Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

50খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬: আমি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করছি। আমার বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা একজন টিচার। আমরা তিন বোনের মধ্যে আমি মেঝ। ছোটবেলা থেকে আমার আব্বুর কাছে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এবং চাকরি জীবনের সাফল্যের গল্প শুনে আমি খুব অনুপ্রানিত হতাম।
১টি কথা বলে রাখি, আমি ছোটবেলা থেকে একটু শারিরীক ভাবে অসুস্থ থাকায় আমাকে আমার বাবা-মা কখনও পড়াশুনার জন্য চাপ দেয়নি, এমনকি আমার কোন ব্যাপারেই তারা জোর করেনি। ভুলটাকে হাতে ধরে শুধরে দিয়েছেন। আমার অন্য ২ বোনের তুলনায় আমার উপর প্রত্যাশার চাপটা কম থাকায় আমি মাঝে মাঝে মানসিকভাবে খারাপ বোধ করতাম। অনেকটা বলা যায় যে নিজেকে আমার লাস্ট বেঞ্চের স্টুডেন্ট মনে হত আর সেখান থেকেই পড়াশুনাতে অনেকটা জেদের বশত আমার আগ্রহটা বেড়ে যায় এবং ঝঝঈ, ঐঝঈ তে আমি ডাবল গোল্ডেনসহ উত্তীর্ণ হই। এখানে আম্মুর অবদান সবচেয়ে বেশি যিনি তার জব,সংসার সবকিছুর পরেও আমাকে প্রতিদিন আপডেটেড সুবিধার ব্যবস্থাটা করে দিয়েছেন। আমি মফস্বল শহরে বড় হয়েছি এবং বলে রাখি আমি গার্লস স্কুল গার্লস কলেজে পড়েছি।
আমার ঐঝঈ, এমনকি ভর্তি কোচিং এ কোন ছেলে বন্ধু ছিলনা, এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম এক বছরেও আমার কোন বয় ফ্রেন্ড (প্রেমিক) ছিলনা। এটা হয়নি আমার আম্মুর ভয়ে না, তার আদর্শে। কিন্তু, অনার্স ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে হঠাৎ করে আমার ফোনে ১টা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। প্রথমে আমি ছেলেটির সাথে ভদ্রভাবে কথা শেষ করে তাকে আর ফোন করতে নিষেধ করি। কিন্তু সে আমাকে ফোন করেই যায় এবং যেহেতু সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল না, তাই আমি রাফলি তাকে কিছু বলতেও পারিনি। আর তখন এ সময়ের মত স্মার্টফোন না থাকায় আমি আমার সাধারণ ফোনে তাকে ব্লকও করতে পারিনি। এরকম কয়েকদিন যেতে যেতে আমি তাকে বললাম যে আপনার পরিচয় এবং আমার ফোন নং কে দিয়েছে সেটা না বললে আমি ফোন নং চেঞ্জ করব (যদিও এটা সম্ভব ছিলনা কারণ আমার পরিবারকে এটা শেয়ার করা সহজ ছিলনা)। তখন সে বলল যে আমার প্রমিস করতে হবে যে আমি যেন সব জেনে তার দোষ না হলে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ না করি। এবং আমি রাজি হয়ে জানতে চাইলে সে বলল যে আমার ক্লাসমেট (বন্ধু) এর কাছে সে ভদ্র এবং ভাল ফ্যামিলির ১টা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করিয়ে দিতে বলে এবং তার ফোনে আমার ছবি দেখে সে পরবর্তীতে আমার নম্বরটা চুরি করে নিয়ে আমাকে ফোন করে।
