খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জানুয়ারি ২০১৬: ভারতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ফেইসবুকের বিনামূল্যের ইন্টারনেট সেবা ‘ফ্রি বেসিকস’।
টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (টিআরএআই) ফেইসবুকের এই সেবা স্থগিত করার পর তা যেন আবার চালু করা হয় সেজন্য ব্যবহারকারীদের সমর্থন জানাতে অনুরোধ করে এই সোশাল জায়ান্ট। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই বিষয়ে ফেইসবুককে সমর্থন জানিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তবে, নীতিনির্ধারকরা এই সমর্থন খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না। ব্যবহারকারীদের সমর্থন জানানো এইসব মেসেজ খুব একটা কাজে আসবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
নীতিনির্ধারকরা জানান, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একই রকম মেসেজ পাঠানো হয়েছে, যেখানে নেট নিরপেক্ষতার বিষয়ে ‘প্রশ্ন না তোলার’ আহ্বান জানানো হয়েছে। ফেইসবুক আর এর ব্যবহারকারীদের আরও বাস্তবধর্মী মেসেজ পাঠাতে বলেছেন নীতিনির্ধারকরা।
ফেইসবুকের একজন মুখপাত্র বলেন, “এই তর্কে আমরা ভারতের জনগণের স্বর উঠাতে আর ফ্রি বেসিকস সমর্থনে একটি সুযোগ করে দিতে চাচ্ছি।”
‘ফ্রি বেসিকস’ প্রকল্প আগে ইন্টারনেট ডটঅর্গ নামে পরিচিত ছিল। এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে পারছেন না বা স্মার্টফোনের জন্য ডেটা প্ল্যান কিনতে পারেন না এমন গ্রাহকদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেটের কিছু নির্দিষ্ট সেবা প্রদান করা শুরু হয়। ফেইসবুক ছাড়াও অ্যাকুওয়েদার, আস্ক ডটকম, বেবি সেন্টার, বিং, ডিকশনারি ডটকমসহ আরও কিছু অ্যাপ রাখা হয় এই সেবায়।
সব ইন্টারনেট কনটেন্ট ও গ্রাহকদের সমান সুযোগ দিতে হবে, নেট নিরপেক্ষতার এই কেন্দ্রীয় মতবাদ এই প্রকল্পের মাধ্যমে লঙ্ঘন হয় বলে মত দিয়েছেন সমালোচকরা। নির্বাচিত কিছু সাইটের জায়গায় ফেইসবুক কেন পুরো ইন্টারনেট সেবা বিনামূল্যে অ্যাকসেসের সুবিধা দিচ্ছে না?- এমন প্রশ্নও রেখছেন সমালোচকরা।
সমালোচকদের এমন সমালোচনার জবাব দেন স্বয়ং জাকারবার্গও। তিনি জানান, ফ্রি বেসিকস প্ল্যাটফর্ম সব সফটওয়্যার ডেভেলপারের জন্য উন্মুক্ত, এতে কোনো বিজ্ঞাপন নেই আর কম ভাগ্যবান ব্যবহারকারীদের এটি দারিদ্র্য দূর করতে সহায়তা করবে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের কিছু মৌলিক সেবায় মানুষকে বিনামূল্যে অ্যাকসেস করার সেবা দিতে না চেয়ে, সমালোচকরা এ নিয়ে মিথ্যা দাবি ছড়াচ্ছে– এমনকি এটি শত কোটি মানুষকে পেছনে ফেলাকে নির্দেশ করে।”
“কে এটার বিরোধিতা করতে পারে?”- সমালোচকদের দিকে প্রশ্ন রেখেছেন জাকারবার্গ।
ভারতের টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি দেশটির ‘সবচেয়ে বড়’ টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস-কে ফ্রি বেসিকস সেবা বন্ধ করতে বলার পর এই প্রচারণা চালানো শুরু হয়। নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের সমর্থন নিয়ে তাদের জোর বক্তব্য তুলে ধরতে ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করেছে এই সোশাল নেটওয়ার্কিং জায়ান্ট।
ভারতীয় ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট মাহেশ মার্ঠি এই প্রকল্পকে “সাম্রাজ্যবাদ ও নতুন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি” হিসেবে আখ্যা দিয়ে এটি ‘ডিজিটাল সমতা’ নামের মিথ্যায় ঢেকে চালানো হচ্ছে বলে মত দেন।
তিনি বলেন, “ফেইসবুক যা চায় তা হলো, আমাদের কম ভাগ্যবান ভাইবোনরা যাতে একে অপরকে ‘পোক’ করতে পারে আর ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতে পারে, কিন্তু তারা গুগলে কিছু খুঁজতে বা খান একাডেমি থেকে কিছু শিখতে বা কোনো পণ্য বিক্রি করতে এমনকি কোনো চাকরি খুঁজতে পারবে না।”
গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি ভারতীয়কে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েছেন, কিন্তু একটি সীমিত বাস্তুতন্ত্র না বানিয়ে সেবা সরবরাহে জোর দিয়েছে তারা।