ফলে যেমন অপারেটর কোম্পানিগুলো লসের মুখে পড়বে, তেমনি দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকও কমে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন প্রি-পেইড গ্রাহক এখন চাহিদা অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ ৮জিবি ডাটার মূল্য ৯০০ টাকা, ৫ জিপি প্যাক ৬৫০ টাকা, ১২ জিবি প্যাক ১৩০০ টাকা। খোদ টেলিটকে ১০ জিপি প্যাক ৮২৫ টাকা। ৩০ জিবি প্যাক ১৫০০ টাকা। এমতাবস্থায় দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সেই সঙ্গে আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে মোবাইল গ্রাহকরা।
এ বিষয়ে বাংলালিংকের চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার আহমদ ওয়াই হালিম বলেন, আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পাঠিয়েছে বিটিআরসি। আমরা আশাকরি এ বিষয়টি আবারও বিবেচনা করবে সরকার। কারণ এ নতুন নিয়মের ফলে দেশের ইন্টারনেট গ্রাহক যেমন কমবে তেমনি সাধারণ মোবাইল গ্রাহকরা সমস্যায় পড়বে।
তিনি বলেন, ৫০০ টাকার উপরে অনেক ইন্টারনেট প্যাকেজ রয়েছে সেসব প্যাকেজ চাইলে প্রি-পেইড গ্রাহকরা কিনতে পারবেন না। আর এ নতুন নিয়মের ফলে সারা দেশে প্রায় ২০ ভাগ ইন্টারনেট গ্রাহক কমে যাবে বলে মত দেন তিনি।
গ্রামীফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল জানান, নতুন এ নিয়ম কার্যকর হলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে যাবে, গ্রহকরা চাহিদা মত ইন্টারনেট ব্যবহার না করতে পারলে মোবাইল ইন্টারনেটের বিকল্প খুঁজবে গ্রাহকরা। আমরা এ বিষয়ে বিটিআরসির সাথে আলোচনা করব যাতে সাধারণ গ্রাহকরা বঞ্চিত না হয়।
এ বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা রিচার্জের বিষয়টি আমরা অপারেটরদেরকে জানিয়েছি, কিছু দিনের মধ্য এটি কার্যকর হবে। জনগণের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন এ নিয়ম কার্যকর হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সমস্যা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রি-পেইড গ্রাহকদের দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার রিচার্জ সীমা বেঁধে দিলে ইন্টারনেট গ্রাহকদের তেমন ক্ষতি হবেনা। কারণ পোস্ট পেইড গ্রাহকদের ক্ষেত্রে আমরা রিচার্জের সীমা বেঁধে দিচ্ছি না। আর এ নতুন নিয়মের ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য রয়েছে তা বাঁধাগ্রস্ত হবে না।
মোবাইল ফোনে প্রি-পেইড গ্রাহকদের দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকার রিচার্জ সীমা বেঁধে দিয়ে গত মঙ্গলবার বিটিআরসি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি মোবাইল অপারেটরদের কাছে পাঠিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, একজন প্রি-পেইড গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার ব্যালেন্স রাখতে পারবেন। প্রি-পেইড গ্রাহকরা দিনে ৫০০ টাকা সর্বোচ্চ রিচার্জ করতে পারবেন। তবে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের বিষয়ে কোনো সীমা বেঁধে দেয়নি সংস্থাটি। এছাড়া প্রি-পেইড গ্রাহকরা মাসে এক হাজার টাকা ব্যালেন্স ট্রান্সফার করতে পারবেন এবং দিনে ৩০০ টাকার বেশি ব্যালেন্স ট্রান্সফার করতে পারবেন না।
বিটিআরসি পরিচালক (সেস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে ২০০৮ সালের নির্দেশনা সংশোধন করে রিচার্জের সীমা বেঁধে দেয়ার কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি চিঠিতে। ইন্টারেনেট ডেটা রিচার্জের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে কিনা তাও উল্লেখ নেই চিঠিতে। বর্তমানে বেশিরভাগ গ্রাহকরাই (প্রি-পেইড) একসঙ্গে অনেক টাকার ডাটা (ইন্টারনেট) প্যাকেজ কিনে থাকেন বলে জানিয়েছে অপারেটরা।
সর্বশেষ ২০০৮ এর এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় একবারে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা রিচার্জ করার নিয়ম ছিল, তবে তা প্রতিদিন নির্ধারিত ছিল না। প্রতি মাসে ব্যালেন্স ট্রান্সফারের এক হাজার টাকা আগেও ছিল, তবে প্রতিদিন ব্যালেন্স ট্রান্সফার ১০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। প্রি-পেইড গ্রাহক সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকার ব্যালেন্স রাখার বিষয়টিও অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে গ্রাহকরা সমস্যায় পড়বে। মোবাইল গ্রাহকদের দিনে ৫০০ টাকা রিচার্জ খুবই কম পরিমাণ ধরতে হবে। এখানে অনেক ডেটা প্যাকেজ রয়েছে এর চেয়ে বেশি মূল্যের।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বাংলাদেশের ইন্টারনেট গ্রাহদের মধ্যে ৯৭% মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে এ নতুন নিয়মের ফলে তৃনমূল পর্যায়ের গ্রাহকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা অনেকাংশেই ডিজিটাল সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
এদিকে গ্রাহকরা বলছেন, সরকারের হঠাৎ এ ধরণের সিদ্ধান্তের ফলে অনেকে ভোগান্তির মুখে পড়ছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ঘরে বা অফিসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করছে। কিন্তু হঠাৎ এসব সেবা বন্ধ করে দেয়া হলে তারা চরম ভাগান্তির মধ্যে পড়বে।