বলে রাখি এই ছেলেটিও আমার ব্যাচমেট তবে অন্য ১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করছে। এরপর তারসাথে আমার ১জন বন্ধুর মত যোগাযোগ ছিল এবং আমার ক্লাসমেট বন্ধুটির সাথে সব জানাজানি হলে সে ১দিন আমার ক্যাম্পাসে আসে এবং এর কিছুদিনের মাথায় আমাকে প্রোপোজ করলে আমি না করি এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। হঠাৎ ২/৩ দিন পর সে বসুন্ধরা সিটিতে যায় এবং বলে যে সে উপর থেকে ঝাঁপ দিবে এবং আমাকে ওখানে তার ছবি তুলে পাঠায় এবং আবারো প্রোপোজ করে এবং বলে সে ওর বাবার ছোট ছেলে এবং ওর বাবা আমাকে ছাড়বেনা ওর কিছু হলে। বলে রাখি ওর বাবা সুপ্রিম কোর্টের একজন ব্যারিস্টার। আমি তখন অনেকটা ভয় এবং সহানুভূতি দিয়েই বোকার মত ওর প্রোপোজালে হ্যাঁ বলি। এরপর আমাদের সম্পর্কটা খুব ভাল যাচ্ছিল ৪/৫মাস এবং কিছুদিন পর বার্থডে। ওর বার্থডের দিন ও আমাকে নিয়ে অনেক ঘোরাঘুরি শেষে বলে যে ওর টাকা শেষ, বাসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসবে। আমাকে বলে যে তুমি রিক্সায় বাসার সামনে দাড়াবে। আমরা ওর বাসার সামনে যাই এবং ও আমাকে বলে যে এভাবে বাসার সামনে দাঁড়ানোটা ভাল দেখায়না। তুমি উপরেই আস, কোন সমস্যা নাই।
আমি ওকে খুব অন্ধবিশ্বাসে ওর সাথে উঠে যাই কিন্তু আমি একবারের জন্যও জানতাম না ওর বাসায় সেদিন কেউ ছিলনা আর ও আমাকে সেটা বলেনি এবং জানতে চাইলে কথাটা এড়িয়ে গেছে যেটা আমি ঐ মুহূর্তে ধরতে পারিনি। এবং এরপর ও আমার সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করতে চায় এবং আমি বাধা দাওয়ার এক পর্যায়ে ওকে আঘাত করি কিন্তু আমি শেষ রক্ষা করতে পারিনি। এরপর আমি সম্পর্ক ভেঙে দেই এবং গত ৩ টি বছর আমি শুধু একটা ভয় বয়ে বেড়াচ্ছি যে আমি লাইফে অন্য কাউকে নিয়ে সুখী হতে পারব না কারণ আমি ভার্জিন নই। ওর সাথে আমার সম্পর্ক নেই কিন্তু তারপরও আমি এখনও কিছুদিন পরপর যোগাযোগ করি। ও এখনও আমাকে ওর লাইফে ব্যাক করতে রিকোয়েস্ট করে এবং গত ৩ বছর ধরে করছে। কিন্তু ও আমার ব্যাচমেট। ওর হায়ার এডুকেশন নিয়ে অনেক দীর্ঘ পথ আর আমার পড়াশুনা শেষের পথে + জবেরও সুযোগ আসছে। ফ্যামিলি থেকে বিয়ের জন্য বেশ কয়েকবার আমাকে বিয়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। অনেক যোগ্য এবং ভাল পাত্র হওয়ার পরও আমি পড়াশুনা শেষ করা, জব করা এসব অজুহাতে আব্বুর কাছে সময় চেয়ে নিয়েছি এবং নিচ্ছি। সর্বশেষ আমি একবছর সময় চেয়ে নিলাম জব প্রিপারেশনের জন্য কিন্তু আমি জানিনা কেন এবং কী এর উদ্দেশ্য।
মাঝে মাঝে ভাবি আমি অনেক ভাল কিছু করলে আমার এই খুঁতটা হয়ত ছাড় পাব কিন্তু সাথে সাথে এক ভয়ংকর অজানা আশংকায় আর কিছু ভাবতে পারিনা। আবার আমি শত চাইলেও এই ছেলেটির জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করে থাকতে পারবনা। যে সুখের জন্য আমার পরিবার পায়তারা করছে সেটা তো নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে এই ভয়ে আমি আর স্বাভাবিক থাকতে পারছি না। পরিবার স্বপ্ন বুনতে গিয়েই স্বপ্নভাঙন দেখবে সেই মুহূর্তগুলো ভাবতেই পারছিনা। আমি একা হলে কোন ভয়ই ছিলনা, কিন্তু আমার আব্বু-আম্মুকে এটার মুখোমুখি করার কথা ভাবা যায়না। আমি প্রতিনিয়ত নামাজ পড়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাই, একটু সাহায্য চাই। কিন্তু বাস্তবে আমার জীবনে কী হবে তা ভেবে আমি দিশেহারা হয়ে যাচ্ছি দিনদিন। কারো সাথে আজো শেয়ার করতে পারিনি।”
পরামর্শ:
আপু, আপনার হয়তো মনে হয় যে আপনার কোন দোষ বা ভুল ছিল না, সবই ছেলেটির দোষ বা ভুল। কিন্তু প্রথমেই আমি আপনাকে আপনার ভুলগুলো বলবো। বলবো এই কারণে যে এটা না বললে আপনার বাকি জীবনেও এমন ভুলের আশংকা রয়েই যাবে।
প্রথমত, কল বা কলারকে ব্লক করা কেবল স্মার্ট ফোনেই হয়। আমার স্পষ্ট মনে আছে যে প্রায় সব মোবাইল অপারেটরেই কল ব্লক সার্ভিস ছিল। মাসিক ৩০ টাকা বা এমন একটা চার্জ নিত। সেটা ইউজ করলে যে কোন ফোনেই যে কাকে ব্লক করে দেয়া যেত। মানলাম যে আপনি কল ব্লক করতে পারেন নি, তাহলে ছেলেটির ফোন রিসিভ করতেন কেন? আপনি রিসিভ না করলে সে ১০০ বার কল দেবে? দিক! দৈনিক ১০০ বার কল দিতে দিতে নিজেই হাল ছেড়ে দিত। আর যেখানে বলছেন আপনার ফ্যামিলি এত ভালো, হাতে ধরে ভুল শুধরে দিয়েছে, সেখানে এত সামান্য ব্যাপার পরিবারকে তখন বলে ফেললেই ভালো হতো।
দ্বিতীয়ত, ছেলেটি সুইসাইড করার হুমকি দিয়েছে বলে আপনি প্রেমে হ্যাঁ বলেছেন, শুনতে নাটকীয় মনে হলেও আমি মেনে নিলাম। কিন্তু যে ছেলেকে আপনি ভালোবাসেন না, সেই ছেলের সাথে এত ঘোরাঘুরির কি কোন দরকার ছিল? ঘুরেছেন তো ঘুরেছেন, ছেলেটির বাসার সামনে চলে গিয়েছেন। আপনার কি একবারও মনে হয়নি যে একটি ছেলের বাসার সামনে যাওয়া যায় না? বা আপনার কি একবারও মনে হয়নি যে টাকাটা আপনি খরচ করলেই তো ঝামেলা শেষ হয়ে যায়। ঠিক আছে, মেনে নিলাম যে আপনি এতকিছু ভাবেন নি। কিন্তু ওপরে যাওয়ার সময় কি মনে হয়নি যে ছেলেটির মা বাবার সামনে আপনার পরিচয়টা কী হবে?
তৃতীয়ত, নিজেই বলছেন যে সম্পর্ক ভেঙে ফেলেছেন, আবার নিজেই ছেলেটির সাথে যোগাযোগ রাখছেন, এটা কেন আপু? এটা কি একেবারেই হিপোক্রেসি হয়ে গেলো না? খুবই দুঃখের সাথে বলছি আপু, আপনার এই কাহিনীতে এক তরফা ছেলেটিকে দোষ দেয়া যায় না। ছেলেটি খারাপ, নিঃসন্দেহে খারাপ। কিন্তু তাকে সেই খারাপ করার সুযোগটি দিয়েছেন আপনি নিজেই। মাঝে মাঝে নিজের দোষ টুকু স্বীকার করে নিলেও জীবনের পথে সামনে এগোনো সহজ হয়।
যাই হোক, আমি মনে করি না যে একজন নারীর সম্মান তাঁর সতীত্বে। যে কোন মানুষেরই সম্মান নিহিত তাঁর চরিত্রে। আপনি নিজেই যদি নিজেকে ভার্জিনিটি দিয়ে বিচার করতে শুরু করেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আপনার যোগ্যতা আপনার শিক্ষা, রুচি, গুণাবলী। একটি ছেলে জোর করে আপনার সাথে সম্পর্ক করেছে বলে আপনি খারাপ হয়ে যান না। চিঠি পড়েই বুঝতে পারছি যে ছেলেটিকে আপনি বিয়ে করতে চান না, আর সেটা করা উচিতও হবে না। কারণ ছেলেটিকে আমার খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না। আপনি পুরো ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে জীবনটা নতুন করে শুরু করতে চেষ্টা করুন। আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের সুখে এটা কোন সমস্যাই না, যদি আপনি সততার সাথে বিষয়টি সামাল দেন। বিয়ের আগে নিজের সম্পর্কে এই ব্যাপারটি চাইলে হবু বরকে জানিয়ে নিতে পারেন। তাহলে আপনি শতভাগ শান্তি নিয়ে সংসার শুরু করতে পারবেন। বাংলাদেশে এমন বড় মনের পুরুষের কোন অভাব নেই, যিনি কিনা ব্যাপারটি জেনে বুঝে আপনার দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন। আমার মনে হয় একটু অপেক্ষা করে এমন একজন মানুষকেই বিয়ে করা উচিত আপনার।